নিতাই ভট্টাচার্য

ডোরবেলের শব্দ শুনে দরজা খোলে দীপা। প্রফুল্লর দমকা কাশির শব্দ তখনই কানে আসে অলোকের। মনের মধ্যে চলতে থাকা সারাদিনের উদ্বেগ বাতাস পায় যেন। 
"বাবা কেমন রয়েছে?", দীপাকে জিজ্ঞাসা করে অলোক।
দরজার একপাশে দাঁড়িয়ে দীপা। স্বামীর প্রশ্নের উত্তরে বলে, "ভিতরে এসো, তারপরেই না-হয় শুনবে। নাকি বাবার খবর নিয়েই আবার ফিরে যাবে অফিসে, সত্যি! আর সব বিষয়ে যদি তোমার এমন চিন্তা থাকতো তাহলে..." দীপার বলা অসম্পূর্ণ বাক্য সম্পূর্ণ অর্থ নিয়েই সূচের মতো বেঁধে অলোকের কানে।
সত্যি, কোনো কথা কোমলভাবে বলে না দীপা। এ বড়ো অদ্ভুত স্বভাব! ভালো-মন্দ যে-কোনো বিষয়েই কথা বলুক-না কেন, এমনভাবে কথা বলে যেন বছর-বছর ধরে ওই ব্যাপারে একটা ক্ষোভ বা রাগ বা ভীষণ তিক্ততা জমে আছে মনে; এই মুহূর্তে সেই জমে থাকা অনুভূতি বাইরে আসছে কর্কশ শব্দের গা জড়িয়ে। সময়-সময় দীপার কথা বলার ধরন অসহনীয় হয়ে ওঠে অলোকের কাছে। বিয়ের পর-পর এ-নিয়ে বহুবার দীপার সঙ্গে কথা বলেছে অলোক। বুঝিয়েছে দীপাকে। পরিবর্তন আসেনি দীপার। এ তার অবাধ্য অভ্যাস। ঠেস দিয়েই কথা বলতে হবে, নয়তো কথার অর্থ অধরা থাকবে বুঝি অপরের কাছে!

শেষ দু'দিন কাশির দাপটে দম নিতে পারছে না প্রফুল্ল। দিনরাত ঘুম নেই চোখে। দমকা কাশির ঝাঁকুনিতে ওষ্ঠাগত জীবন। রাত জেগে স্বামীর মুখে জল দেয় বিমলা। নয়তো শুকনো গলায় কাশি বেড়ে যায় আরও। আজ অফিস থেকে বাড়ি ফেরবার পথে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করে এসেছে অলোক। ডাক্তারবাবুকে বলেছে প্রফুল্লর কাশির কথা। আগামীকাল ডাক্তারবাবু আবার দেখবে প্রফুল্লকে।
 
জুতো খুলে ফ্ল্যাটের ভিতরে আসে অলোক। তাকিয়ে দেখে সামনের ছোটো ঘরের দিকে। দরজা বন্ধ। পাপাই রয়েছে ভিতরে। এইসময় অনলাইনে ক্লাস থাকে ওর। সামনেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাপাইয়ের। কিচেনের ডানপাশের  বড়ো ঘরটার দিকে তাকায় অলোক। প্রফুল্ল আর বিমলা রয়েছে সেই ঘরে। বন্ধ দরজার এপারে দাঁড়িয়ে বাবার কাশির শব্দ শুনতে থাকে অলোক। 

ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে দীপা এসে বসে সোফার উপর। মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রেখে বলে, "খারাপ তো কিছুই দেখছি না। কাশি হচ্ছে। অত বকরবকর করলে কাশি তো হবেই। কথা বলা তো আর বন্ধ করবে না। আবার কোনো পরামর্শও দেওয়া চলবে না! গায়ে লেগে যাবে! রোগ তো অন্য কিছু নয়।" প্রফুল্ল কেমন আছে ও তার কাশির কারণ অতি সংক্ষেপে এবং যথাযথ শব্দপ্রয়োগে  অলোককে শুনিয়ে দেয় দীপা। 
কাঁধের ব্যাগ অন্য একটি সোফায় নামিয়ে রেখে প্রফুল্লর কাছে যেতে চায় অলোক; দীপার কথা পা টেনে ধরে পিছন থেকে। "যার যেখানে মন চায় জিনিসপত্র নামিয়ে রাখবে, চব্বিশ ঘণ্টা কাজের লোক তো বাড়িতেই আছে!" 
ব্যাগটা সোফা থেকে তুলে নেয় অলোক, বলে "একটু আস্তে কথা বলো, ছেলেটার..." 
"হ্যাঁ, আমি কথা বললেই তো ছেলের পড়ার অসুবিধা হয়। এদিকে বাড়িটা যে হসপিটাল হয়ে উঠেছে সে-নিয়ে সমস্যা নেই কোনো।" রাগতস্বরে অভিযোগের তীর ছোঁড়ে দীপা। 
"অসুস্থ হয়েছে বলেই তো এসেছে!" বলে অলোক।
"অমন অসুস্থ সবাই হয়। সময়মতো মুখের সামনে খাবার পেলে আমিও অসুস্থ হতে পারি।"
দীপার কথা শুনে আগুন লাগে অলোকের মাথায়। এমন ভাবনা যে আসতে পারে কারোর মনে, তাই ভেবে অবাক হয় অলোক। বলে, "মানে!"
"মানে খুব পরিষ্কার। আমাকে ভালোমন্দ মুখের সামনে এনে দাও, আমিও রোগী সেজে শুয়ে থাকতে পারি নয়তো রোগীর মুখে ঘড়া-ঘড়া জলও ঢালতে পারি।" 
উত্তর দেয় না অলোক। আবার শুরু করে দীপা, "দু'কামরার ছোটো ফ্ল্যাট। তিনজনে শ্বাস নিতেই ঘরের বাতাস ফুরায়। এখানেই দুনিয়ার লোক..." মোবাইলের স্ক্রিন স্ক্রল করতে-করতে দীপা বলে। 
দীপার কথা শুনে নীরব থাকে অলোক।
আজ দিনপাঁচেক হলো বাবা আর মাকে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে এসেছে অলোক। আর এতেই মেজাজ চড়েছে দীপার। 
ব্যাগ হাতে নিয়ে বড়ো ঘরের দিকে পা ফেলে অলোক। 
"চায়ের জল বসাবো? নাকি খাবে না? তুমি তো আবার আজকাল মুখে কিছু বলো না।" বলে দীপা।
মেজাজে চিড় ধরে অলোকের। বলে, "তুমি কি এইসব কথা আমাকে শোনাবে বলে আগে থেকেই ভেবে রাখো?"
"কথা শোনানোর কিছুই নেই। আমি রোগীর সেবা করতে পারবো না। আমার ছেলের পরীক্ষা সামনে।" গলার পর্দা এবার অনেকটাই উপরে উঠেছে দীপার। পাপাই ঘরের বাইরে আসে, বলে "মা আমার ক্লাস চলছে!"
"সারাদিন কোনো অসুবিধা নেই, মা কথা বললেই..." পাপাইকে শুনিয়ে বলে দীপা।
পাপাই তাকায় অলোকের দিকে। বড্ড খারাপ লাগে অলোকের, পাপাইয়ের কথা ভেবে। দীপার সঙ্গে বিতর্কে না-গেলেই হতো। অন্যদিনের মতো এড়িয়ে যেতে পারতো অলোক।
"সরি পাপাই", বলে অলোক। পাপাই ঘরে চলে যায়।

বড়ো ঘরে আসে অলোক। বিছানায় শুয়ে প্রফুল্ল। পাশে  থমথমে মুখ নিয়ে বসে রয়েছে বিমলা। একদিকে প্রফুল্লর অসুস্থতা। আর অন্যদিকে রোজ-রোজ দীপার বাক্যবাণ। সব নিয়ে বড়ো অদ্ভুত অবস্থায় পড়েছে বিমলা। সেইকথা বোঝে অলোক। গতকালই বলেছিলো বিমলা, "ডাক্তার তো দেখলো। এইবার আমরা বাড়ি ফিরে যাই। তোর বাবাও..." 
প্রফুল্ল যে এখানে বাধ্য হয়ে আছে, জানে অলোক। ছেলের বউকে এড়িয়ে চলে সবসময়; দীপার কথার ঝাল সহ্য হয় না প্রফুল্লর।
চামচে জল নিয়ে প্রফুল্লর মুখে দিচ্ছে বিমলা। বিছানার একপাশে বসে অলোক। জিজ্ঞাসা করে বিমলাকে, "সারাদিনে ওষুধগুলো দিয়েছো?" মাথা নেড়ে ছেলেকে আশ্বস্ত করে বিমলা। অলোক চেয়ে থাকে প্রফুল্লর দিকে। দু'চোখ বন্ধ করে শুয়ে রয়েছে প্রফুল্ল। শীর্ণ শরীর মিশে গেছে বিছানার সঙ্গে। হাড় জিরজিরে বুকটা হাপরের মতো উঠছে আর নামছে। 
আজ প্রায় সপ্তাহ দুই-তিন ধরে ভুগছে প্রফুল্ল। জ্বর, শ্বাসকষ্ট আর কাশি। সেই নিয়েই পড়ে ছিল গ্রামের বাড়িতে। প্রথমেই বাবাকে বলেছিল অলোক, "চলো আমার ফ্ল্যাটে। কয়দিন বেলুড়ে থেকে চিকিৎসা করালেই সব ঠিক হয়ে যাবে।" কে শোনে কার কথা! কোনোভাবেই রাজি হয়নি প্রফুল্ল। 
এমনিতেই ভয়ঙ্কর জেদি মানুষ প্রফুল্ল। নিজে যা ভাববে, তার উপরে অপরের কোনো কথা চলবে না। বয়স হলেও প্রফুল্লর জেদে মরচে পড়েনি এখনও। প্রথমে অলোকের কথা শোনেনি প্রফুল্ল। পরে শরীরের অবস্থার অবনতি হতে, অলোক জোর করেই সিমলাগড় থেকে বাবা-মাকে নিয়ে এসেছে ফ্ল্যাটে। আর এতেই দীপার মেজাজ আরও চড়েছে। "একবারও ছেলেটার কথা ভাবলে না!" প্রফুল্ল আর বিমলা ফ্ল্যাটে পা রাখা মাত্র অলোককে বলেছিল দীপা।

বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে অলোক। এলোমেলো চিন্তা ঘোরাফেরা করে মাথার মধ্যে। প্রফুল্লর এইরকম কাশি ভয়ানক কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে যেনো। "তুই হাত মুখ ধুয়ে বিশ্রাম কর খোকা। আমি তো রয়েছি। চিন্তা করিসনে।" ছলছল চোখে বলে বিমলা। "বসে-বসে খেতে পাবে বলে কেউ রোগী হয়!" গলা ধরে আসে বিমলার। দীপার কথাগুলো বুকে বিঁধেছে। মাকে দেখে ভীষণ খারাপ লাগে অলোকের। এই নিয়ে দীপাকে কিছু বলতে গেলে অশান্তির আগুনে নিজেকেই পুড়তে হবে, জানে অলোক। 

ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে প্রফুল্ল। মাঝেমাঝে দমকা কাশি কেড়ে নিচ্ছে বুকের বাতাস। ভীষণ কাহিল হয়ে পড়েছে প্রফুল্ল। বাবার উপর স্থির হয় অলোকের দৃষ্টি। প্রফুল্লর জন্য মায়া হয় অলোকের এই মুহূর্তে।
 
বড়ো অদ্ভুত মানুষ প্রফুল্ল। সারা জীবন আগুনে মেজাজ নিয়ে চলেছে। বউ-ছেলে-মেয়ে সবাই তটস্থ হয়ে থাকতো প্রফুল্লর ভয়ে। অতি তুচ্ছ কারণে ভীষণ চিৎকার চেঁচামেচি করতো প্রফুল্ল। চড়চাপ্পড় পড়তো ছেলেমেয়ের গায়ে। বাদ যেত না বিমলাও। জ্ঞান হওয়া থেকে প্রফুল্লর এই হিতাহিত জ্ঞানহীনতাকে কোনোদিন ভালো চোখে দেখেনি অলোক। হয়তো সে-জন্যই নিজের অজান্তে প্রফুল্লর সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে অলোকের। প্রফুল্লর জন্য অলোকের মনে মায়া, মমতা, শ্রদ্ধা, সম্ভ্রম কম নেই কিছু। তবুও প্রফুল্লকে দেখলেই ছেলেবেলার সেই ভয়াল নিরাপত্তাহীনতার দিনগুলো সামনে আসে অলোকের। বাবা বলতে প্রফুল্লর আগে অন্য একটা মানুষ হাজির হয় অলোকের মনে। গনগনে তার মেজাজ। ফিনকি দিয়ে রাগ বাইরে আসছে। আর তখন প্রফুল্লর প্রতি পালনীয় দায়দায়িত্বগুলো কেমন যেন নিষ্প্রাণ কর্তব্য হয়ে ওঠে। সে-কর্তব্য রক্ষা হয়, কোনো তৃপ্তির পরশ পায় না অলোক। বাড়িতে, বাজারে, অফিসে লোকজনের মেজাজ দেখলে প্রফুল্লর মুখ মনে আসে অলোকের। আর তখনই মুখ ফিরিয়ে নেয় অলোক। মেজাজি লোকজন থেকে সবসময় দূরে থাকে অলোক। এ তার অনায়াসলভ্য অভ্যাস। তাই হয়তো দীপার...

"খোকাকে বলো রক্তের..." কাশির দাপটে কথা শেষ করতে পারে না প্রফুল্ল। স্বামীর মুখে জল দিয়ে বিমলা বলে, "খোকা আগে গা হাত ধুয়ে শান্ত হোক, তারপর বলবো।" প্রফুল্লর কথা শুনে চমকে ওঠে অলোক। জিজ্ঞাসা করে বিমলাকে,  "কিসের রক্ত?"
"না-না, তেমন কিছু নয়।"  বলে বিমলা।
অলোক বোঝে এটা বিমলার অভিমান বা রাগ। দীপার  কথা শোনার পর আর নতুন করে রোগ-যন্ত্রণার কথা বলতে ইচ্ছে যায় না বিমলার। নাছোড় অলোক। চেপে ধরে বিমলাকে। মাথা নামিয়ে বিমলা কেঁদে চলে নীরবে। শেষে প্রফুল্ল বলে, "আমার কফের সঙ্গে রক্ত..." 
দমকা কাশি ছিনিয়ে নিয়ে যায় প্রফুল্লর কথা। দুশ্চিন্তায় মাথা নুইয়ে আসে অলোকের। তুমুল দুর্ভাবনা জাপটে ধরে।
তখনই পাপাইয়ের গলা কানে আসে অলকের। 
"ওয়াইফাই অফ করলে কে?" ঘরের বাইরে এসে দীপাকে জিজ্ঞাসা করে পাপাই। ডাইনিং-এ এসে দাঁড়ায় অলোক। অনলাইন ক্লাস চলাকালীন হঠাৎ করেই ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পাপাইয়ের। মোবাইল চার্জারের সুইচ অফ করতে গিয়ে অন্য সুইচ অফ করেছে দীপা। 
"ভুল করে ওই সুইচে হাত পড়েছে। আবার অন করে দিয়েছি তো। অত বিরক্ত হবার কী আছে!" স্বভাবোচিত ভঙ্গিতে বলে দীপা।       
"একটু দেখে কাজ করবে তো মা! একবার ওয়াইফাই অফ হলে আবার অন হতে সময় লাগে তো।" বলে পাপাই।
"হ্যাঁ, এইবার তোর কাছেই কাজ শিখবো। একবার সুইচ অফ হয়েছে বলে..."
"ওঃ!" দীপাকে বোঝাতে না-পারার অসহায়তা ফুটে ওঠে পাপাইয়ের গলায়। ছেলের কথা ভেবে ভীষণ খারাপ লাগে অলোকের।
এরপর নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয় অলোক। শুরু হয় কথার পিঠে কথা চাপানো। তারপর...
ফ্ল্যাটের সামনের রাস্তা পার করে গঙ্গার ঘাটে এসে বসে অলোক। মাথার শিরাগুলি দপদপ করছে একযোগে। চেয়ে থাকে অনন্তপ্রবাহিনী গঙ্গার দিকে। ভাটির টানে বয়ে চলেছে গঙ্গা। চেয়ে থেকে আনমনা হয়ে ওঠে অলোক। অফুরান নির্মোহ ভাব জাপটে ধরে অলোককে। সম্পর্কের সমস্ত গ্রন্থিগুলি ছিঁড়ে দিয়ে ভাটির টানে বহুদূরের কোনো পৃথিবীতে ভেসে যেতে ইচ্ছে হয় অলোকের। যেখানে রাগ, মেজাজ, জেদের মুখোমুখি হতে হবে না। শুনতে হবে না কর্কশ কথা। কোমলতার স্পর্শে সরস হবে জীবন।

পাপাইয়ের মুখটা ভেসে আসে মনে। ভাবনা বাঁক নেয় এইবার। দীপার খিটখিটে স্বভাবের জন্য হয়তো কষ্ট পায় পাপাই। বড্ড চাপা স্বভাব পাপাইয়ের, মুখে বলে না কিছু। বোঝে অলোক। বুকের ভিতরটা ডুকরে ওঠে ছেলের কথা ভেবে। 
কাছেপিঠে কেউ একজন কেশে উঠলো। সঙ্গে-সঙ্গে প্রফুল্লর কথা মনে পড়ে অলোকের। প্রফুল্লর কফে রক্ত আসছে। এটা জানানো প্রয়োজন ডাক্তারবাবুকে। ফোন করতে চায় অলোক। হাত দেয় পকেটে। না, সঙ্গে নিয়ে আসেনি ফোন। রাগের তোড়ে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে এসেছে। ফোন সঙ্গে নেওয়া হয়নি।
ঘাড় ঘুরিয়ে এপাশ-ওপাশ দ্যাখে অলোক। নির্জন হয়েছে গঙ্গার ঘাট। বাড়ি ফিরতে হবে এইবার। বাড়ির কথা ভাবতেই দু'পা ভারী হয়ে আসে অলোকের। আবার সেই আগুনে-হলকা!
পাপাইয়ের মুখ ভেসে আসে মনে। বড়ো করুণ সে-মুখ। এই সংসারে ওই তো অলোকের একমাত্র পিছুটান। 
"বাবা?"
ডাক শুনে চমকে ওঠে অলোক। দেখে পিছনে দাঁড়িয়ে পাপাই।
 "উঠে এসো।"
ধীরপায়ে সিঁড়ি ভেঙে উঠে আসে অলোক। ছেলের সামনে এসে দাঁড়ায়। হাত রাখে পাপাইয়ের কাঁধে। পাপাইয়ের মুখে মায়াবী হাসির আভা। রাস্তার ম্লান আলোতেও সেই হাসি পড়তে পারে অলোক।
"আজ হঠাৎ অমন রিঅ্যাক্ট করলে কেন!  দাদুর জন্য তুমি খুব টেন্সড, তাই না ?" বলে পাপাই।
চুপ থাকে অলোক। 
"আমার পরীক্ষা নিয়ে ভেবো না বাবা। আই অ্যাম রেডি ফর মাই এক্সাম। তুমি দাদুকে দ্যাখো।"
ছেলেকে জাপটে ধরে বুকে। পাপাইয়ের মাথার উপর নিজের মাথা হেলিয়ে দেয় অলোক। রুক্ষ এই মরুময়তায় পাপাই বুঝি মরূদ্যান। 
" চলো..." বলে পাপাই।
গঙ্গার দিক থেকে ঠান্ডা বাতাস এসে ছুঁয়ে যায় অলোককে। পাপাইয়ের পায়ে পা মিলিয়ে পথ চলে অলোক।






Comments