রাত গাঢ় হয়ে এলে চারপাশে নিস্তব্ধতার উগ্র গন্ধ ছড়িয়ে যায় বাতাসে। যে-গন্ধ মানুষকে মানুষের থেকে বহু দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়, সেই গন্ধ গায়ে মেখেই আমি পার করি গোটা রাত। মাথার ভেতর গর্ত খুঁড়তে-খুঁড়তে স্মৃতিচারণের হাত ধরে উঠে আসে এক-একটা প্রিয়জনের মৃত্যুদৃশ্য। বিচ্ছেদের সংলাপ। বেজে ওঠে বেসুরো বিদায়ের সঙ্গীত। কাকেই-বা ধরে রাখতে পেরেছি আমি! হাঁটু মুড়ে বসে থাকি কবিতার পাশে। গোল্ড ফ্লেকের ধোঁয়ায় মিশে যায় আমার ক্লান্ত দীর্ঘশ্বাস। টেবিলের ওপর অ্যাস্ট্রের ভেতর স্তূপাকারে জমতে থাকে আমার পাঁজরপোড়া ছাই। কতকিছুই যে নিয়তিতে থাকে না, সেকথা একটা প্রবল বৃষ্টিপাতের পর বুঝতে পারি।
ছুরির আঘাতে হাতের রেখা কেটে ছিন্নভিন্ন করেছি, তবু কারোর চলে যাওয়া আটকাতে পারিনি আমি। এখন আর কারোর দূরে সরে যাওয়ার কথা ভাবলে, আমার আর শীত করে না মৃন্ময়ী। যারা সামান্য গাছের পাতা নড়লেই বাসা বদল করে নেয়, তারা ঝড়কে প্রতিহত করে কোনোদিনই কাছে থেকে যেতে আসে না। অথচ একদিন দুঃসাহস দেখিয়ে বিদগ্ধ ডানা দুটো নিয়ে আমি তোমার সাথেই আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম।
যদি আগে জানতাম এভাবেই মুখ থুবড়ে মাটিতে এসে পড়তে হবে, তবে নতজানু হয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম এই পাখিজন্ম ফিরিয়ে নাও ঈশ্বর! যারা রাতের অন্ধকারে পা রাখতে চাইছে দরজার বাইরে, ছলনাময়ী চাঁদের নমনীয় জোছনা দেখে আলিঙ্গন করতে চাইছে, তাদের দরজার বাইরে গিয়ে রাতপ্রহরীর বেশে আমাকে একবার হুঁশিয়ার করতে দাও। আমার বুকের ভেতর দগদগে ঘা-টা ওদের শেষবার দেখাতে দাও। যাতে একটা ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে কোনো অচেনা অতিথির হাতে অন্দরমহলে প্রবেশের চাবিকাঠিটা তুলে দেওয়ার ভুল আর কেউ না-করে। কেউ না...
Comments
Post a Comment