প্রাণেশ সরকার


আগেই বলেছি, জয় গোস্বামী 'কবিকলম'-এ বেশ কয়েকবার কবিতা লিখেছে। আমি বাদকুল্লার রানি ভবানী পাঠাগারে একবার কবিসম্মেলনের আয়োজন করেছিলাম। নদীয়া এবং অন্য জেলা থেকেও কবিরা কবিতাপাঠ করতে এসেছিলেন। জয়ও এসেছিল। এই কবিসম্মেলনেই জয় গোস্বামী জীবনে প্রথম জনসমক্ষে কবিতাপাঠ করে এবং বিপুল হর্ষধ্বনিতে অভিনন্দিত হয়। রানাঘাটের চন্দন মুখোপাধ্যায়ও জনসমক্ষে প্রথম কবিতা পড়েছিল এখানে। চন্দন কবিতা ছাড়া ছোটোগল্পও লিখতো। অকালে প্রয়াত হয় এই সম্ভাবনাপূর্ণ লেখক। ওর মৃত্যুর দুই-তিনবছর পরে রানাঘাটের আহেলি ভবনে চন্দন মুখোপাধ্যায়ের নির্বাচিত ছোটগল্প প্রকাশিত হয়। জয় গোস্বামী কলকাতা থেকে এসে গ্রন্থটি প্রকাশ করে এবং চন্দনকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে। এই অনুষ্ঠানেই চন্দনের স্ত্রীর সঙ্গে অনেকবছর পরে আমার দেখা হয় ও কিছু কথা হয়। মনে পড়ে, রানাঘাটে চূর্ণী নদীর পাশে স্ট্র‍্যান্ড রোডে চন্দনের বাড়িতে কতবার গিয়েছি। তখনও সে বিয়ে করেনি, তবে রানাঘাটেরই এক তরুণীর সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ওদের বিয়ে হয়। চন্দন সিদ্ধান্তপাড়ায় (কবি গোবিন্দ চক্রবর্তীর বাড়িও ছিল এই পাড়ায়) ভাড়াবাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে উঠে আসে। আমি সেই বাসাতেও গিয়েছি। অসামান্য কণ্ঠসম্পদের অধিকারী ছিল তরুণ এই কবি। বেশ কিছু নাটকে সে অভিনয়ও করেছিল। এক ওষুধ কোম্পানির সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ ছিল সে। অনেক কষ্ট করে লোন নিয়ে নিজের বাড়িও করে। আমি সে-বাড়িতেও গিয়েছি। ওর মৃত্যুর একসপ্তাহ আগে এক পড়ন্ত বিকালে কৃষ্ণনগর রেলস্টেশনে এক টি-স্টলে ওর সঙ্গে আমার শেষ দেখা ও কথা হয়েছিল। চন্দনকে আমি এখনও খুব মিস করি। কী সুন্দর হাসাতে পারতো ছেলেটা!

রানাঘাটে প্রখ্যাত কবি গোবিন্দ চক্রবর্তী থাকতেন। কৃষ্ণনগর কলেজে ফার্স্ট ইয়ারের শেষের দিকে, লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে ট্রান্সফার নিয়ে রানাঘাটের একটি মেয়ে দর্শনের অনার্সে ভর্তি হয়। আমি কবিতা লিখি শুনে সে আমাকে কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি পুরোনো সাহিত্যপত্রিকা পড়তে দেয়। কে নেই সেখানে! বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু, সঞ্জয় ভট্টাচার্য, জীবনানন্দ দাশ, অরুণ মিত্র, কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, অশোকবিজয় রাহা, গোবিন্দ চক্রবর্তী এবং আরও অনেকে কবিতা লিখেছেন সেই কাগজে। মনে পড়ে, সেখানে গোবিন্দ চক্রবর্তীর 'লক্ষ্মীপূর্ণিমা' শিরোনামে একটি অসাধারণ কবিতা ছিল। আমি একদিন আমার লেখা কিছু কবিতা নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করি। ভাস্বতী আমাকে ওদের বাড়ির পথনির্দেশ আগেই জানিয়েছিল। সময়টা লক্ষ্মীপুজোর পর। অত বড়ো কবি তিনি। আমার মতো সদ্যতরুণের কাঁচা লেখা যত্ন করে আমার সামনেই পড়লেন এবং কয়েকটি কবিতার ক্ষেত্রে কিছু মূল্যবান পরামর্শও দিলেন। তাঁর এই মহানুভবতা কোনোদিন ভুলবো না। এর বছরখানেক পরে রানাঘাট রবীন্দ্রভবনে গোবিন্দবাবুর উদ্যোগে এবং রানাঘাট পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় একটি কবিসম্মেলন হয়। কবি মণীন্দ্র রায় এসেছিলেন কবিতা পড়তে। কী রূপবান মানুষ! গ্রিক ভাস্কর্য থেকে সরাসরি নেমে এসেছেন যেন! নামী কবিদের সঙ্গে আমি, জয়, চন্দনও কবিতা পড়েছিলাম। মনে আছে, আমি মঞ্চে উঠতেই চন্দন ও জয় দর্শকাসন থেকে চিৎকার করে বলে উঠেছিল, "প্রাণেশদা, 'মেলা' কবিতাটি পড়ুন।" পড়েছিলাম। কিছুদিন আগেই 'কবিকলম' পত্রিকায় কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল। চন্দনের খুব ভালো লেগেছিল কবিতাটি। তাই এই অনুরোধ। আমার দুর্ভাগ্য, কবিতাটি হারিয়ে ফেলেছি। ২০০০ সালের বন্যায় 'কবিকলম'-এর সব কপি, আমার পাণ্ডুলিপি—সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। স্মৃতিতেও নেই কবিতাটি।

প্রথম যৌবন থেকেই কৃষ্ণনগর এবং রানাঘাট শহরদুটিতে আমার খুবই যাতায়াত ছিল। কৃষ্ণনগর তো আমার উচ্চশিক্ষা-অঙ্গন এবং পরবর্তীতে কর্মস্থল। কৃষ্ণনগরের কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ক্রমশ দানা বেঁধেছে এবং সেই নিগূঢ় সম্পর্ক অদ্যাবধি বর্তমান। রানাঘাটের কবি গোবিন্দ চক্রবর্তী এবং নিজন দে চৌধুরী —দু'জনেই বয়সে প্রবীণ অথচ তরুণ লেখককুল-ই ছিল তাঁদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমি জয়কে ঘন্টার পর ঘন্টা নিজনদা-র সঙ্গে কথা বলতে ও রাস্তায় হাঁটতে দেখেছি। গোবিন্দ চক্রবর্তীর বাড়িতেও জয়কে দেখেছি। গোবিন্দবাবু টেলিকমিউনিকেশন বিভাগে কর্মরত ছিলেন। কলকাতার কেন্দ্রীয় অফিসে তাঁর চাকরি, অথচ অফিস না-গিয়ে মাসের পর মাস তিনি বাড়িতে বসে থাকতেন! তিনি ভাবতেন, অফিস যাওয়ার পথে যদি তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন! এই নিয়ে খুব প্যানিক করতেন। ওঁর বড়োমেয়ে ভাস্বতী, আগেই বলেছি, কলেজে আমার সতীর্থ ছিল এবং ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। খুবই মেধাবী ছাত্রী, কিন্তু সংসারের প্রতিকূল অবস্থায় মানসিকভাবে খুবই ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ছিল ক্রমশ। রানাঘাটের এক যুবকের সঙ্গে ওর প্রণয়সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল; কিন্তু কথা বলে বুঝতাম সেক্ষেত্রেও বেশ গন্ডগোল চলছে। যাইহোক, কলকাতার মুখ্য ডাকঘরে চাকরি পেয়ে ও বেঁচে যায়। শ্যামবাজারে ওয়ার্কিং উওমেন্স হস্টেলে থাকতো। বাড়ির প্রতি দায়দায়িত্বও পালন করতো সে। অনেকগুলো ভাইবোন। সবাই পড়াশোনায় ভালো। ওর পরের বোন বাসবী ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাম্মানিক স্নাতক হয়ে হস্টেল থেকে বাড়ি চলে আসে এবং কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সোশিওলজি-তে মাস্টার্স করে। কবি ভাস্কর চক্রবর্তীর সঙ্গে বাসবীর বিয়ে হয় কলকাতায় ওর মামার বাড়িতে। প্রখ্যাত ফুটবলার গৌতম সরকারের সঙ্গে বাসবীর মামাতো দিদির বিয়ে হয়। বাসবীর বিয়ের আগেই অবশ্য ওর পরের বোন বুলনের বিয়ে হয় হাওড়ার ব্যবসায়ী সুজনের সঙ্গে। এদের পরে আরও দুই বোন মানি ও কুইটা এবং ভাই নীলাঞ্জন। নীলাঞ্জন খুবই মেধাবী ছাত্র; কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্যাটিসটিক্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। সে সরকারি কলেজে পড়ায়। ভালো কবিতা লিখতো নীলাঞ্জন। কবি শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে তার পত্রালাপ ছিল। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও সে তার বাবার কবিতার কোনো বই প্রকাশ করেনি। গোবিন্দবাবু ম্যানেনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে রানাঘাটের আনুলিয়া হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বুলন ও বাসবীর পরে শোভাবাজারের রাজবাড়ির জনৈক বংশধরের সঙ্গে ভাস্বতীর বিয়ে হয়। শুনেছি, ভদ্রলোক কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করেন। চূড়ান্ত মদ্যপ। ওদের একটা মেয়ে আছে। সে এখন আমেরিকায় থাকে। তার স্বামী ইঞ্জিনিয়ার। ভাস্বতীর সঙ্গে ওর স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। সে এখন দমদমের কাছে কোথায় এক ফ্ল্যাট কিনে একাই বসবাস করে। ডাকঘরে কিছুদিন চাকরি করার পরে সে উত্তর কলকাতার একটা উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছিল। বর্তমানে রিটায়ার্ড।

জয় গোস্বামী তখনও 'দেশ' পত্রিকার সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটরের চাকরি পায়নি। একদিন সে আর তার বন্ধু গৌতম মুখোপাধ্যায় আমার বাড়ি এসে জানালো, সাহিত্য অকাদেমির ইংরেজি মুখপত্র Indian Literature-এর সম্পাদক অধ্যাপক কে সচ্চিদানন্দন জয়ের কিছু কবিতার ইংরেজি অনুবাদ চেয়েছেন, আমি যদি করি সেই অনুবাদ। আমি জয়ের 'উদ্ভিদ' ও 'সৎকারগাথা' কবিতা দুটির অনুবাদ (The Frozen Plant এবং The Funeral Song) করে ওর হাতে তুলে দিই। যথাসময়ে ওই অনুবাদ 'ইন্ডিয়ান লিটারেচার'-এ প্রকাশিত হয়। ওরা আমাকে কবিতা দুটির অফপ্রিন্ট এবং পারিশ্রমিক হিসাবে একহাজার টাকার চেক পাঠিয়ে দেয়। পত্রিকার পরিশিষ্টে যথারীতি আমার পরিচিতিরও বিশদ উল্লেখ থাকে। এরপরেও জয়ের অনুরোধে আমি ওই কাগজের জন্য ওর দীর্ঘ কবিতা 'সবচেয়ে উঁচু তারাকে আমি বলি' ইংরেজিতে অনুবাদ করি (To The Remotest Star I Speak)। আমার এই অনুবাদটিও খুবই মর্যাদার সঙ্গে ছাপা হয়। পরবর্তীতে ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট তাদের ভারতীয় কবিতার Signatures শীর্ষক সংকলনে আমার করা জয় গোস্বামীর উল্লিখিত তিনটি কবিতার অনুবাদই অন্তর্ভুক্ত করে; অথচ অদ্ভুত ব্যাপার, আমাকে কিছুই জানায় না। আমাকে জানায় তমাল অর্থাৎ কথাসাহিত্যিক তমাল বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন আমি ওই সংকলনটি কিনে নিই। এরপরে জয়ের সঙ্গে আমার আর তেমন সংযোগ থাকে না। ওই লিটল ম্যাগাজিন মেলায় কখনও রবীন্দ্রসদন প্রাঙ্গণে, কখনো-বা ওকাকুরা ভবনে অথবা কলকাতা বইমেলায় কালেভদ্রে ওর সঙ্গে দেখা হয়েছে; স্বাভাবিক সৌজন্য-বিনিময়ও হয়েছে। শেষ দেখা হয়েছিল যখন সে নদীয়া জেলা বইমেলার সেমিনার হলে বক্তৃতা দিতে এসেছিল। পিছনে বসেছিলাম। আমাকে দেখে সামনের সারিতে বসতে বলে। তারপর থেকে আর যোগাযোগ নেই। কলকাতায় পাকাপাকিভাবে চলে যাওয়ার পরে প্রায়ই ফোন করতো। আমিও দুই-তিনবার করেছিলাম। এখন সেই সংযোগও নেই।

রানাঘাটের অন্যান্য কবিদের মধ্যে আমার সঙ্গে আলাপ ছিল লক্ষ্মণচন্দ্র মল্লিকের। 'নবদিশারী' নামে একটি সাহিত্যপত্রিকা করতেন তিনি। 'নবদিশারী'-কে কেন্দ্র করে একটা সুন্দর পরিমণ্ডল গড়ে উঠেছিল তরুণ কিছু কবির মধ্যে। যেমন— সুমিতেশ সরকার, রাজেশ দাস, অনিল দাস (প্রয়াত), স্নেহাংশু আচার্য প্রমুখ। সুমিতেশ-ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে এ-পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। কলকাতায় গিয়ে কবি হিসাবে সে সুখ্যাতি পেয়েছিল। আর, স্নেহাংশু আচার্য-র সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সখ্যতা ছিল। সে আমাকে 'প্রাণেশদা' বলেই ডাকতো বরাবর। রুচিসম্পন্ন, সূক্ষ্ম বোধের মানুষ সে; সুগভীরভাবে আধ্যাত্মিক। পঞ্চকেদার পরিক্রমাকালে তার অনুরোধে প্রত্যেকটি মন্দিরের কাছ থেকে একটি করে মোট পাঁচটি পাথরখণ্ড তাকে আমি এনে দিয়েছিলাম। শিবজ্ঞানে সে তাদের পুজো করতো। স্নেহাংশু আমার বড়োভাগ্নের স্ত্রীর অকালপ্রয়াণে তার পারলৌকিক কাজের সময় আমার উত্তর সুরভিস্থানের ভদ্রাসনে এসেছিল। স্নেহাংশু ভালো কবিতা লিখতো। লিখতো কম। প্রকাশ করতো আরও কম। তার অকালপ্রয়াণের পরে রাজেশ দাস স্নেহাংশুর কবিতার বই প্রকাশ করে। স্নেহাংশু মৃত্যুর আগে রাজেশকে পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করে দিয়ে গিয়েছিল। বইটির নাম প্লাবন এলে শীত চলে যায় । আমি বইটি সাগ্রহে সংগ্রহ করে বেশ কয়েকবার আদ্যোপান্ত পড়েছি। অসাধারণ কবিতা সব! আফসোস, জীবিত অবস্থায় স্নেহাংশু বইটি দেখে যেতে পারলো না। আমাদের বাদকুল্লার কবি মধু বিশ্বাস-কে নিয়ে একটি অসামান্য কবিতা আছে বইটিতে। মধু আমারও বন্ধু ছিল। কবিতা লিখতো। 'শঙ্খচিল' নামে একটা কবিতার কাগজও সে চালিয়েছিল কিছুদিন। ভালোবেসে বাদকুল্লারই এক প্রতিবন্ধী তরুণীকে সে বিবাহ করে। ওদের একটাই মেয়ে। মাঝেমাঝে মানসিক অবসাদে সে ভুগতো। খুব ভোরে 'সরকার' বলে হেঁকে উঠে সে যে কতবার আমার ঘুম ভাঙিয়েছে! হঠাৎই সে আত্মহত্যা করে। সেই মধুকে নিয়ে স্নেহাংশুর কবিতাটি এখানে উদ্ধৃত করছি।


কবির মৃত্যু
(কবি মধু বিশ্বাস স্মরণে)

মুহূর্তের ঘুম ছুঁয়ে শুয়ে আছো ঘুমের ভিতর
গোপন সে আর্তনাদ ছড়িয়ে রয়েছে শব্দহীন
অমল সকালে আজ সকলের মেঘ ঢাকা মুখে
শুধু কবিতার শব শবের উপরে সাবলীল।

কোথায় পালাবে বলো ঢেউয়ের মাথায় মাথায়
আমৃত্যু সংগ্রামে তুমি পাওনি আয়ুর অধিকার
প্রতিশ্রুতি ছিল, ছিল মায়াময় অখণ্ড আকাশ
তবু ধমনীতে ছিল অভিমানে শানিত বিষাদ।

প্রিয় নারী ঢেউ তুলে ভাবে শুধু বন্য সহবাস
মিথুন মূর্তির নিচে খড়কুটো তার কবিতার
একথা বুঝেছিলো সে, তাই তার গোলাপি যুগলে
আজও লেগে আছে দাঁত ও ঠোঁটের আমূল সম্ভার।

আমি আমার বন্ধু মধু ও ভ্রাতৃপ্রতিম বন্ধু স্নেহাংশুকে খুব মিস করি। মৃত্যুর মিছিলের ভিতর দিয়ে চলছে জীবন। আমিও কত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বেশকিছু কবিতা লিখেছি; যেমন আমার মা-র মৃত্যুর পরে লিখেছিলাম একটি এলিজি, তার কিছুটা উদ্ধৃত করছি এখানে—
"মৃত্যু কি লাবণ্যের ঢেউ, গহীন আঁধারে কারো স্তব
সৌম্য ও সুনিশ্চিত শূন্যের দোলা?
আর সেই শূন্যে, ইথারে ভাসমান তিনি
যেন ফুটে আছে ফুল।"

নিজনদা (কবি ও অধ্যাপক নিজন দে চৌধুরী)-র সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক ছিল। তাঁর বাড়িতে আমি একাধিকবার গিয়েছি। ওঁর ভাই প্রীতম ছিল আমার ভ্রাতৃপ্রতিম বন্ধু। আমি আমার কবিতার বই আমি আবার কথা বলছি কবি উত্তর বসু ও কবি বীরেশ ঘটকের সঙ্গে কবি নিজন দে চৌধুরীকেও উৎসর্গ করেছিলাম। বাড়িতে গিয়ে ওঁর হাতে বইটি তুলে দেওয়ায় খুশি হয়েছিলেন খুব। মনে পড়ে, রানাঘাটে ঘরোয়া কবিতাপাঠের এক আসরে আমার 'হে নিদাঘ, হে কদম্ব' কবিতাটি শুনে প্রকাশ্য সভায় ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। খুবই বড়োমাপের কবি ছিলেন তিনি। 'দেশ' পত্রিকার যে-সংখ্যায় জীবনানন্দ দাশের কবিতা শেষবারের মতো প্রকাশিত হয়েছিল, সেই সংখ্যাটিতেই তরুণ কবি নিজন দে চৌধুরীর কবিতা প্রথমবার ওই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। জেলা ও কলকাতার অসংখ্য কাগজে সারাজীবন লিখেছেন। ছন্দে ছিলেন দক্ষ ও সাবলীল। কী এক অজ্ঞাত কারণে, তাঁরই মাস্টারমশাই কবি গোবিন্দ চক্রবর্তীর মতোই, তিনিও কলকাতার প্রাতিষ্ঠানিক কাগজটির আনুকূল্য লাভ করেননি। তাঁর বই প্রকাশ করতে এগিয়ে আসেনি কেউ। ব্যতিক্রম শুধু শব্দহরিণচিত্রদীপ—এই দুই প্রকাশনালয়, যারা তাঁর দুটি বই প্রকাশ করেছিল প্রায় তাঁর শেষজীবনে। চিত্রদীপ থেকে প্রকাশিত তাঁর যাও পরম্পরা যাও কবিতাগ্রন্থটির পাণ্ডুলিপি প্রণয়নে কবি প্লাবন ভৌমিক ও কবি সুমিতেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বইটি তাঁদের-ই উৎসর্গ করেছিলেন তিনি। এই বইটির মধ্যে আমার সবচেয়ে ভালোলাগা কবিতাটি এখানে উদ্ধৃত করছি, যাতে পাঠক নিজন দে চৌধুরীর কবিতার স্বাদ অন্তত কিছুটা হলেও পেতে পারেন।

বৈষ্ণবী

সাঁকো যেমন পলকা, নদী
                  তেমনি খরস্রোতা।
একবারটি পা ফসকালে
                    ছিটকে যাবো কোথায়!
গহীন নদী অথই, তার
                   বাঁও মেলে না, তাই
কাজ নেই পার হয়ে আমার,
                     ঘরকে ফিরে যাই।
দিন ডুবছে, দ্যাখে হোথায়
                    রোগা দুবলা কবি
সাঁকোর পাশে দেঁইড়ে আছে
               খলবলে বৈষ্ণবী।
এই গহীনে শীর্ণ দু-পা
                  ফসকালে কী হবে?
বৈষ্ণবী চোখ মটকে ডাকে :
                    সাঁতার শেখো তবে!

একবার পঁচিশে ডিসেম্বর কৃষ্ণনগর রোমান ক্যাথলিক গির্জা আয়োজিত কবিতাপাঠের আসরে নিজনদা নিজের কবিতাপাঠের আগে কবি গোবিন্দ চক্রবর্তীর 'বড়দিন' কবিতাটি পাঠ করেছিলেন। বাড়ি ফেরার সময়ে একসঙ্গে এসেছিলাম। কৃষ্ণনগর রেলস্টেশনে নিজনদা অনেক কথা বলেছিলেন গোবিন্দ চক্রবর্তীর কবিতা নিয়ে। আমি 'বড়দিন' কবিতাটি সম্পূর্ণ উদ্ধৃত করছি এখানে। পাঠক একটা ধারণা করতে পারবেন তাঁর কবিতা সম্পর্কে।

বড়দিন

গ্রামের গির্জার পথে,
বুড়ো যোসেফের সঙ্গে যখনই দেখা হয়,
এই একটি কথাই তাকে
বারবার জিজ্ঞাসা করি :
আচ্ছা, ভাই যোসেফ!
গির্জায় তো রোজই ঘন্টা বাজে,
কিন্তু,
প্রভুর পুনরাবির্ভাবের আর কত দেরি?

বাটালির মাথায় হাতুড়ি ঠুকতে ঠুকতে—
কাঠের টুকরো থেকে
মুখ না তুলেই
রোজই, একই উত্তর দেয় সে :
সবুর করুন,
বড়দিনটা আগে আসুক।

দেখতে দেখতে
কঠিন তুষারপাত শুরু হয়
গাছে গাছে সকরুণ পাতা ঝরে,
গান ভুলে যায় পাখি,
নদীও শিউরে হয়ে যায় এতটুকু।

সারা দুনিয়ায় ক্যাথিড্রালে ক্যাথিড্রালে
প্রভুর শুভ আগমনবার্তা সূচিত হতে থাকে।
অনেক, অনেক ডিসেম্বরের মাইলস্টোন পেরিয়ে
বয়স বাড়ে পৃথিবীর,
বয়স বাড়ে আমার।

কিন্তু গ্রামের বুড়ো যোসেফ
অক্ষয় বটের মতোই অবিচল।
এবং, তেমনি অবিচল প্রত্যয়ে
সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি করে :
সবুর করুন,
বড়দিনটা আগে আসুক।

আজ আরেকটি বড়দিন।
আজও দেখা হয়েছিল আমার যোসেফের সঙ্গে।
কিন্তু আজ, আজই বোধহয় পেয়েছি
সবচেয়ে সাফ জবাব :
আজকেই কাঠের টুকরো থেকে
মুখ তুলে,
যোসেফ প্রধানত রূঢ়স্বরে বলল :
কেন বারবার একই কথা জিজ্ঞাসা করেন?
যদিও গোটা পৃথিবীটাই আজ একটা আস্তাবল,
তবু যিশু কোথায় আসবেন?

সেই স্বর্গীয় শিশুর শয্যারচনার জন্যে
স্তেপির বিস্তীর্ণ প্রান্তরেও কি মিলবে
এমন একমুঠো শুকনো ঘাস,
যাতে কখনও ছিটে লাগেনি এক ফোঁটাও
রক্তের?

দিন তো কত বারই বড় হল।
সত্যিকারের মানুষের বড়দিন এল কই!

উপরে উদ্ধৃত কবিতাটি পাঠ করলেই পাঠক উপলব্ধি করবেন, কত বড়োমাপের কবি ছিলেন গোবিন্দ চক্রবর্তী।  তিনি ছিলেন এই বাংলায় সাহিত্য-রাজনীতির শিকার। এই ট্রাডিশন কিন্তু এখনও চলছে। কলকাতার কয়েকজন মাতব্বর কবি-লেখক যতদূর নিচে নামতে হয় ঠিক ততদূর-ই নামেন, যাতে অন্য কবিরা প্রকাশ্য আলোয় আসতে না-পারেন।

রানাঘাটের আর এক বিশিষ্ট কবি প্লাবন ভৌমিক। তিনি কৃষ্ণনগর কলেজের পদার্থবিদ্যার সাম্মানিক স্নাতক। কলেজে আমার একবছরের জুনিয়র। কর্মসূত্রে প্রথমে দুর্গাপুরে ও পরবর্তী সময়ে হলদিয়ায় ছিলেন। খুবই নির্জন স্বভাবের কবি। মগ্নচৈতন্যের কবি। তাঁর প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একসাথে স্নান, আমরা আমাদের, বাজে কাগজের কবিতা, শিকড়ের দূর কোলাহল ইত্যাদি। সঞ্জয় মৌলিকও রানাঘাটের বাসিন্দা। খুবই সম্ভাবনাময় তরুণ কবি। তার প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ স্বর্গীয় গুজব  চূড়ান্ত আধুনিক ভাষায় রচিত। শ্লেষাত্মক ও স্যাটায়ারধর্মী। রানাঘাটের আর এক প্রবীণ কবি তপন ভট্টাচার্য। তাঁর প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থসমূহের মধ্যে 'চূর্ণি' আমার খুবই প্রিয়। বিশিষ্ট লেখক সুধীর চক্রবর্তী এই গ্রন্থটি নিয়ে এক যুগান্তকারী নিবন্ধ লিখেছিলেন 'কবিসম্মেলন' পত্রিকায়।

তাহেরপুরের কবি সুব্রত চক্রবর্তী 'খেয়া' নামের একটি চমৎকার লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন। কবি বীরেন্দ্রনাথ রক্ষিত-কে নিয়ে একটি মূল্যবান সংখ্যা প্রকাশ করেছেন। চাকদহে অনেকেই কবিতা লিখছেন দীর্ঘদিন ধরে। মন্দিরা রায়, অশোক চক্রবর্তী, দেবজ্যোতি রায়, চিরন্তন সরকার, স্বপন মোদক এবং অবশ্যই অলোক বিশ্বাস। কল্যাণীতে আছেন কবি সন্তোষ মুখোপাধ্যায়, পীযূষ পোদ্দার, রণজয় মালাকার প্রমুখ। পায়রাডাঙায় থাকেন শতঞ্জীব রাহা। মূলত প্রাবন্ধিক। কবিতাও লেখেন। শতঞ্জীব কৃষ্ণনগরের মানুষ। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতে-করতেই প্রীতিনগর, পায়রাডাঙায় বাড়ি করেন। বেশকিছু উল্লেখযোগ্য সংকলন করেছেন।

কৃষ্ণনগরে সুধীর চক্রবর্তী, মজনু মোস্তাফা (নির্মাল্য ভট্টাচার্য), হরিপদ দে, দেবদাস আচার্য, সুবীর সিংহরায়, সমরেন্দ্র মণ্ডল (মাইকেল), সমর ভট্টাচার্য, স্নেহাশিস শুকুল, তরুণ গোস্বামী, প্রবীর আচার্য প্রমুখ কবি-লেখকদের সঙ্গে আমার পরিচয়ের সূত্রপাত হয়েছিল কলেজ-জীবনেই। এঁদের মধ্যে মজনু মোস্তাফা, হরিপদ দে, সমর ভট্টাচার্য, স্নেহাশিস শুকুল, সুধীর চক্রবর্তী এবং প্রবীর আচার্য আমাদের মধ্যে আর নেই। আমি সুবীর সিংহরায়ের বয়েৎগুচ্ছ শীর্ষক কবিতাগ্রন্থ এবং সুধীর চক্রবর্তীর দুটি প্রবন্ধ লোকায়তের অন্তরমহল এবং যে আগুন ছড়িয়ে গেল-র ইংরেজি অনুবাদ (On Folk-cult & Rabindrasangeet) করেছি। গ্রন্থদুটির প্রকাশক যথাক্রমে গাঙচিল সোপান। সুধীরবাবুর সাহিত্যখ্যাতি দেশ-বিদেশে ব্যাপৃত। খুব বড়োমাপের মানুষ ও লেখক। আবুল বাশার, আনসারউদ্দিনের মতো লেখকদের উত্থানের পিছনে সুধীরবাবুর ভূমিকার কথা অনস্বীকার্য। সুধীরবাবু সারাজীবনে যদি শুধু গভীর নির্জন পথে-ই লিখতেন, তাহলেও শুধু ওই গ্রন্থটিই তাঁকে অমরত্ব দিতে পারতো বলে আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি। কবিতা লেখা ছাড়াও সুবীর সিংহরায় গল্প, প্রবন্ধ, ছোটোদের জন্য কল্পবিজ্ঞান তো লিখেছেন-ই, মূল্যবান সুপ্রাচীন গ্রন্থের সম্পাদনাও করেছেন। কৃষ্ণনগরের আর এক কৃতী লেখক কথাসাহিত্যিক তমাল বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি ওর প্রায় সবক'টি বই-ই পড়েছি। ওর লেখা আমার খুব ভালো লাগে। কৃষ্ণনগরের আর একজন কবি আমার খুব প্রিয় ছিল। আমি সঞ্জীব প্রামাণিকের কথা বলছি। ওর অকালপ্রয়াণ বাংলা কাব্যসাহিত্যের বেশ ক্ষতি করলো বলেই আমার মনে হয়। ওর স্বপ্ন ছিল আধুনিক বাংলা কবিতার একটি নির্মেদ সংকলন করবে। আমার সঙ্গে এ-বিষয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে ওর। প্রস্তাবিত সংকলনের জন্য আমার দুটি কবিতার ফটোকপিও চেয়ে নিয়েছিল সঞ্জীব। কবিতা দুটি হলো 'আমি আবার কথা বলছি' এবং 'পথের গানে গানে'। ওর অকালমৃত্যুর সঙ্গে সংকলনটিরও অকালমৃত্যু হলো। আমি সঞ্জীবের দুটি কবিতা তুলে দিচ্ছি এখানে।

যে তরঙ্গে জাগে প্রাণ

আজ কতদিন পরে তরঙ্গ পাঠালে
আমাদের বোবাকালা ঘর, ধুলো ঢাকা—
তালাবন্ধ ছিল এতদিন। সূর্য এখানে মৃত।
বিস্মৃতির মতো ছাইচাপা অগ্নিরেখা ছিল।

তোমার প্লাবন আমি টের পাই, ও রহস্যময়ী
তোমার তরঙ্গ আমি ফেরত দেব না
আমি পথে পথে ঘুরে মরব সারা দিনমান
সকাল রাখবে মাথা বিকেলের পায়ে
বিকেল রাত্রির গর্ভে ঘুমিয়ে পড়বে
তোমার তরঙ্গ আমি ফেরত দেব না
আদিগঙ্গা স্রোত আমি ফেরত দেব না
এ তরঙ্গে জাগে প্রাণ, এ তরঙ্গ চির পুণ্যতোয়া।
________________
আলো

কুড়াই কুড়াই আলো। পাখির পালক
রেখে দিই উত্তরের জানালার কাছে—
আমাদের রোগাভোগা দিদি যেন সেরে ওঠে।
ওষুধের শিশি ঘিরে কালো পিঁপড়ের মেঘ
তার পাশে রেখে দিই পাখির পালক
দিদি তুই সেরে ওঠ, তোর ভালো হোক।

চাপড়ায় কবি রামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মাধ্যমেই আলাপ হয়েছিল কবি রামকৃষ্ণ দে এবং শেখ রমজানের সঙ্গে। দু'জনেই বর্তমানে কৃষ্ণনগর শহরের বাসিন্দা। দু'জনেই দীর্ঘদিন ভালো কবিতা লিখে আসছেন। রামকৃষ্ণ দে-র ছেলে অমৃতাভ দে প্রেসিডেন্সির উজ্জ্বল ছাত্র। বর্তমানে শিক্ষক। গদ্য, পদ্য, সম্পাদনা, ভ্রমণবৃত্তান্ত—সবকিছুতেই সে চৌখশ। চাপড়া, বানিয়াখড়ির কবি জয়নাল আবেদিন প্রকৃতার্থেই সংগ্রামী কবি। সদ্যপ্রয়াণ হয়েছে জয়নালের। অম্বিকা দে বড়ো আন্দুলিয়ার বাসিন্দা। ভালো কবিতা লেখে। কিন্তু গ্রন্থ প্রকাশে ওর কেন যে অনীহা, সে এক বিস্ময়!

রামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় একালের এক অতি প্রসিদ্ধ কবি ও লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক। প্রায় ২৫টি কবিতাগ্রন্থের রচয়িতা রামপ্রসাদ তাঁর সাহিত্যপত্রিকা 'আনন্দম্'-এর শতাধিক সংখ্যা প্রকাশ করেছেন। আমি 'আনন্দম্'-এ দীর্ঘদিন কবিতা ও গদ্য লিখে আসছি। আমার লেখাকে সে বেশ প্রশ্রয় দেয়। 'আনন্দম্' পত্রিকা আয়োজিত ৫০০তম সাহিত্যবাসর বেশ জাঁকজমকের সঙ্গেই পালিত হয়েছিল চাপড়ায়। সেখানে সভাপতিত্ব করেছিলেন কলিকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণাকেন্দ্রের কর্ণধার প্রবাদপ্রতিম সন্দীপ দত্ত মহাশয়। সন্দীপদা-র সঙ্গে সেই আমার শেষ দেখা। এই অনুষ্ঠানের কিছুদিন পরেই কলকাতায় ওঁর মৃত্যু হয়। আমরা আমাদের প্রিয় মানুষ ও অভিভাবককে অকালেই হারালাম। ঠিক যেভাবে আগেই আমরা হারিয়েছি কবি উত্তর বসু এবং কবি নারায়ণ মুখোপাধ্যায়কে। এঁরা প্রকৃতার্থেই ছিলেন লিটল ম্যাগাজিনের আত্মজন। চাপড়ার দেবাশিস দত্ত বড়ো আন্দুলিয়া স্কুলে রামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছাত্র। দেবাশিস তরুণ বয়স থেকেই ভালো কবিতা লেখে। পরবর্তীতে সে 'বোদলেয়ার' লিটল ম্যাগাজিনটির সম্পাদনা শুরু করে। বর্তমানে দেবাশিস কোচবিহার কলেজের অধ্যক্ষ। আমার সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ আছে।
(ক্রমশ)

Comments