প্রসঙ্গত

শীত এবার বড়ো দীর্ঘস্থায়ী। তেমনই তীব্র তার অভিঘাত। সেই তীব্রতা এতটাই যে, বঙ্গভূমির ঠিক মধ্যভাগে বসে এই সম্পাদকীয় লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে, উত্তর অথবা উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনো পাহাড়ি এলাকায় পৌঁছে গিয়েছি! নিদেনপক্ষে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশের পাহাড় অথবা তরাই অঞ্চলের মতো তো বটেই! মধ্যবঙ্গের জনপদে এইরকম কড়া শীত পড়তো আমাদের শিশু-কিশোরবয়সে। তারপর কোথায় যেন উধাও হয়ে গিয়েছিল! হয়তো-বা উষ্ণায়ন আর দূষণের ফলশ্রুতিই হবে। নির্বিচারে গাছপালা কেটে ফেলা, জলাভূমি ভরাট করে ফেলার মতো দুষ্কর্মগুলো তো মানুষ-ই করে। আরও বেশি দূষিত হয় আমাদের চারপাশ। কিন্তু গত তিন-চারবছর ধরে দেখছি, ছোটোবেলার পরিচিত সেই শীত যেন আবার ফিরছে। তার মানে দূষণ যে কমে যাচ্ছে, তা কিন্তু নয়! বরং বাড়ছে প্রতিদিন। সব মিলিয়ে মানুষের অবস্থা এখন শাঁখের করাতে পড়ে যাওয়ার মতো।  

পৌষ পেরিয়ে মাঘের শীতার্ত এই আবহে অবশ্য এবার উত্তাপের আঁচ এনে দিচ্ছে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের নব-উন্মোচনের উন্মাদনা। রাম-জন্মভূমি ও মন্দির নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, পক্ষে-বিপক্ষে রাজনৈতিক প্রচার, আইনি লড়াই ইত্যাদিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বহুকাল কাটিয়ে দিয়েছে দেশের মানুষ। আজও সেই বিতর্কের বিরাম নেই। কিন্তু রাম মন্দির নির্মাণের পক্ষ, বিপক্ষ এবং নিরপেক্ষ—যে-কোনো অবস্থানেই যে-কোনো মানুষ থাকুক-না কেন; আজকের এই উন্মাদনা স্পর্শ করেনি, এমন মানুষ আজ দুষ্প্রাপ্য। কেন রামচন্দ্রকে 'ভারতের আত্মা' বলা হয়, তার উত্তর বোধহয় এর মধ্যেই পাওয়া যায়। রামকে স্বীকার করুন বা অস্বীকার, তাঁর ভাবমূর্তিকে পছন্দ করুন বা অপছন্দ, রামকে ঐতিহাসিক চরিত্র হিসেবে দেখুন বা কল্পিত চরিত্র হিসেবে; তাঁকে এড়িয়ে যাওয়ার বা ইগনোর করার ক্ষমতা কারও নেই। ভারতীয় ভাবনাচিন্তার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে রাম মিশে আছেন। তিনি প্রকৃত অর্থেই 'ইমাম-এ-হিন্দ'। তাই রাম মন্দিরকে কেন্দ্র করে সাধারণ জনমানসে এই উচ্ছ্বাস অত্যন্ত স্বাভাবিক। রাজনীতির পক্ষ-বিপক্ষভিত্তিক সীমাবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে এই উচ্ছ্বাসকে মাপা যাবে না। আর এও কি নেহাতই কাকতালীয় যে, ঠিক এখনই ভারতীয়দের দেশচেতনায় মাহাত্ম্যপূর্ণ বার্ষিক দিনগুলোর মধ্যে দুটি দিন কড়া নাড়ছে এ-বছরের দরজায়? ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু-র জন্মদিবস আর ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস আমাদের ভারত-ভাবনা ও দেশচেতনাকে দৃঢ়তর করুক, সদর্থক ভাবনার যে-কোনো মানুষের এই প্রার্থনা তো থাকবেই। 

এবারের সংখ্যায় আবহাওয়ার সঙ্গে সঙ্গতি ফুটিয়ে তোলা দুটি ছবির মাধ্যমে মুক্তধারা অনলাইন  ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে ফটোগ্রাফি বিভাগ। সঙ্গে একটি গল্প, একগুচ্ছ কবিতা এবং আত্মজীবনীর ধারাবাহিকটি তো আছেই। আর আছে দুটি বিপরীত স্বাদের দুটি মুক্তগদ্য। অন্যান্য সংখ্যার মতো এই সংখ্যাটিও পাঠকপ্রিয় হবে, এই আমাদের আশা।
~ রাহুল ঘোষ
২২ জানুয়ারি ২০২৪

প্রচ্ছদের ছবি-ঋণ : মারিয়া বুদানোভা / আনস্প্ল্যাশ

Comments