অঙ্কিতা সরকার

আর দু-একদিন পরেই পুজোর ছুটি পড়ে যাবে, ক্লাসরুমটা আজকে বড্ড বেশি শূন্য মনে হয় আলোলিকার কাছে। প্র্যাক্টিকালের কিছু কাজ যেমন প্রজেক্ট ওয়ার্ক, নোটবুক ইত্যাদি সই করানোর জন্য কয়েকজনই মাত্র এসেছিল। পুজোর পরে স্কুল খুললেই তো টেস্ট শুরু হয়ে যাবে। অল্প কিছুদিন হলো সে এই স্কুলে যোগদান করেছে। কলকাতার বুকে এত সবুজে ঘেরা স্কুলপ্রাঙ্গণ যেন একটি ইকো নেস্ট! স্কুলের পেছনের দিকে পেয়ারা, নিম, জামরুল, কামরাঙা, গাব প্রভৃতি গাছে ভর্তি। আর সামনের দিকে ফুলের বাগান। স্কুলগেটের ঠিক বাঁদিকে ছোটোদের জন্য দোলনা, স্লিপ রয়েছে। অল্প কিছুদিনেই ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছে সে এই পরিবেশকে। ক্লাসে গুটিকতক ছাত্র বেঞ্চে বসে আছে। এদের মধ্যেই হঠাৎ একটি শীর্ণকায় ছেলে একটি সাদা কাগজে কিছু প্রশ্ন এগিয়ে দিয়ে বললো, "ম্যাম, এগুলো টেস্ট পেপার সল্ভ করতে গিয়ে পেয়েছি, কিন্তু কিছুতেই করতে পারছি না। অনেকবার চেষ্টাও করেছি।"
আলোলিকা খুব খুশী হলো। নতুন আসায় সবার নাম এখনও জেনে ওঠা হয়নি। যাইহোক, প্রবলেমগুলো সল্ভ করে ওকে বুঝিয়ে দিল। ছেলেটি খুশিমনে চলে গেল। এভাবে কয়েকটা দিন স্কুলে ভালোই কেটে গেল। পড়ানোর সুযোগ এখনও সেভাবে পায়নি। হয়তো নেক্সট সেশনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। হঠাৎ সেদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে সেই ছেলেটির সঙ্গে দেখা। আলোলিকাকে দেখেই সে এগিয়ে এসে বললো, "ম্যাম ভালো আছেন? বাকি প্রবলেমগুলো সব সল্ভ করে ফেলেছি ম্যাম, কিন্তু শেষ অধ্যায়টা বুঝতে পারছি না বেশ কিছু জায়গায়। আসলে টিউশনে সেভাবে বুঝতে পারিনি ম্যাম।" একনিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেল সে।
আলোলিকা তাকে আশ্বাস দিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়ালো। আজ আর অন্নপূর্ণা থেকে মিষ্টি কিনতে ইচ্ছে হলো না তার। চোখের সামনে যেন বারবার ভেসে উঠতে থাকলো প্রায় ১৫ বছর আগের স্মৃতি।সেটিও একটি ক্লাসরুমের।;অনেকদিনের পুরোনো ক্লাসরুম। দেওয়ালে নোনা ধরেছে। পলেস্তরা খসে যাচ্ছে। কড়ি-বড়গার বড়ো-বড়ো ঘর, খড়খড়ির জানলা। থামগুলো প্রায় শতবর্ষের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থবিদ্যার সেকেন্ড পিরিয়ড চলছে। আরএম স্যারের ক্লাস। আজ দ্বিতীয় দিন। সবাই তটস্থ। একজন-একজন করে বোর্ডে যাচ্ছে, আর পড়া না-পারায় শাস্তিভোগ করছে। কিন্তু তারা বিন্দুমাত্র লজ্জিত নয় তাতে। এরপরে ডাক পেল লাস্টবেঞ্চের কোনায় চুপচাপ বসে থাকা সাদাজামা- কালোপ্যান্টের রোগা, ধুলোমাখা মলিন চেহারার ছেলেটি। ততক্ষণে প্রায় গোটা ক্লাস ঘরের বাইরে।সবাইকে অবাক করে সরল দোলকের একটি কঠিন প্রবলেম সে অবলীলায় সল্ভ করে দিল। স্যার গম্ভীর গলার আওয়াজে বলে উঠলেন, "বাঃ, ওয়ান্ডারফুল! কী করে শিখলি রে? কোথায় শিখলি?"
ছেলেটি নীরব রইলো। সেদিনের সেই ক্লাসে স্যারের চোখে পড়েছিল শীর্ণকায় ছেলেটির চোখের অসম্ভব জেদি দৃষ্টিকে। কিশোরী আলোলিকা নির্বাকদৃষ্টিতে সেদিন তাকিয়েছিল বোর্ডের দিকে। ক্লাস শেষ হওয়ার ঘণ্টা পড়তেই স্তব্ধতা ভেঙে গেল। ছেলেরা হইচই করে উঠলো। চন্দ্রাণী, মধুমিতা, শ্রাবণী, বৃষ্টি, বৈশাখী, পল্লবী-সহ মেয়েদের গ্রুপের অনেকেই বলে উঠলো, "এ আর এমন কী! একটু বেশিই অহংকার ছেলেটার। আমাদের ব্যাচে এখনও চ্যাপ্টারটা হয়নি বলে আমরা পারলাম না।" কিন্তু আলোলিকা আর পৌলমী এই কথায় সায় দিতে পারলো না। এ তো কনসেপচুয়াল কোশ্চেন। ফান্ডামেন্টাল বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা না-থাকায় তারা এবং আরও অনেকেই উত্তর দিতে পারেনি। এটা কিন্তু মনে-মনে জানলেও অনেকেই স্বীকার করলো না। কিন্তু আলোলিকা এই প্রথমবার কোনো ঈর্ষা অনুভব করতে পারলো না। তার বারবার মনে হতে লাগলো যে একটু কনগ্র‍্যাচুলেট করতে পারলে কী ভালোই-না হতো! কিন্ত শেষ অবধি আর সাহসে কুলোলো না। সকলের মধ্যে পৌলমী তার খুব কাছের। কিন্তু তাকেও সে এই বিষয়টি জানাতে ঠিক সাহস পেল না।
এর বেশ কিছুদিন পরে পুজোর ছুটিতে আলোলিকা তার এক মাসতুতো দিদির বাড়ি রায়পুরে বেড়াতে গেল। গতবছর শীতেই তার টুকুনদিদির বিয়ে হয় রায়পুরের জমিদারবাড়িতে। তখন টেস্ট পরীক্ষা থাকায় টুকুনদিদির বিয়েতে যাওয়া হয়ে ওঠেনি আলোলিকার। তাই এবার টুকুনদিদির আবদারে, আলোলিকা আর তার একমাত্র ভাই পাপাই,  টুকুনদিদির নতুন শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গেল। ষষ্ঠীর দিন সকালবেলায় বাবার সঙ্গে মোটরগাড়িতে চেপে দুই ভাইবোন বেরিয়ে পড়লো রায়পুরের উদ্দেশে।বাবার অফিসের ছুটি না-থাকায় ওদেরকে নামিয়ে দিয়েই আবার ফিরে আসবে। শহর পেরিয়ে গ্রামের রাস্তা শুরু হলো। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। রাস্তায় দু'পাশে সাদা-সাদা কাশফুল ফুটেছে। নীলরঙের আকাশে সত্যিই যেন সাদা মেঘের ভেলা।  মস্তবড়ো এক জমিদারবাড়ির সামনে তাদের গাড়ি দাঁড়ালো। টুকুনদিদি ছুটে এল সঙ্গে-সঙ্গে।
"বুকুন-পাপাই? শেষ অবধি তোরা এলি!"
বুকুন আলোলিকার ডাকনাম। খুব কম আত্মীয়স্বজনই বুকুনের ভালোনাম জানে। টুকুনদিদির বাড়ি জয়েন্ট ফ্যামিলি। যদিও কর্মসূত্রে অনেকেই রাজ্য বা দেশের বাইরে থাকে, কিন্তু বাড়ির দুর্গাপুজোর সময় সকলে ফিরে আসে শেকড়ের টানে। বাবা কিছুক্ষণ বসে, গল্প করে ফিরে গেল বাড়ি। টুকুনদিদি আলোলিকা আর পাপাইকে সঙ্গে নিয়ে দোতলায় উঠে গেল। বারান্দার পাশেই একটা মস্তবড়ো ঘরে গিয়ে ওদের জিনিসপত্র নামিয়ে দিয়ে বললো, "পুজোর ক'টা দিন তুই আর পাপাই মিতুনের সঙ্গেই থাকবি, কেমন?"
"হ্যাঁ, এই ভালো হলো। কতদিন মিতুনদিদির সঙ্গে আমার দেখা হয়নি!"
মিতুন টুকুনের বোন। অনেক গল্প জমে আছে মিতুনদিদির সঙ্গে। "মিতুনদিদি কোথায় গেছে?" আলোলিকা জিজ্ঞাসা করল টুকুনদিদিকে।
"মিতুন একটু পুজোর বাজার করতে গেছে। তোরা স্নান করে ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় দেখি। তাড়াতাড়ি দুপুরের খাবার খেয়ে নে। বিকেলে আমরা কুমোরপাড়ায় ঠাকুর আনতে যাবো।"
শুনে আলোলিকা আর পাপাই খুব খুশি! ঘুম থেকে উঠেই দেখলো মিতুনদিদি বাজার করে ফিরে এসেছে। বিকেলে সকলে মিলে হইহই করে গ্রামেরই কুমোরপাড়ায় রওনা হলো মাকে আনতে। সেখানে গিয়ে আলোলিকা দেখলো, একটি ছেলে মায়ের অস্ত্রশস্ত্রগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে দিচ্ছে। আলোলিকার ছেলেটিকে খুব চেনা-চেনা লাগলো। ঠিক তখনই আলোলিকার জামাইবাবু স্পন্দনদা ছেলেটিকে বলে উঠলো, "কী রে পিন্টু, তুই কবে এলি?"
ছেলেটি সামনে ঘুরতেই আলোলিকা চমকে উঠলো। এ কী! এ তো তাদের ক্লাসের মৈনাক! ও এখানে কেন? কী করছে এখানে? এরকম অজস্র প্রশ্ন ভিড় করে উঠলো মনে।
স্পন্দনদা-র দিকে তাকিয়ে মৈনাক নির্লিপ্তভাবেই উত্তর দিল, "এই তো গতকাল এসেছি।"
তারপর বেশ কয়েকবার সাধারণ কিছু প্রশ্ন-উত্তরপর্ব চলছিল।:হঠাৎ স্পন্দনদা মৈনাককে জিজ্জাসা করলো, "হ্যাঁ রে, তুই শহরের সরকারি বড়ো কলেজে ভর্তি হয়েছিস না?"
"হ্যাঁ দাদা।"
"ওখানে থাকছিস কোথায়?"
"ওখান থেকে কিছুটা দূরে আমার এক দূরসম্পর্কের পিসি থাকে। ওখানে থেকেই পড়াশুনা করছি এখন।"
"বাঃ! খুব ভালো। মন দিয়ে লেখাপড়া করো। অনেক বড়ো হও। টুকুন? আমাদের বুকুনও তো এবছর ওখানেই ভর্তি হয়েছে না?"
"হ্যাঁ, তুমি তো ঠিকই বলেছো।" টুকুন বলে উঠলো। "দেখি তো বুকুন কোথায় গেল। বুকুন?" বলে ডাকতেই পাপাই এগিয়ে এসে বললো, "দিভাই তো মিতুনদির সাথে বাড়ি চলে গেল।"
"সে কী রে? কাউকে না-বলেই! কেন রে, শরীরটরির খারাপ করলো নাকি?"
"আরে না-না বড়দিভাই, এত চিন্তা করিস না তো! ওর মাথা ধরেছে মনে হয়।"
"ও আচ্ছা-আচ্ছা। ঠিক আছে।" টুকুন বলে উঠলো, "তোর কথা এই বাড়িতে এসে অনেক শুনেছি রে পিন্টু! শোন, এই পুজোর ক'দিন তুই আমাদের বাড়িতেই আনন্দ করবি আর খাওয়াদাওয়া করবি।"
পিন্টু মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। সকলে ঠাকুর গাড়িতে তোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেল।
এদিকে আলোলিকার দমবন্ধ করা কান্না পাচ্ছিল।কিন্ত বুঝতে পাচ্ছিল না যে, কেন ওর এত কান্না পাচ্ছে! মৈনাককে দেখলেই কেন এত কান্না পায় ওর! আলোলিকার বিস্ময়কর আচরণের কারণ মিতুনও বুঝে উঠতে পারলো না। রাত্রে খাবার টেবিলেও মৈনাক ওরফে পিন্টুকে নিয়ে সকলে অনেক আলোচনা করছিল। স্পন্দনদা বললো, "সেই ছোট্টবেলা থেকে পিন্টুকে আমরা দেখছি। প্রত্যেকদিন দারিদ্রের সাথে কীভাবে লড়াই করেও ও পড়াশুনাটা চালিয়ে যাচ্ছে! ওর মতো মেধাবী ছাত্র আমাদের গোটা চত্ত্বরে আছে কিনা সন্দেহ। অথচ এই কিশোরবয়সে জীবনটা ওর কত জটিল! বাবা ছোট্টবেলায় ছেড়ে চলে যায়, তারপর থেকে ওর মা আর দাদু পটুয়াপাড়ায় সামান্য রোজগার করে অতিকষ্টে সংসারটা টেনে নিয়ে যাচ্ছে।"
আলোলিকা স্পন্দনদা-র সবকথাতেই হ্যাঁ-হ্যাঁ করে গেল। যেন একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে চলেছে। আজকে মৈনাকের জীবনের অজানা ঘটনা জানার পরে আলোলিকা যেন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছিল না। সে নিজেও বুঝতে পারছিল না যে, কেন ওর এত কষ্ট হচ্ছে! রাত্রে মিতুনদি-র কাছে অনেক চেষ্টা করেও সত্যিকথাটা বলতে পারলো না।

পরেরদিন ছিল সপ্তমী। সকালে নবপত্রিকা, কলাবউ স্নান করানোর মাধ্যমে পুজোর সূচনা হলো। ঠাকুরদালানে লোক গমগম করছে।। অলোলিকা চারিদিকটা একবার তাকিয়ে কী যেন খুঁজলো। কিন্তু দেখতে পেল না। সপ্তমী পুজো শেষ হলো। দুপুরে সকলে মিলে হইহই করে খাওয়াদাওয়া, আড্ডা চলতে লাগলো। পরেরদিন ভোর-ভোর উঠে স্নান করে সকলে তৈরি হয়ে নিল মহাষ্টমী পুজোর অঞ্জলি দেওয়ার জন্য। মিতুনদি খুব সুন্দর করে একটা শাড়ি পরিয়ে দিল আলোলিকাকে। সকলে ঠাকুরদালানে গিয়ে জড়ো হলো। আলোলিকা, মিতুন, বাড়ির অন্যান্য মেয়েরা পরপর সারি দিয়ে দাঁড়ালো অঞ্জলি দিতে। হঠাৎ আলোলিকা দেখলো, হলুদরঙের একটি পাঞ্জাবী পরে মৈনাকও এসেছে অঞ্জলি দিতে। ওর দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হলো। এদিকে স্পন্দনদা মৈনাককে হাত ধরে টেনে ঠাকুরের সামনে নিয়ে এল। "কালকে তুই আসিস নি কেন রে? আমরা সকলে অপেক্ষা করছিলাম।"
"আসলে দাদা, দাদুর শরীরটা ভালো ছিল না। তাই ডাক্তার, ওষুধ এসব করতেই দেরি হয়ে গেছিল।"
"সে কী রে! তুই একবার আমাকে বলতে পারতিস?" "তোমরা তো সবসময়ই করছো। আজকে আমি যখন আছিই, তখন এই পুজোর দিনে তোমাদের বিরক্ত করবো ভেবে আর..."
"খুব বেশি বড়ো হয়ে গেছিস নাকি পিন্টু? নিজে তো স্কলারশিপের টাকায় পড়িস বলে কোনো সাহায্যই নিস না। তাই বলে মোহনকাকার জন্যও বলবি না? আর কখনও এরকম করিস না পিন্টু।"
"ঠিক আছে দাদা! আমার ভুল হয়ে গেছে।"
ঠাকুরমশাই সবাইকে হাতে ফুল-বেলপাতা নিতে বললেন। পিন্টুই ফুলের সাজি সবাইকে বাড়িয়ে দিচ্ছিল। ফুল নিতে গিয়ে হঠাৎ ভিড়ের মধ্যেই আলোলিকার হাতটা মৈনাকের গায়ে লেগে যায়।।আলোলিকা স্যরি বলতে গিয়েও বলতে পারে না। পুজো শেষে, প্রসাদ খাওয়া হয়ে গেলে,বস্পন্দনদা পিন্টুকে ডেকে বলে, "দ্যাখ, বুকুনকে চিনিস? ও তো তোদের কলেজেই পড়ে। অবশ্য ওর ভালো নাম আলোলিকা। পরিচয় হয়েছে?"
"আসলে দাদা, আমি তো সবেই ভর্তি হয়েছি। সেভাবে কারোর সাথে আলাদা করে পরিচয় হয়নি।"
"আচ্ছা দাঁড়া, আমি এখনই ওকে ডাকছি। পাপাই, তোর দিদি কোথায় রে?"
"কী জানি! এখানেই তো ছিল!
"মিতুন? বুকুন কোথায় রে?"
"ওর শরীরটা মনে হয় ভালো নেই। ভোরে স্নান করায় মনে হয় জ্বর এসেছে। আমি ওকে প্যারাসিটামল দিয়ে এসেছি।"
মুহূর্তে পিন্টু যেন কেমন অস্থির হয়ে উঠলো। সকলে যখন ব্যস্ত তখন দোতলার সিঁড়ি দিয়ে উঠে বারান্দার পাশের ঘরটার দিকে ছুটে গিয়ে দ্যাখে বুকুন ঘুমিয়ে আছে। সময় নষ্ট না-করে ছোট্ট একটি হাতে) গড়া পুতুল রেখে আসে বুকুনের মাথার কাছে। তাতে একটি কাগজ আটকানো ছিল, যাতে লেখা ছিল "সুস্থ হয়ে ওঠো। ভালো থেকো।"
বুকুন তন্দ্রার মধ্যেও সেদিন আবছা-আবছা দেখেছিল মৈনাককে। একচোখে তার জল, আর একচোখে হাসি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল তার খাটের ঠিক পাশে। অনেক কিছু বলার আছে, বলতে চায় সে,কিন্তু ভীষণ কান্নায় যেন গলা বুজে আসে!

রায়পুর থেকে সেবার ফিরে আসার পরে আর একবারই সে মৈনাককে দেখেছিল। মৈনাক কলেজে এসেছিল টিসি নিতে। পরে অন্য বন্ধুদের কাছে খোঁজ নিয়ে সে জানতে পারে, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সুযোগ পেয়ে সে অন্য রাজ্যে চলে গেছে পড়াশুনা করতে। ফোন নম্বর যোগাড় করার অনেক চেষ্টা করেছিল সে, কিন্তু পারেনি। মৈনাকদের রায়পুরের বাড়িও বিক্রি হয়ে যায় হঠাৎ করেই। তারপর কেটে গেছে প্রায় দশ-দশটা বছর। সেই পুতুলটি আজও শোভা পায় আলোলিকার ঘরে। মৈনাকের হাতের লেখাটি আজও সে যত্ন করে রেখে দিয়েছে ডায়েরিতে। সেদিন যে-কথাগুলো বুঝে উঠতে পারেনি সে, আজ কিন্তু বুঝতে পারে। কিন্তু যে-কথাগুলো সে মৈনাককে সেদিন বলে উঠতে পারেনি, সেই কথাগুলো শুধু আজও রয়ে গেছে তার মধ্যে অব্যক্ত হয়ে।

   

                

Comments