নার্ভের সমস্যায় ভোগান্তির শেষ নেই। রাতের ঘুমটা ঠিকঠাক হলে, খুব একটা অসুবিধেয় পড়তে হয় না। আজকাল চোখটাও বড়ো জ্বালাচ্ছে। চশমাটা তাই বালিশের পাশেই খোলা থাকে। রাত গড়ালেই শীত লাগে; দশটা বাজলেই বিছানায় উঠে কোল্ডক্রিম ঠোঁটে-গালে বুলিয়ে, বডিলোশন হাতে-পায়ে স্যাটাস্যাট করে লাগিয়ে পাতলা কম্বলের তলায় সেঁধিয়েই ব্যস...
রাত দেড়টা, রিংটোন বেজে উঠলো বালিশের পাশে।
চশমা গলিয়ে— হ্যালো?
— কেমন আছো? ঘুমোচ্ছো?
— হুম...ভালো। বাট, কে আপনি?
— মুন...এত অভিমান তোমার! আমার গলার আওয়াজ চিনতে পারছো না, নাকি চিনতে চাইছো না? কোনটা? মানছি আমারই দোষ...
— তুমি! এতদিন...কোথায় তুমি?
ঘুমঘোর কেটে চোখ ভেসে গেল।
— বিশ্বাস করো এভাবে না-জানিয়ে আমি বিদেশ যেতে চাইনি। কিন্তু সেদিন আমার কোনো উপায় ছিল না।পারলে ক্ষমা করো।
— আমার সবকিছু এভাবে ওলোটপালোট করে কেন দিলে? কী মনে করেছিলে, আমি খেলনা?
— না গো, না! সব বলবো...আমি ফিরে এসেছি। মুম্বাই এয়ারপোর্টে ওয়েটিং রুমে আমি। কাল সকালে কলকাতার আকাশ, সূর্য, গঙ্গা দেখবো কতদিন পরে! ভুল বুঝোনা ডিয়ার। কাল সকালে এসো এয়ারপোর্টে, প্রথম তোমার মুখটাই আমি...
— আমার বিয়ে হয়ে গেছে। কী বলে বেরোবো? তাছাড়া আমার ছোট্ট সোনাকে স্কুলে পাঠানো, অরিনের অফিসের ভাত...শাশুড়ি-মায়ের কাল ব্লাড টেস্ট...শ্বশুরমশাইয়ের টাইমে ওষুধ-ব্রেকফাস্ট, ননদের কলেজের টিফিন...না গো, পারবো না।
— বাব্বা, পুরো পাকা গিন্নি!
হেসে ফেলে, আবার বললো— তোমার বিয়ের খবর পেয়েছি। কিন্তু বড়ো অবাক লাগছে। পিএইচডি করে, শেষে হাঁড়ি ঠেলছো!
— পিএইচডি আর করা হলো কই! ওসব স্বপ্ন ডাস্টবিনে...হয়তো পচে মাটিতে মিশে গেছে এতদিনে!
— সে কী, কেন? চান্স পেয়েও...
— সব তোমার দোষ। তুমি হঠাৎ বেপাত্তা...আমি বিছানা নিলাম...বাবা হঠাৎ হার্ট অ্যার্টাকে চলে গেল...কাকা আর মামার বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে...
— হুমম... স্যরি, আমার জন্যে তোমার...
— থাক বাদ দাও। আমি আর ভাবতে চাই না।
— কবে তোমায় দেখতে পাবো?
— আমার মুখ দেখবার আর কি প্রয়োজন আছে? কোনো বিদেশিনীর সাথেই সংসার পাততে পারতে!
— আমি আজ যা বলবো, সবটাই তোমার মিথ্যে মনে হবে। তবু বলছি, তোমার আগে বা পরে কারও মুখ-ই আর জায়গা পায়নি এই চোখে। এনিওয়ে, কবে আসবে বলো। একটা ঘন্টা কি আমি পেতে পারি না?
— পরে জানাবো। রাখছি এখন। বাই।
— বাই।
অর্ণা আর সুরজিতের চোখের সামনে ভেসে চলে পুরোনো স্বপ্নের দিন।
যাচ্ছে ভেসে শহরতলি, রাস্তা-নদী, জেব্রাক্রসিং
শ্রাবণধারায় মনজোয়ারে, বনপলাশির পদাবলি
উদাস করা পাগল হাওয়া, পিয়ালশাখের কানে-কানে
ফিসফাস কানাকানি, ইচ্ছেডানা পাল তুলে দেয়
মেঘের ভেলায় আমার তুমি শুধু তোমার আমি
আশাবরীর সুর বাজে ,তুলসীতলায় সন্ধ্যাবাতি
আকাশপ্রদীপ জ্বলে ওঠে, সংসারের হাতছানি
Comments
Post a Comment