একটা জ্বরের দুপুরে বেড়ালের মতো শুয়ে থাকি বিছানায়। এই রোগভোগ সমস্ত ব্যস্ততা থেকে দূরে সরিয়ে এনে আমাকে আরও নিঃসঙ্গ আরও অসহায় করে দেয়। আমি জীবনকে কোঁচড়ে বেঁধে বরফের ওপর হেঁটে যাই। গিরিখাতের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। মৃত্যু নিয়ে কবিতা লিখি। আমি যত মৃত্যুকে উপলব্ধি করতে চেয়েছি, জীবন আমার পা জড়িয়ে ধরেছে কাঁটাগাছের মতো। কাউকে বোঝাতে পারিনি, এ-যন্ত্রণা মৃত্যুর চেয়েও বড়ো। ক্ষমাহীন।
জীবন এক অনিশ্চিত পথ। যার বাঁকে-বাঁকে রয়েছে তীব্র ভর্ৎসনা। নিদারুণ প্রত্যাখ্যান। প্রতারণার মায়াজাল। এখানে একটু আলোর তাগিদে প্রতিযোগিতায় দাঁড়াতে হয়। শিরদাঁড়া ভেঙে স্তাবকতা করতে হয়। যারা জীবনের মারপ্যাঁচ না-বুঝে প্রজাপতি ধরতে ছুটে যায়, তারাই গভীর জঙ্গলে হারিয়ে যায়। ফিরে আসার পথ আর খুঁজে পায় না!
পথের ধারে যে-মাতাল গলা অবধি মদ খেয়ে অচেতন হয়ে থাকে, তার ধুলোমাখা শরীরে বিস্তার করেছে মাকড়সার জাল। সে চাইলেও ছিঁড়তে পারে না। পোড়াতে পারে না। গ্যালন-গ্যালন মদ ঢালে। থিতিয়ে আসে চেনা মুখ। আমারও আজকাল তার মতো মদ গলায় ঢেলে অচেতন হয়ে পড়ে থাকতে ইচ্ছে করে। ভুলে যেতে ইচ্ছে করে সমস্ত পারাপার। উচ্চশিক্ষা মাঝেমাঝে জীবন-সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
জীবন চেনা ছকের ভেতর সুন্দর। চেনা ছকের বাইরে গেলে মানুষ অপদেবতাকেও ঈশ্বর মনে করে। আমার কোনো ঈশ্বর নেই। কবিতাই একমাত্র আমার নিরাকার ব্রহ্ম। আমি শুধু কবিতার কাছে মাথানত করি। আমার যা-কিছু ভুল, যা-কিছু পাপ, যা-কিছু ভালো-মন্দ, কবিতাকে উৎসর্গ করি।
যারা একদিন জীবনকে গ্লাসে ঢেলে চিয়ার্স করার কথা বলেছিল, তারাই গ্লাসের ভেতর তরলে বুদবুদের মতো মিলিয়ে গেল। অস্তগামী সূর্যের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেল আমার মেয়েবেলা। আমার দু'চোখে শুকনো নদী। বৃষ্টির আশা আর করে না। বৃষ্টি শুধুই প্লাবন ডেকে আনবে। আর প্লাবন মানেই ভাঙাচোরা আরও একটা জীবন।
ভালো লাগলো
ReplyDeleteদুর্দান্ত! বলে বোঝানো যাবে না।
ReplyDelete