প্রসঙ্গত

২০২৪-এর ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ বুদ্ধিজীবীর মুখোশ একদম খুলে দিয়েছে। এমনিতে তো আমাদের রাজ্যের বুদ্ধিজীবীদের অধিকাংশই সিলেক্টিভ প্রতিবাদী। গত ১২-১৩ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় ঘটে যাওয়া কোনো অপরাধই তাঁদের চোখে পড়ে না। অথচ উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, আসাম, মণিপুর...দেশের প্রায় প্রত্যেক রাজ্যেই কোনো অন্যায় ঘটলেই তাঁরা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠতে ভোলেন না। এখানে 'প্রায়' শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ। শুধু কি তাই? প্যালেস্টাইন, ইউক্রেন হোক অথবা অন্য যে-কোনো দূরদেশ...বিশ্ব-সংসারের কোথাও তাঁদের মনের মতো সমস্যা দেখা দিলেই, তাঁদের হাত থেকে আর রেহাই নেই! মিটিং-মিছিল-প্রতিবাদসভা ইত্যাদির আয়োজন করে তাঁরা নিজেদের কর্তব্যপালন করেন। তা বেশ করেন! যদিও সেই কর্তব্যপালনের মধ্যেও তাঁদের সুবিধাবাদী অভিসন্ধিটি বোঝা যায়; তবু বেশ করেন! কিন্তু এই রাজ্যেরই একটি জেলা উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি নামক একটি জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে ঘটে চলা অন্যায়-অত্যাচার উন্মোচিত হতে থাকলেই তাঁদের মধ্যে অদ্ভুত নীরবতা নেমে আসে। তাঁদের বিবেক আর জাগ্রত হয় না; প্রতিবাদী কন্ঠ শুকিয়ে যায়। গলা দিয়ে আর আওয়াজ বেরোয় না! তাঁদের কলমের কালি ফুরিয়ে যায়, অথবা তাঁরা লিখতেই ভুলে যান! যেমন গত ১২-১৩ বছর ধরে এই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষমতাসীনের বিভিন্ন অপরাধ তাঁরা দেখেও দেখতে পাননি, ঠিক তেমন আর কী! ভারতে শুধু নয়, বিশ্বের কোথাও এমন নির্লজ্জতার নজির আর নেই। এই কারণেই 'বুদ্ধিজীবী' শব্দটি পশ্চিমবঙ্গে এখন গালাগালিতে পরিণত হয়েছে। কবি-লেখক-শিল্পী এবং তথাকথিত সমাজকর্মীরা সাধারণ মানুষের উপহাসের পাত্র-পাত্রী হয়েছেন। এই বাংলাবাজারের দলদাস মিডিয়া হারিয়ে ফেলেছে বিশ্বাসযোগ্যতা। তাতে অবশ্য তাঁদের কিছু যায়-আসে না। বরং তাঁরা দ্বিগুণ নির্লজ্জ হয়ে ওঠেন। বস্তুত, তাঁরা নিজেদের নীরবতার মধ্যে দিয়ে ক্ষমতাসীনদের আরও বেশি চাটুকার হয়ে ওঠার প্রতিযোগিতা চালান। তবেই-না সরকারি অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ, মঞ্চ, আলো, পুরস্কার, কলাটা-মুলোটা ঠিকঠাক পেতে থাকবেন! না-হলে তো নাম কাটা যাবে গুডবুক থেকে! একথা ঠিক যে, দল ও মত নির্বিশেষে সব ক্ষমতাসীন-ই আনুগত্য চায়। কিন্তু আজকের পশ্চিমবঙ্গে যেমন সেই আনুগত্য ও চুপ করে থাকাই যোগ্যতার আসল মাপকাঠি, তেমনটা আর কোথাও হয় না। একেই বোধহয় বলে, 'এগিয়ে বাংলা'!

অতএব বাগদেবীর আরাধনার দিন ও সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামাঙ্কিত তথাকথিত প্রেমদিবস এবার একসঙ্গে পড়ে যাওয়া নিয়ে কিছু স্বল্পস্থায়ী আবেগ-উচ্ছ্বাস, একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষাদিবস নিয়ে বাংলা ভাষাকে ভালোবাসার কিছু দেখানেপনা—কোনো কিছুতেই অধিকাংশ বঙ্গীয় বুদ্ধিজীবীর সচেতন অপরাধ এখন আর ঢেকে দেওয়া যাচ্ছে না। নেহাত মোটা চামড়ার না-হলে, যে-কোনো মানুষ-ই এইসব দেখে লজ্জিত-দুঃখিত-ক্রোধিত হবেন। পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী অনেকদিন আগেই তাঁদের গায়ের চামড়া মোটা করে ফেলেছেন। কিন্তু সব মানুষ নিশ্চয়ই তেমনটা পারেন না! এই আশা নিয়েই জারি থাকুক আমাদের পথচলা। 

প্রত্যেক সংখ্যার মতো, ফেব্রুয়ারির মুক্তধারা অনলাইন-ও বিভিন্ন আয়োজনে সমৃদ্ধ। আত্মজীবনী, কবিতা, গল্প, মুক্তগদ্য, চিত্রকলার লেখায়-রেখায়-রঙে পরিপূর্ণ এই সংখ্যাটিও আপনাদের প্রীতিধন্য হোক।
~ রাহুল ঘোষ
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

প্রচ্ছদ ছবি-ঋণ : ক্যাথেরিনা রোয়েলার / আনস্প্ল্যাশ 

Comments

  1. যথার্থ লিখেছেন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা 💐🙏🏻

      Delete

Post a Comment