ঠোঁটের উপর ঠোঁট রাখলে অবাধ্য কথারা শান্ত যখন হয়ে যায়; স্নায়ুতন্ত্রে বাজতে থাকে রবিশংকরের সেতার। হাতের উপর হাত রাখলে উষ্ণতার পরিচলন-স্রোতে কোথাও একটা শূন্যতা তৈরি হয়, যেখানে স্থাপিত হয় সৃষ্টির বীজমন্ত্র। পারিজাত উদ্যানে প্রথম যেদিন প্রেমের ফুল ফুটেছিল, সেইদিন শিহরিত হয়েছিল নীল দেবদারু। পবিত্র বৈদিক জলে স্নান করে গড়ে উঠেছিল সভ্যতা। ধ্বনিত হয়েছিল ঋকবেদের মন্ত্র। তপবনের লতা-গুল্ম-বিটপীদের সীমাহীন আনন্দের ছায়া পড়েছিল সরস্বতী-সিন্ধু- গঙ্গার নীল জলে। স্নিগ্ধতার রেশমি সুতো যে-আঙুলে জড়িয়ে থাকে না, সেই আঙুল প্রেমের সঞ্জীবনী সুধা কি কখনও দিতে পারে? নীলকন্ঠ পাখির পালকের অপেক্ষায় কেটে যায় একটা-একটা দিন। ডানায় নীল কুয়াশা মেখে যে-রাতজাগা পাখি শেষরাতে উড়ে গেল, সে-ই জানে রাতশহরের রূপকথার গল্প। পূর্ণচন্দ্রের আলোমাখা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আমি গ্রহণ লাগার অপেক্ষা করি...এ আমার অনন্ত কালোর কাছে আত্মসমর্পণের অপেক্ষা। সাদা-কালো রঙে মোড়া এ-জীবনের বাকি রঙগুলো পরিযায়ী পাখির মতোই সময়ের সঙ্গে ঘুরে-ঘুরে আসে। লুকিয়ে রাখা মনের ব্যথাদের চিরগোপনে রাখার জন্যই এত রঙে আঁকিবুকি কাটা একটা গোটা জীবন! শিবকুমারের সন্তুরের আলাপ-পর্বে আমার মরিচরঙের শাড়িতে ফুটে ওঠে একটা-একটা করে হলুদ-গোলাপি টিউলিপ। রাগ চারুকেশীর অমোঘ টানকে উপেক্ষা করার শক্তি আমার নেই! সময়রেখা ধরে মাঝেমাঝে পিছিয়ে চলে যাই বৈদিক যুগে—শুনতে পাই কাশ্মীর উপত্যকায় বেজে চলেছে শততন্ত্রী বীণা। স্মৃতিপথের অলিতে-গলিতে যে-দীর্ঘশ্বাসরা জমাট বেঁধে আছে সেখানে মীড়,গমক আর গিটকিরির অলংকরণে তাজা বাতাস ঢোকে। প্রেম-সহমর্মিতা-ক্ষমা আর শুদ্ধতাকে আলোহীন ছায়ারা বড়ো ভয় পায়। আমার অজস্র না-বলা কথা উদ্ধত শাখার ডগায় রোডোডেনড্রনগুচ্ছ হয়ে ফুটে থাকে।
Comments
Post a Comment