অনুপম যেন মার্কো পোলো! যৌবনের প্রাথমিক পর্বেই সে শুরু করেছিল রত্ন সংগ্রহের অভিযান। অনুপম স্বপ্ন দ্যাখে, একদিন সান্ধ্য-আসরে বন্ধুদের দেখাবে তার সফলতার অমূল্যরতন।
অন্ধকারে হাঁটতে-হাঁটতে একটা পাথরে হোঁচট খায় অনুপম। তার সারা শরীরে কালশিটের দাগ। নিকষ অন্ধকারে ভালো ঠাহর হয় না। তার মনে হয়, সামনে দুটো দরজার কপাট ঝুলছে। দরজা বন্ধ না খোলা, সে বুঝতে পারে না।
দুই কপাটের মাঝের ফোঁকর দিয়ে সে গলে যায়। সে দ্যাখে, একটা কুপি জ্বলছে। শিখাটা দুলছে সাপের ফণার মতো। অসংখ্য ফাটল ধরা পাথরের দেওয়াল। মাথার উপরে তাকিয়ে দ্যাখে, কালো আকাশে তারা মিটমিট করে তাকিয়ে আছে।
ঘাসের বিছানা পাতা একটা কারুকাজ করা কাঠের পালঙ্ক। কুপির আলোয় সে দেখতে পায়, একটা পাথরের গ্লাসে জল ও একটা প্রাচীন ঘড়া। সে জল মুখে দিতেই তার চোখে ভারী মেঘ-ঘুম নেমে আসে।
পাখির ডাকে তার ঘুম ভাঙে। সে দেখলো, আলোকিত লাল আকাশ। পাথরের দেওয়ালে একটা কুলুঙ্গি। সে কুলুঙ্গিতে পেল একটা খয়েরি রঙের চামড়ার ছোটো থলি। অন্ধকারে যেটাকে দরজা ভেবেছিল, সেটা আসলে দুর্বোধ্য ভাষায় খোদাই করা শিলালিপি। থলিটির চামড়ায় অপার্থিব কারুকাজ। শিল্পকর্মের মোটিফগুলো তার চেনা মনে হলো। বহুদিন আগে একটা পাহাড়ের গুহায় রত্নের খোঁজে গিয়েছিল, সেখানে পাথরের দেওয়ালে এইধরনের মোটিফ খোদাই করা ছিল। তবে কোনো মণিমানিক্য সে পায়নি। হতাশ হয়েছিল। বহুবার হতাশ হলেও, রত্নের অন্বষণে তার অভিযান থামেনি। সে ছোটো অথচ ভারী থলিটিকে হাতে নিয়ে সফলতার উচ্ছ্বাসে উত্তেজিত হয়ে পড়লো। থলিটির মুখ বাঁধা ছিল একটা সোনার সরু শিকলে। সে সন্তর্পণে মুখটা খুলে তার ডানহাত ঢুকিয়ে দিল। তার হাত পুরোটা ঢুকিয়েও থলিটির তল ছুঁতে পারলো না। তারপর তার অন্য হাতটাও থলিতে ঢুকিয়েও কোনো তল পেল না। সে উন্মাদের মতো তার দুটি পা গলিয়ে দিল থলির গহ্বরে। ক্রমেই সে ডুবে গেল একটা ছোট্ট অপার্থিব চামড়ার থলির অভ্যন্তরে—যেখানে সে খুঁজবে অমূল্যরতন! সফলতার স্বাদ!
Comments
Post a Comment