রেহানা বীথি

মাংস। আহা, কী ঘ্রাণ! জিহ্বায় সরস টঙ্কার।
কিন্তু ওর ওঠার শক্তি নেই। বোধহয় তিন কি চারদিন, না-হয় একসপ্তাহ, না-হয় আরও বেশি; এই এতগুলো দিন ধরে ও-নেতিয়ে পড়ে আছে। কেন যে এমন হলো, কী থেকে যে কী হয়ে গেল! ওর চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। এভাবে বেঁচে থেকে কী লাভ? চোখের সামনে সুস্বাদু মাংস, সেই মাংস খাওয়া তো দূরের কথা, ছুঁতেও পারছে না!

ও-প্রাণপণে ওঠার চেষ্টা করলো, পারলো না। ছেঁচড়ে যদি কোনোভাবে যাওয়া যায়! সে-চেষ্টারও ত্রুটি করলো না। কিন্তু বড়োজোর আধহাত, এর বেশি এগোতে না-পেরে থেমে গেল। মাংস রয়েছে ওর থেকে অন্তত দু'হাত দূরে। এই দূরত্বটুকু এখন এত বেশি! অথচ একসময় কী দিন ছিল!
ওই যে পাশাপাশি দুটো খাল, আবর্জনায় ভরা, দুই খালের কোলে-কাঁখে ঝুপড়ি দোকানগুলো, তার পাশে নিম আর মেহগনি গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে; এসবের পেট কেটে বের করা রাস্তা ধরে অনেকখানি দূরে বাসস্ট্যান্ড,  তার থেকেও দূরে রেলস্টেশন—এই ক'দিন আগেও তো দৌড়ে-দৌড়ে ওই পর্যন্ত যাওয়া কোনো ব্যাপারই ছিল না। আহারে জীবন!

অসুখটা যে কী, কে জানে! নিজের আত্মীয়-স্বজন, কারও তো এমনটা দেখেনি ও। তাদের কেউ-কেউ অসুস্থ হয়েছে, সেরে গেছে। কেউ-কেউ মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনায় মারা গেছে এবং যায়। কিন্তু ওর মতো এমন বিদঘুটে রোগ তো কারও হয়নি! ছলছল চোখদুটো বেয়ে জলের ধারা বইতে লাগলো। কী যে কষ্ট, কী যে যন্ত্রণা! হাঁটার শক্তি নেই, একটু যে বসে থাকবে, সেই উপায়টাও নেই। দেহের বাইরে তো কোনো রোগ ফুটে ওঠেনি, কিন্তু ভেতর-ভেতর যন্ত্রণায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। 

শুরুতে তবুও হেঁটে চলে বেড়াচ্ছিল, কিন্তু খুব ধীরে, কখন যে ভেতরটা অসাড় হয়ে গেছে! তারপর এই তো এভাবে পড়ে আছে। আত্মীয়-স্বজনরা কেউ-কেউ এসে দেখে শুঁকে-টুকে চলে যাচ্ছে। কেউ-বা দরদ দেখাতে হালকা কুঁইকুঁই করে,  ঘেউঘেউ করতে-করতে চলে যাচ্ছে চোখের আড়ালে। তবে কেউ তো আর খাবার এনে দেয়নি! ওর নিজেরও জোগাড় করার শক্তি নেই। সেই থেকে অনাহারে থেকে-থেকে এখন প্রায় নিস্তেজের কাছাকাছি। এভাবেই হয়তো একসময় ধুকধুক করতে থাকা প্রাণটা বেরিয়ে যাবে। চোখে আবারও নতুন করে জল জমলো ওর। আবারও তা গড়াতে থাকলো অবিরাম।

হোক,  মৃত্যুই ঘটুক!  অন্তত খিদের তাড়না আর এভাবে ধুঁকে-ধুঁকে বেঁচে থাকার যন্ত্রণা থেকে তো রেহাই পাবে। তাছাড়া, কেউ তো আর চিরকাল বেঁচে থাকে না। মৃত্যুর জন্যে একটা-না-একটা উপলক্ষ রেডিই থাকে। এই অসুখটার কারণে না-হোক; অন্য কোনো কারণে, অন্যভাবে একসময়-না-একসময় তো মৃত্যু ওর হতোই! 

ফিরফির করে গাছের পাতারা নড়ে উঠতেই মাংসের ঘ্রাণ তরঙ্গায়িত হয়ে ওর নাকে ভীষণ মোলায়েম আলোড়ন তুললো আবারও। মশলায় ম-ম এবং বোধহয় আজ দুপুরেরই রান্না। কিন্তু কে ফেলে গেল! কেন? 

কতক্ষণ আগে হিসেব নেই, হঠাৎ মাথা কেমন ঘুরে উঠে একেবারে এলিয়ে পড়েছিল ও। চেতন হারিয়ে একেবারে অজ্ঞান। তারপর যখন আপনা থেকেই চেতন ফিরলো, প্রথমেই চোখ পড়লো এই মাংসের ওপর। হয়তো-বা মাংসের ঘ্রাণেই অচেতন থেকে চেতনে ফিরেছিল ও। এবং ওই চেতন আর অচেতনের ফাঁকে কেউ এসে মাংস ফেলে গেছে। উচ্ছিষ্ট মাংস। যে বা যারা ফেলে গেছে, এ-মাংস তার বা তাদের কাছে ফেলে দেওয়ারই যোগ্য। কিন্তু ভুলুর কাছে? ভুলুর মতো আর যারা আছে, তাদের কাছে? 

আরে, এই মাংসের ঘ্রাণ তো তেলেসমাতি করে ফেললো! কতদিন পর নিজের নামটা মনে পড়লো ভুলুর! সেই কবেকার কথা, সেই যে সেই মায়ের পেট থেকে পড়ার পরপরই কী সুন্দর-ই না ছিল ও! একটা বাড়ি। বাড়িতে বাস করতো নিঃসন্তান স্বামী-স্ত্রী। ছায়া-ছায়া সেই পুরোনো একতলা বাড়ির পেছনে ছিল একটুখানি জঙ্গল। ওই জঙ্গলেই জন্ম নেয় ও আর ওর আরও তিন ভাই-বোন।  একই সঙ্গে চারটে সন্তানের জন্ম দেওয়ার কিছুদিন পর জন্মদাত্রী মা কোথায় যে চলে গেল! ওর ভাই-বোনেরাও একেকজন একেকদিকে ছিটকে গেল। তবে ওকে যত্ন করে কোলে তুলে নিল ওই বাড়িরই মালিকদম্পতি। আদর করে নাম দিল ভুলু। 
আহা, তারপর কিছুদিন কী সুখেই না কাটলো! 
কিন্তু সেই সুখ কপালে আর সইলো কই! বছর ঘুরেছে কি ঘোরেনি, ওই ছায়া-ছায়া বাড়িটা ছেড়ে চলে গেল ওরা। 
মনে আছে, এ-বিচ্ছেদব্যথায় মনমরা হয়ে ক’দিন শুধু এদিক-ওদিক ঘুরেই বেড়িয়েছিল ভুলু। ঘুরতে-ঘুরতে কখন যে ধীরে-ধীরে মিশে গেছে পথের স্বজনদের সঙ্গে, মনে পড়ে না। তারপর তো ওই ছায়াবাড়ির স্বজনদের দেওয়া নামটাও ভুলে গিয়েছিল। আবার মনে পড়লো। এতদিন পর! কতদিন? নাকি কতবছর?

এই নিস্তেজ শরীর, তারচেয়েও নিস্তেজ মনে ভুলে যাওয়া নামটি যেন ঢেউয়ের মতো কুলকুল শব্দে আনন্দ ছড়িয়ে দিতে লাগলো। দেহের বেদনা ভুলে নির্নিমেষ চোখে তাকিয়ে রইলো পড়ে থাকা মাংসের দিকে। লাইটপোস্টের তীর্যক অথচ ধিমে আলোটুকু যেন ইচ্ছে করেই মাংস বরাবর পড়েছে। যেন ও-দেখতে পায়। দেখে যেন হামলে পড়ে খেয়ে নেতিয়ে পড়া শরীরটা চাঙা করতে পারে। ওই বাঁকা আলোর এ-উদ্দেশ্যটুকু কল্পনায় আঁকতে বড়ো ভাল লাগলো ভুলুর। আঁকতে-আঁকতে উদ্দেশ্যের মধ্যে বিধেয় ঢুকে গেল। কালো-কালো নখওয়ালা দুটো পায়ের পাতা দৃশ্যমান হলো মাংসের একেবারে সন্নিকটে। কেঁপে উঠলো ভুলু। কাঁপতে-কাঁপতে, হাঁপাতে-হাঁপাতে ও-তারপর দেখতে পেল একটি মুখমণ্ডল। সেই মুখমণ্ডলে গরুর শিং-এর মতো একটি নাক, যে-নাক একেবারে মাংসের কাছাকাছি। শুঁকছে। শুঁকতে-শুঁকতে নাক কুঁচকে ওয়াকথু করে একদলা থুতু ছুঁড়ে দিল মাংসের ওপর। তারপর কালচে সবুজ পিতলের পাতের মতো দাঁত বের করে খিঁচিয়ে উঠেই সটান দাঁড়িয়ে গেল। 

এতক্ষণ ধুকপুক করতে থাকা প্রাণটার নিঃশ্বাস আটকে সভয়ে তাকিয়ে ছিল ভুলু। এ-ভয় মাংসটুকু হারানোর ভয়। যদি লোকটা খেয়ে ফেলে! কিন্তু লোকটা তো ঘেন্নায় থুতু ছুঁড়ে দিল। মনটা ভারমুক্ত হতেই ঘোলাটে দু'চোখ তুলে লোকটার আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো ভুলু। 
লোকটা ঠিক লোক নয়, মধ্যতরুণ। পায়ের চ্যাপ্টা পাতাজোড়া থেকে ধীরে চোখ উপরে উঠতেই দেখতে পেল, তার নাভির অনেকখানি নিচে একটা লুঙ্গি জড়ানো। লুঙ্গিটা এমন আলগাভাবে জড়ানো যে, খুলে পড়বো-পড়বো করেও আটকে আছে। তবে লুঙ্গি যেখানে খুলে না-পড়েও আটকে আছে, ওখানে দৃশ্যমান হচ্ছে ওর বিক্ষিপ্ত যৌনকেশের ঊর্ধ্বাংশ। তার উপরে নাভি, নাভির উপরে কাপড়হীন ল্যাদ খাওয়া পেট। ওরও বোধহয় ভুলুর মতো দিনকয়েক খাদ্য জোটেনি। পেট পেরিয়ে উপরে উঠতেই হাড্ডিসার বুকের ছাতি। একটু মাংসের আস্তরণ থাকলেই যা হতে পারতো সুঠাম। কণ্ঠার হাড় আর জোরহীন গ্রীবার ওপর যেন জোর করে একটা মুখ বসানো আছে। পাথরের মতো নিরেট, ভাবলেশহীন। কতদিন ক্ষুর চলেনি কে জানে, দাড়ি-গোঁফের জঙ্গলে ঠোঁট অদৃশ্য। অসহিষ্ণু দু'চোখের উপরের মাথাটাও চুলের জঙ্গল, জটায় জড়ানো। অবশভাবে ঝুলতে থাকা দুইহাতের একটি তুলে আঙুল ঢুকিয়ে দিল ওই চুলে। তারপর খসরখসর। কালচে হয়ে যাওয়া নখে বোধহয় গোটাকতক উকুন উঠে এল। আরেক হাতের তালুতে সেগুলো রেখে দেখতে-দেখতে হঠাৎ হো-হো করে হেসে উঠলো লোকটা। তারপর হঠাৎই হাসি থামিয়ে ভীষণই গম্ভীর। 
দেড়হাতের দূরত্ব কমিয়ে এসে দাঁড়ালো ভুলুর কাছে। দাঁড়িয়ে দাড়ির জঙ্গলে আঙুল চুবিয়ে চুলকাতে লাগলো। নাঃ, এই চুলকানোও তার মনমতো হলো না। আবারও ওয়াকথু করে একদলা থুতু ফেললো ঘাসের গায়ে। ছুঁড়ে দেওয়া থুতু না ঘাস, কার ওপরে যে ওর ভয়ানক রাগ উঠলো হঠাৎ; দু'হাতে ঘাসেদের কান ধরে পটপট করে টেনে তুলতে লাগলো। তুলে মুঠোভরে সেই ঘাস ডলে-ডলে মাখতে লাগলো নিজের গায়ে। মাখছে তো মাখছেই!

এরমাঝেই আকাশের টসটসে চাঁদটা হঠাৎ ঝুল-কালি মেখে কেমন ভূতুড়ে হয়ে গেল। চাঁদের ঝুল-কালি ধীরে-ধীরে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো অথই আকাশে। তারপর কেমন গুড়গুড়, গুড়ুম-গুড়ুম…পুরো আকাশ নিকষ অন্ধকার। 

ভুলু যেন লোকটাকে দেখতে-দেখতে নিজের ব্যথা-বেদনার কথা ভুলেই গিয়েছিল। দীর্ঘক্ষণ পর আচমকা ওর শরীরের পুরো ভেতরবাড়ি ব্যথায় থরথর করে উঠতেই জিভ বের করে হাঁপাতে-হাঁপাতে অদ্ভুত এক হুউউ শব্দ করে উঠলো। আকাশ অন্ধকার। এই অন্ধকারের ঘনত্ব যেন ওর ওই শব্দে আরও বেড়ে গিয়ে তীব্র এক কড়কড় শব্দে ফেটে পড়লো। কড়কড় শব্দের পরই ঝড়ের কয়েকটি ঝাপটা। আশেপাশের শিশু-কিশোর এবং যুবক-বৃদ্ধ বৃক্ষগুলো সেই ঝাপটায় বিক্ষিপ্ত। এরপরই তো বৃষ্টি নামার কথা! বৃষ্টি এলেই তো মাংসের টুকরোগুলো ধুয়ে ভেসে যাবে! 
তখন?  
এই দেড়হাত দূরত্ব পেরিয়ে হয়তো একসময় ও-মাংসের কাছাকাছি পৌঁছেই যেত। কিন্তু বৃষ্টি এলেই তো সব ভেস্তে যাবে! ব্যথা আর হতাশার ক্লান্তিতে চোখ বুঁজে এল ওর। হাঁপানোর শক্তিটুকুও যেন ক্রমশ নিঃশেষ হয়ে আসছে। বৃষ্টি আসার আগেই, মাংসের কাছে পৌঁছানোর আগেই কি ও-ঢলে পড়বে মৃত্যুর কোলে? চোখ দুটো যেন আরও বেশি করে এঁটে এল। এবং আশ্চর্য হয়ে ভুলু ওর এঁটে যাওয়া চোখের তারায় খেলা করতে দেখলো অজস্র রঙ। রঙেরা দুলতে-দুলতে ছড়িয়ে যাচ্ছে, আবারও একত্রিত হয়ে ঘূর্ণির মতো পাক খেয়ে খেয়ে রূপ নিচ্ছে একটি বিশাল বৃত্তে। ওর ভাল লাগলো। ভীষণ আরাম বোধ হলো। মনে হলো যেন ও-ওই বৃত্তের রঙে ডুবে যাচ্ছে। বৃত্তটি ওকে মাঝখানে নিয়ে ঘুরতে-ঘুরতে ক্রমশ ছোটো হতে লাগলো। ছোটো হতে-হতে একসময় একটি ছোট্ট ফোঁটায় রূপান্তরিত হয়ে মিলিয়ে গেল। ভুলু তখন আর ওর অস্তিত্ব খুঁজে পেল না। তার মানে কি ও-আর নেই! মিশে গেছে? নিঃশেষ হয়ে গেছে? মৃত ও? 

মৃত শরীর কি কারও স্পর্শ অনুভব করতে পারে? ভুলুর সারা গা কে যেন আলতো ছোঁয়ায় ভরিয়ে দিচ্ছে! ওর লোমশ শরীর মৃদু শিউরে উঠলো। অসাড় শরীরের মধ্যভাগে যে স্তন্যচিহ্নগুলো আছে, ওগুলোতে কে হাত বোলাচ্ছে? হাত বোলাতে-বোলাতে খামচে চিপে দিচ্ছে কে? ও-চোখ খুলতে চাইলো, পারলো না। মৃতরা তো চোখ খুলতে পারবেই না। এই অতি স্বাভাবিক ব্যাপারটা কেন যে ভুলু বুঝতে পারছে না! ও-আবারও চোখ খোলার চেষ্টা করলো। যথারীতি ব্যর্থ হলো। এমনসময় প্রচণ্ড শব্দে কোথাও বাজ পড়ার আওয়াজে চমকে উঠলো চারিদিক। চমকে উঠলো ভুলু এবং ওর গায়ে স্পর্শ ছড়িয়ে দেয়া হাতটিও। নিকষ অন্ধকার রাতকে নিঃস্ব করে দিয়ে নিভে গেল ল্যাম্পপোস্টের তীর্যক আলোটুকুও। শুরু হল তুমুল বর্ষণ। বর্ষণের তীব্র আঘাতে চোখ খুলে গেল ভুলুর। অন্ধকারে অন্ধকার মূর্তিটি ওর গায়ে হাত রেখেই ভিজছে। তবে বোধহয় বর্ষণের তীব্রতা ওর হাতের সঞ্চালন থামিয়ে দিয়েছে। ঊর্ধ্বমুখী হয়ে থম ধরে বসে আছে লোকটি। ভুলু একটু নড়ে ওঠার চেষ্টা করতেই ও-সজাগ হলো। সজাগ হয়ে হাতড়াতে লাগলো ভুলুর দেহ। যেন কিছু খুঁজছে। খুঁজতে-খুঁজতে পেয়েও গেল। এবার আর পুরো দেহে নয়, ভুলুর যৌনাঙ্গে লোকটির আঙুলের ছোঁয়া মোলায়েম থেকে মোলায়েমতর, তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠল। 

পুরো চরাচরে আলোকিত হয়ে উঠলো বিদ্যুৎ চমকে। দু'ঝলক, তাতেই ভুলু দেখতে পেল সেই লোকটি। ওর চুল দাড়ির জঙ্গল বেয়ে চোঁ-চাঁ করে বৃষ্টির ধারা বইছে। ও-উলঙ্গ। উলঙ্গ উত্থান ও-এক হাতে ধরে ভুলুর শরীরে উপবেশনে প্রস্তুত। 

এখন আর আলোর ঝলকানি নেই। কিংবা হয়তো আছে। এই দুই ক্ষুধার্ত জীবের কাছে হয়তো এখনও তা পৌঁছায়নি। পৌঁছালে ভুলু দেখতে পেত, মাংসের টুকরোগুলো জলে গড়িয়ে একেবারে ওর নাগালের মধ্যে এসে গেছে। লোকটিও হয়তো ওর যৌনাকাঙ্ক্ষার সঙ্গীর মুখে মাংসের টুকরো তুলে দিয়ে আহ্লাদের বহিঃপ্রকাশ করতো। 
নাঃ, প্রকৃতি এত নিষ্ক্রিয় নয়। একটু আলো জ্বাললো বাজের পূর্বক্ষণে। ভুলু মশলা হারানো কয়েকটুকরো মাংস জিভ দিয়ে টেনে মুখে পুরে নিল। আর লোকটি? 
উল্লাসে বিদঘুটে কিছু শব্দ ছুঁড়ে দিয়ে নেতিয়ে পড়লো ভুলুর পাশে। ততক্ষণে পথের ওপর ঘাস, ঘাসের ওপর নদীর মতো জল জমেছে। ওরা ভাসছে ওই জলে। ওরা জানে না, বৃষ্টি কখন থামবে। জানার অবস্থায় ওরা কখনও ছিল না,  এখনও নেই।

Comments

Post a Comment