পাঁচ.
কোথায় বৃষ্টি পড়ছে? কোথায়? কাকে মনে পড়লো? কার? মহুয়াকে? জিতুর? প্রবল শীতে জমে যেতে-যেতে মাথার ভেতর বাজতে থাকা প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে জিতু। উত্তর খুঁজতে-খুঁজতেই আবার সে ডুবে যায় অফিস-লাগোয়া রাস্তার গা ঘেঁষে বেড়ে ওঠা শিউলিগাছের মাতাল করা শিউলির গন্ধে। শিশিরধোয়া রাস্তাটা সাত-সকালে ভেজা, নির্জন। শিউলিঝরা গাছের নিচের রাস্তাটা জাফরানি-সাদায় অদ্ভুত দেখায়। বরাবরই অফিসে সময়ের পাঁচ-দশ মিনিট আগে পৌঁছায় জিতু। শরতে শিউলি তাকে ভীষণরকম টানে। সকালে এসেই সে তাই নির্জন শিউলিগাছটার নিচে দু'দণ্ড দাঁড়ায়। একটু শ্বাস নেয় স্বস্তির, জিরোয়। শিউলির মিষ্টি গন্ধটা তাকে টেনে নিয়ে যায় দীপালিদের শানবাঁধানো দিঘির ঘাটে। আহা দীপালি! কোথায় যে হারিয়ে গেল মেয়েটা! কৈশোরের দিনগুলো মাথার ভেতর গুনগুনিয়ে ওঠে। প্রথম প্রেমের চেয়ে মিষ্টি কিছু জগতে নেই আর। তবু কেন যে অধরাই থেকে যায় তা একজীবনে! ভেবে, বুকের ভেতরে একটা তীক্ষ্ণ ব্যথা চিলিক দেয় হঠাৎ। একটা দীর্ঘশ্বাস দলা পাকিয়ে ওঠে।
মাঠের মধ্যে বাড়ি ছিল দীপালিদের। উঁচু রাস্তা দিয়ে নেমে অনেকটা যেতে হতো মাঠের আঁকাবাঁকা আলপথ বেয়ে। দূর থেকে বাড়িটাকে দেখতে একটা দ্বীপের মতো লাগতো। বাড়ির পেছনে শানবাঁধানো দিঘির ঘাটের দু'পাশে দুটো শিউলিগাছ দাঁড়িয়ে থাকতো পাহারাদারের মতো। দিঘির উঁচু পাড় ঘেঁষে ছিল আম-কাঁঠালের সারি। বিশাল দিঘিটা সারাবছর জল-থইথই করতো। মাঠ পেরিয়ে, আঁকাবাঁকা আলপথের ধাঁধা ছাড়িয়ে, কৈশোরের ভীরু কাঁপাকাঁপা বুকে প্রায় প্রতি বিকেলেই দিঘির সেই শানবাঁধানো ঘাটে গিয়ে উদাস একা বসে থাকতো জিতু। শিউলির মিষ্টি গন্ধ তাকে আকুল করে দিত। তীব্র ইচ্ছে হতো তার, দীপালিকে একবার ডাকে; একবার তার চোখে চোখ রেখে সাহস করে বলে, "তোকে ভালোবাসি দীপু!"
কিন্তু বলা যায়নি। বলা যায় না। অত সাহস তখন তার ওই ছোট্ট ভীরু বুকের ভেতর কোত্থেকেই-বা আসতে পারতো! জিতু তাই আনমনে বসে থাকতো দীপালিদের দিঘির ঘাটে। দু'পাশের শিউলিগাছদুটো শরৎ-হেমন্ত আর শীতজুড়ে ফুলে-ফুলে ছেয়ে থাকতো প্রায়। সাদা আর জাফরানিরঙা ফুলগুলো ছড়িয়ে থাকতো ঘাটে, ভাসতো দিঘির শান্ত-শীতল জলে, সেদিকে তাকিয়ে থাকতে-থাকতে ঘোর লেগে যেত জিতুর চোখে। সে খুব করে চাইতো, দু'পাশে বেণী দুলিয়ে দীপালি এসে বসুক তার পাশে; লাজুক একটু হাসুক তার চোখে চোখ রেখে। কী ডাগর-কালো দুটো চোখ ছিল দীপালির! পৃথিবীর সব প্রেম জমেছিল দীপালির ওই দুটো চোখে। কিন্তু দীপালি কোনোদিন আসেনি। স্কুলে দেখা হতো তাদের প্রতিদিন, কথা হয়নি কোনোদিন তবু। চোখে চোখে কথাও কি হতো না তাদের? সেই নবীন ভীরু দু'জোড়া চোখ ঠিক বুঝতো পরস্পরের অব্যক্ত সব কথা, পড়ে নিত হৃদয়ের গভীর গোপন। তবু কেন যে এক বিকেলেও আসতো না দীপালি! সে কি জানতো না প্রতি বিকেলে জিতুর সেই ব্যাকুল প্রতীক্ষা, অধীর মন! তবু কেন আসতো না দীপালি? কী করতো সে সেইসব থমধরা বিকেলগুলোতে, কে জানে! একদিন তবু ধরা পড়ে গেল জিতু। দীপালির দাদা সুবোধ সেদিন অবেলার ট্রেনে শহর থেকে ফিরে নাইতে এল দিঘির ঘাটে। জিতুকে দেখে খানিকটা অবাক হয়ে বললো, "তুমি কে? কী করছো এখানে?"
জিতু তখন ফ্যাকাশে, চুরি করে ধরা পড়া অপরাধী মুখ। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ইশারায় মাঠের ও-প্রান্তের গ্রামটা দেখিয়ে সে বললো, "আমি জিতু। ওই গাঁয়ে বাড়ি।"
সুবোধ শহরের কলেজে পড়তো, ভালো ছাত্র হিসেবে এলাকার সবার কাছে সমাদর ছিল তার। ভালো ছেলে হিসেবেও। জিতুকে আরেকনজর দেখেই সে জলে নেমে গেল ঘাট পেরিয়ে। দারুণ ছন্দে সাঁতরাতে থাকলো দিঘির নিস্তরঙ্গ জলে উত্তাল তরঙ্গ তুলে। মুগ্ধ হয়ে দেখলো জিতু। সুবোধকে বড়ো ভালো লেগে গেল তার। দীপালির সঙ্গে সুবোধের চেহারার আশ্চর্যরকম মিল। সুবোধের চোখের দিকে তাকিয়ে জিতুর মনে হতো, সুবোধ নয়, সে আদতে তাকিয়ে থাকতো দীপালির চোখেই! পরে যতবার ব্যাপারটা মনে পড়েছে জিতুর, হেসে গড়িয়েছে সে আপন মনেই। প্রেম যে কী অদ্ভুত আর রহস্যময়! মানুষকে বোকা আর যুক্তিবিবর্জিত করে তোলে। সুবোধ স্নান সেরে ঘাটের ওপর বসলো গা-মাথা মুছে। জিতুর দিকে তাকিয়ে বললো, "তুমি এখানে কী করছো, বললে না তো? তুমি এখানে প্রায়ই আসো?"
ওপর-নিচ মাথা ঝাঁকিয়ে পরের প্রশ্নটুকুর উত্তর দিল জিতু। আগেরটুকুর উত্তর তো নিজেই ভালো জানে না সে, কী উত্তর দেবে তবে!
"কোন ক্লাসে পড়ো?"
"ক্লাস টেনে।"
"টেনে?" ভ্রু কুঁচকে জিতুকে এবার ভালো করে দেখলো সুবোধ। তারপর বললো, "মানে দীপালির বন্ধু তুমি?"
"একক্লাসে পড়ি।" বলে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো জিতু।তার কান দিয়ে তখন গরম ভাপ বেরোচ্ছে, মুখ আরক্তিম ভীষণ।
তার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ হো-হো হাসলো সুবোধ। তারপর গলা তুলে বললো, "দীপু! দীপু!"
"যাই দাদা!" বাড়ির ভেতর থেকে গলা ভেসে এল দীপালির।
"মুড়ি আর নারকেল নিয়ে আয় তো দীপু! খিদে পেয়েছে খুব!"
জিতুর তখন ভয়ে, লজ্জায়, আর কী যেন কী এক উত্তেজনায় শরীর-মন অসাড় হওয়ার দশা। একবার ইচ্ছে হলো, একছুটে সে পালিয়ে যায় দূরে। আবার মনে হলো, দূর! দীপু কী ভাববে তাতে! হাসবে নিশ্চয়ই খুব! জিতুকে ভাববে ভিতুর ডিম!
"আমি এবার যাই, দাদা!" প্রায় তোতলাতে-তোতলাতে কোনোমতে বাক্যটা শেষ করতে পারলো শুধু জিতু। ঠিক তখনই কোরানো নারকেল আর মুড়ি নিয়ে দীপালি হাজির হলো সেখানে। জিতুকে দেখে ভীষণ অবাক হয়ে সে তাকিয়ে থাকলো জিতুর দিকে। সুবোধ তখন মুড়ি আর নারকেলে ব্যস্ত।মুড়ি চিবুতে-চিবুতে জিতুর দিকে তাকিয়ে বললো, "এখনই যাবে কেন? এসো, মুড়ি খাও।নারকেল আর মুড়ি খাও তো? খুব ভালো খেতে! ওকে চিনিস নাকি? তোর সঙ্গেই পড়ে বলছিল!"
শেষের কথাগুলো দীপালিকে উদ্দেশ করে। দীপালি কোনোমতে "হ্যাঁ" বলেই পালিয়ে বাঁচলো। কিন্তু জিতুর অত সহজে মুক্তি মিললো না। সুবোধের সঙ্গে নারকেল-মুড়ি খেয়ে, অনেক-অনেক গল্প আর উপদেশ শুনে, অঙ্কের নানান মারপ্যাঁচ মন দিয়ে বোঝার ভান করে যখন সে ছুটি পেল, তখন সন্ধ্যা নেমেছে দীপালিদের শানবাঁধানো ঘাটে, দীপালিদের ঘরে জ্বলেছে সান্ধ্যবাতি আর তুলসীতলায় বেজে উঠেছে মিষ্টি শঙ্খধ্বনি। দীপালি তখন দূর কোনো আকাশের সন্ধ্যাতারা হয়ে জ্বলছে জিতুর মনাকাশে। সেই শিউলিফোটা শরৎসন্ধ্যার ঘনায়মান অন্ধকারে কী এক অচেনা আবেশে আচ্ছন্ন হয়ে জিতু আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে বাড়ি ফিরেছিল নতুন এক স্বপ্ন চোখে মেখে। "তুমি সন্ধ্যাকাশের তারার মতো আমার মনে জ্বলবে"—পড়ার টেবিলে বসে আনমনা গানটা গুনগুন করছিল সে; মন ছিল না পড়ায়, মন ছিল না কোনোকিছুতেই। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমেছিল কখন, কখন মা খেতে ডেকে-ডেকে ক্লান্ত হয়েছিলেন, কখন ঝুম বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিয়েছিল তার একমাথা চুল, বই-খাতা, কে জানে সে-সব! সম্বিৎ ফিরেছিল মা এসে তার ঘরের জানালা বন্ধ করতে-করতে বিরক্ত স্বরে "কী যে ছেলে হয়েছিস তুই জিতু! বৃষ্টিতে সব ভিজে একাকার, তবু উঠে জানালা পর্যন্ত বন্ধ করার নাম নেই তোর!" বলে গজগজ করাতে। সেই যে বৃষ্টি নামলো সেদিন, আর থামলো না কিছুতেই।
তার কিছুদিন বাদেই, এক বিকেলে গিয়ে জিতু আবিষ্কার করলো, দীপালিদের বাড়িটা অতিরিক্তরকম নীরব, নিঝুম। কী যেন একটা গুমোট শোক ভাসছে হাওয়ায়। দিঘির ঘাটে গিয়ে বসলো জিতু। মন বসলো না কিছুতেই। সে পায়ে-পায়ে এগিয়ে গেল দীপালিদের ভেতরবাড়ির দিকে। কিন্তু সব কেমন ফাঁকা। শূন্য। খাঁ-খাঁ করছে পুরো বাড়ি। সন্ধ্যা নামবে খানিক বাদেই; তবু উলুধ্বনি নেই, শাঁখের আওয়াজ নেই, দীপালি নেই।বাড়িটা জনশূন্য, শোকাতুর।
দু'দিন পরে অবশ্য বাড়িটা ফাঁকা ছিল না আর। ওপার বাংলা থেকে এক মুসলমান পরিবার এসে দখলেনিয়েছিল সব। যেমন সেই মুসলমান পরিবারটির ওপারের বাড়িটাতে গিয়ে থিতু হয়েছিল সুবোধ আর দীপালিদের পরিবার। সম্পত্তি অদলবদল করে নিয়েছিল দুটি পরিবার পরস্পরের মধ্যে, অতি গোপনে।আর কখনও দেখা হয়নি দীপালির সঙ্গে।কোথায় আছে এখন দীপু? কেমন আছে? তার সেই কাজল-কালো চোখদুটো! আহা! কী যে তৃষ্ণার্ত করে তোলে জিতুকে আজও! কিন্তু বৃষ্টিটা কি থামবে না কোনোদিন আর? শীতে জমে যেতে-যেতে, কুঁকড়ে যেতে-যেতে, ভাবে জিতু। জলের তোড়ে বুঝি ভেসে যাবে সব আজ; জিতুও।
ছয়.
বারোটা নাগাদ বাসায় পৌঁছলো জিতু। ঢাকা শহরটা তখন অনেকটাই সুনসান, শান্ত। বাড়িটাও ঘুমিয়ে পড়েছে প্রায়। দারোয়ান ঝিমুচ্ছিল বসে। ডাকতেই ঘুম-ঘুম চোখে উঠে এসে গেট খুলে দিল। লিফট বেয়ে সাততলায় উঠে ফ্ল্যাটের সামনে চুপচাপ একটু দাঁড়ালো জিতু। কী করছে মহুয়া? ঘুমিয়েছে কি? সচরাচর এগারোটার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে মহুয়া। রাত জাগতে পারে না সে। জিতুর মনে অপরাধবোধ জাগলো খানিক। আগেই ফোনে জানানো দরকার ছিল মহুয়াকে, তাহলে সে দেরি করে ঘুমাতো আজ। এখন কাঁচা ঘুম থেকে জাগবে বেচারা। কলিংবেল চেপে অপরাধী মুখে দাঁড়িয়ে ঘড়ি দেখলো জিতু। বারোটা দশ। মহুয়া দরজা খুলছে না। ঘুমটা সম্ভবত গাঢ় হয়েছে মহুয়ার।নির্দিষ্ট বিরতিতে বারবার কলিংবেল চাপতে থাকলো জিতু।
"কে?" ভেতর থেকে চাপা কণ্ঠ ভেসে এল মহুয়ার। ডোরভিউতে চোখ। টের পেল জিতু।
"আমি। দরজা খোলো মহুয়া।"
বন্ধ দরজার ওপাশ থেকে সরে গেল মহুয়া।বেডরুমের দিকে গেল সম্ভবত। হঠাৎই পরিস্থিতিটা খানিকটা অস্বাভাবিক লাগলো জিতুর। কেন যেন মনে হলো, ভেতর থেকে চাপাগলায় কথা বলার আওয়াজ এল কানে।কিন্ত বাসায় তো মহুয়া একা! কার সঙ্গে কথা বলছে তাহলে সে? পরক্ষণেই মনে হলো, না। মনের ভুল।টিভি চলছে হয়তো।
অবশেষে দরজাটা খুললো।অনন্তকাল পরে দরজা খুললো মহুয়া।জিতুর অন্তত তেমনই মনে হলো। মহুয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বরাবরের মতোই মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়লো জিতুর মনে, নেশা।
"কী ব্যাপার? তুমি? তোমার তো কাল রাতে আসার কথা!" বিরক্ত, রূঢ় কণ্ঠে বললো মহুয়া। খানিকটা ভয়ও কি ছিল তাতে? জিতু জানে না। অতসব খেয়াল করেনি সে তখন। মহুয়ার নেশা তাকে বুঁদ করে রেখেছিল তখন, বিগত বছরগুলোর মতোই। মহুয়াকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো জিতু। বললো, "কাজ শেষ হয়ে গেল আজই। তুমি এদিকে একা, তাই সময় নষ্ট না করে চলে এলাম রাতেই।" বলতে-বলতে বেডরুমের দিকে এগোলো সে। পরনের শার্ট-প্যান্ট খোলার উদ্যোগ নিল।পেছনে দড়াম করে দরজাটা বন্ধ করে কাঠ হয়ে তখনও দাঁড়িয়ে আছে মহুয়া।
হঠাৎই ভূত দেখার মতো চমকে গেল জিতু। বেডরুমের দরজায় মুহিত। শর্টস পরা, খালি গা। বুকের লোমগুলো তার ফর্সা বুকে আশ্চর্য একথোকা কালো গোলাপ হয়ে ফুটে আছে। অজান্তেই দাঁড়িয়ে পড়লো জিতু। এতটা হতবাক জীবনে আর কখনও হয়েছে বলে মনে পড়লো না তার। মাথার ভেতরটা ভীষণ ফাঁকা হয়ে গেল মুহূর্তেই। ক্লান্ত লাগলো ভীষণ। ঘুরে তাকিয়ে মহুয়াকে দেখলো একবার।কী বলবে ভেবে পেল না জিতু।জীবন ভারী আর দুর্বহ লাগলো তার।ইচ্ছে হলো ছুটে সে বের হয়ে যায় ঘর ছেড়ে, ফ্ল্যাট ছেড়ে, এই শহর ছেড়ে। ইচ্ছে হলো, সে পালিয়ে যায় সব ছেড়ে দূরে কোথাও। যেখানে মহুয়া নেই, মুহিত নেই, জীবনে হঠাৎ নেমে আসা বিশ্বাসের নিদারুণ এই টানাপোড়েন নেই।
কিন্তু অতকিছু করতে হলো না তাকে। মুহিত এগিয়ে এল ধীর পায়ে, উল্টোদিক থেকে মহুয়াও। মুহিতের হাতে মহুয়ার ওড়না। মুহূর্তেই সেটা জিতুর গলায় পেঁচিয়ে দিল সে। মহুয়াও হাত লাগালো দ্রুত।
বস্তায় লাশ ভরে লিফটে দ্রুত নিচে নামলো মুহিত আর মহুয়া। দারোয়ান ঘুমে ঢুলছে। গাড়ির বাঙ্কারে লাশটা দারোয়ানের অগোচরে তুলে দিল তারা। আবার উঠে এল ওপরে। সাবধানে ঢাকনা লাগিয়ে দিল অতঃপর।
ভোররাত থেকে অঝোরে বৃষ্টি। দারোয়ানকে গেট খুলতে বলে গাড়িতে উঠে বসলো মহুয়া। ড্রাইভিং-সিটে মুহিত। মহুয়ার বন্ধু। জিতুর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল মহুয়া নিজেই একদিন। কতদিন এসেছে মুহিত, আড্ডা দিয়েছে জিতু আর মহুয়ার সঙ্গে।
জীবন বহুরূপী। বহুরূপী। বিচিত্র। কেন যে মিথ্যে জিতুকে তাদের মধ্যে টেনে এনেছিল মহুয়া! কথাটা ভাবতেই ভারি হাসি পায় জিতুর। বড়োলোকের খেয়ালি মেয়ে মহুয়া; হয়তো অ্যাডভেঞ্চার চেয়েছিল জীবনে! তার সে-খেয়ালের কাছে জিতুর মতো কারও জীবন অতি তুচ্ছ আর সামান্য।বস্তাবন্দি লাশটাকে তারা নির্জন রাস্তা থেকে নিচের খাদে ফেলে দিল লহমায়, বস্তাটা গড়িয়ে গিয়ে অসংখ্য বর্জ্যের মধ্যে নিজের জায়গা করে নিল অনায়াসে। তুমুল বৃষ্টির জল তখন সেখানে গড়িয়ে পড়ছে প্রবল গতিতে। শহরের সব বর্জ্যের সঙ্গে লাশটাও নির্বিঘ্নে ভিজতে থাকলো আষাঢ়ের বিষণ্ণ বৃষ্টিতে।
সাত.
আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে মনে পড়লো তোমায়…
নাঃ, গানটা মনে হচ্ছে মাথার মধ্যে গেঁথে গেছে জিতুর। বাজছে অবিরাম। বেজেই যাচ্ছে। কার যেন একটা মুখ মনে পড়তে চাইছে বারবার। কার? মহুয়ার? নাকি দীপালির? জানে না জিতু। গানটা শুধু মাথার ভেতর বাজতে থাকে অনবরত। তালগোল পাকিয়ে দেয় সব বোধ। আর ভীষণ শীত করে জিতুর। ভয়ানক শীত হিম করে দিতে থাকে তাকে। দূরে কোথাও টিনের চালে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির শব্দ হয়, জিতুকে ভিজিয়ে দেয়, জিতুকে ডুবিয়ে দেয়। সে ডুবে যাচ্ছে, ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে কোনো অতল অন্ধকারে, বুঝতে পারে জিতু।
(এই গল্পের প্রথমাংশ পড়তে হলে, যেতে হবে এই লিঙ্কে — https://www.muktadhara.co.in/2023/07/blog-post_83.html)
Comments
Post a Comment