সুদীপ ঘোষাল

—এ ভালোবাসা আমি মেনে নেবো না। ভালোবাসার আর লোক পেলি না বেটা! একেবারে বেজাতের মেয়ে!
—বেজাত বলবে না বাবা। আমি রুনুকে ভালোবাসি। 
—দাঁড়া, পুলিশ ডাকি। আমি এখানকার হর্তাকর্তা। আর আমারই অসম্মান করা! 
বাপ-বেটায় তর্ক চলছে। পাড়ার লোকজন জুটে গেছে। মাঝখানে দাঁড়িয়ে সেন পরিবারের সকলে। রুনু পাশে দাঁড়িয়ে আছে জিদানের হাত ধরে।
জিদানের মা বলছে, মেনে নাও। ও এই মেয়েটাকে বিয়ে করলে সুখে থাকবে। সেটাই তো সব বাবা-মা চায়।
—একদম চুপ। বেজাত, বজ্জাতকে আমি ঘরে ঢোকাবো না। 
ইতিমধ্যে পুলিশ এল। জিদানকে ধরার আগেই দু'জনে লাগালো ছুট। জিদানের বাবা জবরদস্ত নামকরা ধনী লোক। ওর ভয়ে বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খায়। 

জিদান আর রুনু ছুটতে-ছুটতে বাসস্ট্যান্ডে আসে। চোখবুজে একটা বাসে উঠে পড়ে। জিদানের বাবার অনেক পোষা গুন্ডা আছে। তারাও তার বাবার ফোন পেয়ে মনে হয়,  দু'জনকে ফলো করছে। জিদান দু-একজনকে চেনে। বাবার কাছে আসতে দেখেছে। তারা দু-একজন বাসে উঠেছে। জিদান সুযোগ বুঝে রুনুকে নিয়ে নেমে পড়েছে। বাসেও বিপদ আছে। তারপর ছুটতে-ছুটতে একটা শহরে চলে এসেছে।

এই শহরে একটা ভাড়াঘর দেখে সংসার শুরু করলো দু'জনে। টাকাপয়সা নেই। জিদান নিজের আংটি, চেন বেচে বাড়িওয়ালাকে আ্যাডভান্স দিল। তারপর বাড়িওয়ালির হাজার প্রশ্ন।
—তোমরা  কি বিবাহিত? 
—না, আমরা দু'জনে বিয়ে করবো। বাড়িতে মানতে চায়নি। তাই শহরে আসা। 
বাড়িওয়ালি বললেন, তোমাদের দেখে ভদ্র মনে হচ্ছে। আমি তোমাদের সাহায্য করব। রুনু কিন্তু আমার কাছে শোবে। 
রুনু রাজি হলো। বিয়ের আগে দু'জন ছেলেমেয়ে একজায়গায় শুলে নিন্দা হবে। তাই তারা এই শর্তে রাজি হলো। 
বাড়িওয়ালি ভালো মহিলা। রুনুকে একটা রান্নার কাজ জুটিয়ে দিলেন। আর জিদান একটা চায়ের দোকানে কাজ পেল। বেশ চলে যাচ্ছিল তাদের। একদিন রুনু দেখলো, জিদান ও একটি সুন্দরী মেয়ে চায়ের দোকানে চা পান করছিল হাসতে-হাসতে। ঘরে আসতেই রুনু বললো, মেয়েটা কে ছিল?
—চায়ের দোকানের মালিকের মেয়ে।
—ও, খুব গল্প হলো, নয়?  বড়লোকের মেয়ে বলে কথা!
—তোমার জন্য আমি বাবা-মা, সকলকে ছেড়ে এই শহরে চায়ের দোকানে কাজ করছি। তাও তুমি আমাকে সন্দেহ করো!
—আমি আর এখানে থাকবো না। আমি জানি, আমার কপালে সুখ নেই। 
রুনু একথা বলে স্টেশনে এসে বসে থাকলো। জিদান ছুটতে-ছুটতে তার পিছনে পিছনে এলেও, রুনু ফিরলো না। জিদান না-খেয়ে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লে, রুনু বাড়িওয়ালির কাছে ফিরে এল। 

রুনু অবাক হয়ে গেল বাড়িওয়ালির বাড়ি ঢুকে। রুনু দেখলো, বাড়িওয়ালির উলঙ্গ দেহে সাদা পাঞ্জাবি পরা লোকটা কেমন ডন টানছে হাঁপরের মতো। পাশে আরও কয়েকটা মেয়ে ও ছেলে হাসাহাসি করছে। বাড়িওয়ালি রুনুকে দেখে বলে—ধর মাগিকে। একদম কচি। ভালো দাম পাওয়া যাবে। 
তারপর সবাই একত্রে ওইবাড়ি ছেড়ে রুনুকে নিয়ে চলে এল এক অন্ধকার গলির ভিতর। 
রুনু ভেবেছিল, জিদান নিশ্চয় খোঁজ করে চলে আসবে ভাড়াবাড়িতে।  
জিদানের যখন ঘুম ভাঙলো, তখন স্টেশন ফাঁকা হয়ে গেছে। চাঁদ তার জৌলুসে ভরিয়ে তুলেছে স্টেশনের পাশের জঙ্গল। রুনুকে না-দেখে জিদান বাড়ি ফেরার কথা চিন্তা করতে শুরু করলো। জিদান ভাবলো, রাগ করে রুনু হয়তো গ্রামে ফিরে গেছে। ওখানে গেলেই রুনুর দেখা পাবো।

জিদান ট্রেনে চেপে বসলো। ফিরে এল গ্রামে। গ্রামে ফিরে শুনলো—জিদান, কবে এলি রে? 
—আজকে এখনি। আচ্ছা তোমরা রুনুকে দেখেছো?
—কেন? ও তো তোর সঙ্গে গেছে। 
—না, ঝগড়া করে পালিয়ে এসেছে। 
গ্রামের লোকটা বললো, যা তোর বাড়ি যা। তোর মা তুই পালিয়ে যাওয়ার পর আত্মহত্যা করেছে। 
জিদান পাগলের মতো হয়ে গেল। মা নেই। রুনু নেই। তাহলে আর বাড়ি ফিরে কী হবে?  
জিদান ভাবলো, যাই আরও একবার শহরে গিয়ে রুনুর খোঁজ করি। যদি কোনো খোঁজ পাওয়া যায়। 

আজও সে খু্ঁজেই চলে।

Comments