ছন্দা দাম

কালবৈশাখীর ধ্রুপদী সুরে যখন পাতাঝরার কান্না,
ঠিক তখনই সূর্যটা যেন তার গায়ে আঁধারের চাদর জড়িয়ে নিয়ে নিঃসীম প্রহর গুনছিল; হাওয়ার বাঁশি
যেন বাঁশঝাড়ের পাতাদের ঠোঁট ছুঁয়ে চারদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছিল অপূর্ব শিহরণ। পুকুরের নিস্তরঙ্গ ঢেউও যেন প্রগলভ হতে চাইছিল এর স্পর্শে।

দিগন্তের মাঠের ওইপারে সবুজ বনজঙ্গল প্রকৃতির দামাল আবেগ গায়ে মেখে নিয়ে গোধুলির ঘন আধাঁরকে আহ্বান করছিল যেন! শেষবিকেলের স্নেহমেদুর ছোঁয়া বাঁচিয়ে দামাল বৈশাখী ঝড় যেন গুমরে-গুমরে উঠছিল...বুকের কিছু কথা, কিছু ব্যথা উগড়ে দেবে বলে। উঠোনের কোণের মঞ্জরী-সুগন্ধিত আমগাছের পায়ের কাছের ঝরাপাতারা ঈশান কোণ থেকে আসা বাতাসের স্পর্শে প্রাণ পাচ্ছিল। উড়ে-উড়ে আবার মাটিতে আছড়ে পড়তে-পড়তে শ্-শ্ করে বাচ্চা ছেলেটার ঠোঁটের কাঁঠালপাতার বাঁশির মতো আওয়াজ করছিল।

চেয়ে থেকে-থেকে কখন আমি হারিয়ে গেছিলাম
বৈশাখের এক অনাবিল অনাদৃত বিকেলের মাঝে। ঢেউতোলা টিনের চালে চঞ্চল হরিণীর মতো বাতাস লাফিয়ে-লাফিয়ে উঠছিল। বারান্দায় ঝুলানো লাল ডুরে গামছাটা বাতাসের তোড়ে উড়ে চলে যেতে চাইছিল যেন কোন অচিনপুরের ঠিকানায়। এই অনির্বচনীয় দৃশ্য কলমে তুলে আনতে চাওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা আমার যেন কলমের মসির আঁধারেই গুমরে-গুমরে মরছিল।

Comments