প্রসঙ্গত


কখনও আকাশে মেঘের ঘনঘটা এবং কখনও শরতের রোদের উঁকিঝুঁকি; কখনও আকাশভাঙা তুমুল বৃষ্টি এবং কখনও তীব্র আর্দ্রতা আর দাবদাহ— এইসব আপাত-বৈপরীত্যের মধ্যে দিয়ে চলছে আমাদের সেপ্টেম্বর। আর মানুষের জীবনেও যেন সেই আপাত-বৈপরীত্য ছায়া ফেলে যাচ্ছে অবিরত! প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার মতোই প্রতিদিন যেন আচ্ছন্ন করে রেখেছে আলো ও অন্ধকার। অবশ্যই অন্ধকারের ভাগ তাতে অনেক বেশি। তবুও মাঝেমাঝে যে দেখা যায় আলোর ঝলক, তা দেখে একেবারে নিরাশায় ডুবে যেতে ইচ্ছে করে না। হয়তো এই খড়কুটোর মতো আশাটুকু ধরে আঁকড়ে বাঁচার নাম-ই জীবন! এই পরিস্থিতির মধ্যেই মুক্তধারা অনলাইন  উপস্থিত হচ্ছে তার নতুন সংখ্যা নিয়ে। মাসিক অনলাইন পত্রিকায় পরিণত হওয়ার পরে, এই আমাদের চতুর্থ আয়োজন। কিন্তু নতুন রূপে আসার পরে, এই অল্প সময়ের মধ্যেই পাঠকদের কাছে আমরা যে-পরিমাণ সাড়া পেয়েছি তা এককথায় অসাধারণ। অনেকেই মৌখিকভাবে তাঁদের ভালোলাগার কথা জানালেও, কেউ-কেউ লিখিতভাবেও প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। খুব তাড়াতাড়ি কোনো একটি সংখ্যায় এইরকম কিছু পাঠ-প্রতিক্রিয়া আলাদা করে তুলে ধরার ইচ্ছে থাকলো। এইসব ভালোলাগার কথা জেনে, কাজ করার এবং আরও ভালো কাজ করার আগ্রহ বাড়ে; এইটুকু নির্দ্বিধায় বলা যায়।

বাঙালির সবচেয়ে বড়ো উৎসব দুর্গাপূজা এবার অক্টোবরের শেষদিকে। কিন্তু আমাদের সেপ্টেম্বর সংখ্যাতেই এবার পুজোর আবহ এনে দিচ্ছেন কবি প্রাণেশ সরকার, তাঁর আত্মজীবনীর দ্বিতীয় পর্বে। এই রেশ ধরেই আমরা আগামী সংখ্যায় অর্থাৎ অক্টোবরে, পুজোর আগেই 'পুজো স্পেশাল' কিছু পাঠকদের উপহার দিতে পারবো, এই আশা করছি। এবারের সংখ্যায় গল্প, কবিতা, মুক্তগদ্য, ধারাবাহিক— এইসব নিয়মিত বিভাগের সঙ্গে সংযোজিত হয়েছে সংস্কৃতি সংবাদ। ভবিষ্যতেও বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করতে আমরা আগ্রহী। এই বিষয়ে পাঠকরা, এবং লেখকরাও, তাঁদের নিজেদের অঞ্চলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সচিত্র সংবাদ পাঠিয়ে আমাদের সমৃদ্ধ করতে পারেন।

এবারের সংস্কৃতি সংবাদের অন্যতম হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে অনলাইন লিটল ম্যাগাজিন ফোরাম-এর প্রথম অনুষ্ঠানের খবর। মুক্তধারা অনলাইন এই ফোরামের সদস্য এবং ওই অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক হওয়ার কারণে, সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে যা-যা বলেছি, প্রাসঙ্গিকভাবেই তার সংক্ষিপ্তসার এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। বস্তুত, প্রিন্টেড ম্যাগাজিন বা মুদ্রিত পত্রিকার সঙ্গে অনলাইন পত্রিকার কোনো বিরোধ নেই; থাকার কথাও নয়। বরং আজকের দিনে পরস্পরের পরিপূরক হয়ে কাজ করার কথা। বিশেষ করে, অনলাইন পত্রপত্রিকার প্রকাশে যুক্ত অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা দুটি মাধ্যমেই কাজ করে থাকেন। যেমন, আমি নিজেই ২২ বছরের সম্পাদক-জীবনে ১৮ বছরই মুদ্রিত পত্রিকার সম্পাদনা করেছি। এখনও আমার অধিকাংশ লেখালেখি মুদ্রিত পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়। তাহলে আমার মতো মানুষেরা মুদ্রিত পত্রিকাকে অস্বীকার করবে কী করে! তবুও কেউ-কেউ এই দুটি মাধ্যমকে প্রতিপক্ষ ভেবে নিচ্ছেন, এবং মুদ্রিত মাধ্যমের লোকজন-ই তাঁদের মধ্যে বেশি। তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন, পৃথিবীর নামীদামি সব সংবাদমাধ্যমও এখন নিজেদের মুদ্রিত নিউজপেপার এবং ম্যাগাজিনের পাশাপাশি তাদের অনলাইন এডিশন রাখছে। ভারতের লিডিং পত্রিকাগোষ্ঠীগুলোও তার ব্যতিক্রম নয়। ফলে, লিটল ম্যাগাজিনের জগতেও যে আস্তে-আস্তে অনলাইন পত্রিকার উপস্থিতি ক্রমশই বাড়তে থাকবে, সেটাই তো অত্যন্ত স্বাভাবিক। আজকে যখন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের প্রবাসী বাঙালি লেখক ও পাঠকেরা মুক্তধারা অনলাইন পড়েন, বাংলাদেশের লেখকরা পত্রিকাটির লিঙ্ক প্রকাশের মুহূর্ত থেকেই তাঁদের পাঠকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারেন, তখন বোঝা যায় একটি অনলাইন পত্রিকার প্রসারক্ষমতা কতটা বেশি। আজকে যখন সত্তর দশকের অন্যতম উল্লেখযোগ্য এক কবি মুক্তধারা অনলাইন-এর পাতায় আত্মজীবনী লেখেন এবং আমেরিকা বা স্কটল্যান্ডের মতো দূরদেশ থেকে কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁর আত্মজীবনীর পাঠ-প্রতিক্রিয়া আসতে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন, তখন আমাদের মনে হয় অনলাইন পত্রিকা করার এই সিদ্ধান্ত সার্থক, এই পরিশ্রমও। মুদ্রিত পত্রিকা হলে তো এই প্রসারতা সম্ভব ছিল না! যখন প্রথম লিখতে এসেছিলাম, তখন সবার মতো আমারও ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখতে খুব ভালো লাগতো। আজও ভালোই লাগে। আরও ভালো লাগে, নতুন বই বা পত্রিকা হাতে নিয়ে তাকে অনুভব করতে। একথা তো অনস্বীকার্য। কিন্তু তার জন্য অনলাইন পত্রিকার গুরুত্ব বা প্রয়োজন অস্বীকার করতে হবে কেন? বরং এই বাস্তবকে মেনে নেওয়ার সময় এসেছে যে, অনলাইন পত্রপত্রিকা থাকতেই এসেছে এবং ভবিষ্যতে প্রিন্টের পাশাপাশি অনলাইন পত্রিকাও থাকবে। আরও ভালো করে বললে, প্রিন্ট ক্রমশ সীমিত হয়ে যেতে পারে; কিন্তু অনলাইন থাকবেই। এটাই ভবিষ্যত। তাই এই সহাবস্থানকে খোলামনে মেনে নেওয়া ভালো। আমরাও তো, নিজেদের পত্রিকাকে অনলাইন পত্রিকায় পরিণত করা সত্ত্বেও, মুক্তধারা  নামে আমাদের ছোট্ট প্রকাশনাকে মুদ্রিত বইয়ের জন্যই সীমাবদ্ধ রেখেছি। এই সহাবস্থান-ই তো স্বাভাবিক

~ রাহুল ঘোষ 

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ২৯ ভাদ্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ ছবি-ঋণ : কার্স্টেন ওয়াইনগার্ট


Comments