রতন— এই নামের চরিত্রটা অনেকেই জানে, আবার কেউ-কেউ হয়তো জানে না। রতনের বুকে একটি অন্তর্বাহিনী নদী ছিল। সেটা শুধু তার মনেই প্রবাহিত হতো, সবার চোখের আড়ালে। আমাদের জীবনে সচরাচর এমন অনেক নদী প্রবাহিত হয়, যা আমরা দেখতে পাই না।
ঘড়ির কাঁটায় এখন প্রায় রাত বারোটা। জমাট অন্ধকার। সন্ধ্যার দিকে বেরিয়েছিলাম হাঁটার জন্য। হালকা মৃদু বাতাস বইছিল। হাঁটতে-হাঁটতে কী যেন ভাবছিলাম, ঠিক মনে নেই। হয়তো একটা গন্তব্যের কথা। উফ, কী গরম! রাস্তার দু'পাশে নানারকম তেলেভাজার গন্ধ। খুব লোভ হয়। কিন্তু আবহাওয়ার জন্য একটু নিয়ম করতে হয়। এইভাবে যতদিন টিকে থাকা যায়। হঠাৎ একদিন সাইকেল নিয়ে আত্রেয়ী দেখতে বের হলাম। চলতে-চলতে নদীপাড়ের জনজীবনের নানাধরনের ছবি দেখতে পেলাম। উপলব্ধি করলাম ভিন্ন-ভিন্ন স্বাদের জীবনকথা। কোথাও সবুজের হাতছানি, কোথাও মাঝিদের জলসংকট, আবার কোথাও উদ্বাস্তু রাজবংশী পরিবার। বিপন্ন জনজীবন। এরা নদীর কাছে থাকলেও মনে হয়, জলের অভাব ওদের জীবনে তীব্রতর। তাই তো ওরা চৈত্রের খরার মতো অনুর্বর। কিন্তু মনের দিক থেকে ভীষণ নরম ও সরল অত্যন্ত যাপন।
দেখেছি ছোটো-ছোটো ডিঙিতে ভেজাগায়ে জেলেদের ভাত খাওয়ার দৃশ্য। একে অপরের সাথে হাসি-মজা করছে। আসলে একটু শান্তির পর আবার জলে নামবে; ঠান্ডা হোক বা গরম। কিছু খোলা বাড়িতে উঠোনের উনানটা দপ করে জ্বলে ওঠার অপেক্ষায়। পাশের গ্রাম থেকে শোনা যায় বাসন্তী পূজার ঢাকের শব্দ। অনেক রাত হলো। নিজের মধ্যে যে-অন্তর্বাহিনী নদী আছে, এবার সেটাকে খুঁজতে-খুঁজতে ঘুমদেশে যাই। নিজের অস্থায়ী ঠিকানায়।
রতন এখনও অপেক্ষায়, সে ফিরবে...উজান স্রোতে কোনো একদিন...
Comments
Post a Comment