প্রসঙ্গত

প্রথমেই বলে রাখা যাক, মুদ্রিত থেকে অনলাইন পত্রিকায় পরিণত হওয়ার পরে এটাই আমাদের প্রথম শারদ সংখ্যা। যদিও সাধারণত যাকে 'শারদ সংখ্যা' বলা হয়, তেমন প্রথাগত আয়োজন সম্পূর্ণভাবে আমরা এই সংখ্যার নির্মাণের ক্ষেত্রে করিনি। সেই কারণে আমরা অগ্রজ কবি প্রাণেশ সরকারের ধারাবাহিক আত্মজীবনীকে এই সংখ্যাতেও এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছি তৃতীয় পর্বের মাধ্যমে, অন্যান্য সংখ্যার মতোই। আমরা মনে করেছি, প্রথাগতভাবে শারদ সংখ্যার আয়োজন করতে গিয়ে আমরা যদি নিয়মিত এই বিভাগটিকে আবার পরের সংখ্যার জন্য তুলে রাখি, তাহলে পাঠকদের অহেতুক অপেক্ষা করানো হবে আরও একটি মাস। তাছাড়া কবির জীবনকাহিনি দ্বিতীয় পর্বের মতো এই পর্বেও এমনভাবে এগিয়েছে যে, দুর্গাপূজা-প্রসঙ্গ ঘুরেফিরে এসেছে বারবার। সেইদিক থেকে ভাবলে, এই ধারাবাহিকও পুজোর আবহকে সঙ্গত করছে তো বটেই। আর, প্রথাগতভাবে শারদ সংখ্যা সাজানো না-হলেও, দুর্গাপূজা নিয়ে বিশেষ আয়োজনেও আমাদের এই সংখ্যা সমৃদ্ধ হয়েছে। 'দেবীপক্ষ' নামের ব্যক্তিগত গদ্যের এই বিশেষ বিভাগে মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজন্মের লেখকেরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেছেন তাঁদের দুর্গাপূজা-বিষয়ক স্মৃতি, আবেগ, সুখদুঃখের কথামালা। সঙ্গে থাকছে একগুচ্ছ কবিতা এবং গল্প। বিশেষভাবে বলার বিষয় হলো, এবারের গল্প ও কবিতার মধ্যেও বেশ কয়েকটির অনুষঙ্গ ও উপাদান হয়ে এসেছে দুর্গোৎসব। সেইদিক থেকে, তাদেরও 'পুজো স্পেশাল' হিসেবে ভাবলে মন্দ কী! এইসব আবহের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই আমাদের এবারের প্রচ্ছদেও মা দুর্গা-র চিরউজ্জ্বল উপস্থিতি।

অতএব ঘোষিত 'শারদ সংখ্যা' না-হোক, মুক্তধারা অনলাইন পাঠকের দরবারে হাজির হচ্ছে একটি বিশেষ সংখ্যা নিয়েই; যাকে আমরা দুর্গাপূজা ১৪৩০ সংখ্যা  বলে উল্লেখ করছি। সংখ্যাটি যখন প্রকাশিত হচ্ছে, তখন পঞ্চমীর রাত গড়িয়ে যাচ্ছে ষষ্ঠীর দিকে। এই পঞ্চমী ও ষষ্ঠীকে 'মহাপঞ্চমী' ও 'মহাষষ্ঠী' বলা যায় কিনা, বলা না-গেলে কী বলা যায়, বললেই-বা কী ভুল বলা হয়— এইসব কূটতর্কে আমাদের আগ্রহ নেই। "আমার দুর্গা অমুক আর তোমার দুর্গা তমুক"-জাতীয় কাব্য করাতেও আমাদের আগ্রহ নেই। কারণ, দুর্গা আমার বা তোমার হয় না; দুর্গা আরাধ্যা দেবী—বাঙালির ঘরের মেয়েতে পরিণত হয়েও তিনি যুদ্ধ আর শক্তির দেবী—আমাদের বিশ্বাসে, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে তিনি সবার। আমরা শুধু জানি, বাঙালির সবচেয়ে বড়ো উৎসবের জন্য মানুষ মুখিয়ে থাকে। যদিও অনেক জায়গায় আজকাল তৃতীয়া-চতুর্থী থেকেই উৎসব শুরু হয়ে যায়! আর হবে নাই-বা কেন? ব্যক্তিবিশেষের খেয়ালখুশিতে ইদানীং যেভাবে দেবীপক্ষ আসার আগেই দুর্গাপূজার উদ্বোধন হয়ে যায়, তাতে আমাদের ষষ্ঠী থেকে দশমী—এই পাঁচদিনের পুজো, এইরকম ভাবার খুব একটা অবকাশ তো আর নেই! তবুও সমস্তরকম অপ্রাপ্তি-হতাশা-দুর্ভাবনা-দুর্দশাকে একটু পাশে সরিয়ে রেখে, আগামী পাঁচদিন উৎসবকে নিজের মতো করে স্বাগত জানানোই মুক্তধারা অনলাইন-এর অভীষ্ট। আমাদের সকল প্রিয়জন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের শারদ উৎসবের শুভেচ্ছা। 

~ রাহুল ঘোষ
১৯ অক্টোবর ২০২৩ | ১ কার্তিক ১৪৩০
দুর্গাপঞ্চমী


প্রচ্ছদ ছবি-ঋণ : সোনাল ঠাকুর 



Comments