জগা পাগলা তো জগা পাগলা। তার না-আছে দিক-বিদিক জ্ঞান, না-আছে শরম-বেশরম। তবে চুলে রুপোলি রঙ ধরতেই ভাবতে পারছে, এই যা! আর ভাবনারই কি দিক- বিদিক আছে? যা দেখে, তাই তার ভাবনার চোরাকুঠুরিতে সেঁধিয়ে যায়। নিজেই দেখে, নিজেই ভাবে, নিজেই হাসে, নিজেই অবাক হয়।
জগা পাগলা তো জগা পাগলা, ভবা পাগলা । কিন্তু এই অর্বাচীন? সেই-বা জগা পাগলার চেয়ে কম কিসে! এই যে আমি, হ্যাঁ আমি—আমি, আমরা। আমি-তুমি-সে এবং ইত্যাদি-ইত্যাদি, সকলেই তো অর্বাচীন। আর এই আমাদের মতো অর্বাচীনদের নিয়ে হয়েছে বিপদ। বোধবুদ্ধি আছে, কিন্তু নেই। বুদ্ধির গোড়ায় ধুঁয়ো ঠেসে বেশ চাগাড় দিয়ে বোধটাকে ধরতে যাও—ফুস!
ধুউউউউস।
বোধ নিয়ে হয়েছে যত ঝক্কি। বসন্তের হাওয়া মারতেই গোটা বাংলা বোধের ঝুড়িটা কুলুঙ্গিতে তুলে রেখে খেপে ওঠে ভাষা-ভাষা করে। তখন পুরোনো টিনের বাক্স থেকে বাংলা ভাষাকে বের করে আনে। শুরু হয় ভাষা নিয়ে খেলা। আ মরি বাংলা ভাষা—হা-হা-হা। বছর-বছর বেশ জমে খেলাটা। এ-খেলা কেমন খেলা, চলুন উঁকি মেরে দেখে আসি।
ধুউউউউস।
বোধ নিয়ে হয়েছে যত ঝক্কি। বসন্তের হাওয়া মারতেই গোটা বাংলা বোধের ঝুড়িটা কুলুঙ্গিতে তুলে রেখে খেপে ওঠে ভাষা-ভাষা করে। তখন পুরোনো টিনের বাক্স থেকে বাংলা ভাষাকে বের করে আনে। শুরু হয় ভাষা নিয়ে খেলা। আ মরি বাংলা ভাষা—হা-হা-হা। বছর-বছর বেশ জমে খেলাটা। এ-খেলা কেমন খেলা, চলুন উঁকি মেরে দেখে আসি।
মুঠোফোনে ইংরেজি গান বাজতেই চতুর্দশী কন্যা আঙুল ছুঁয়ে কানে দিল, হ্যালো—
ওপার থেকে ভেসে এলো লোলচর্ম কণ্ঠ—দিদি, কী করছো?
—ও, দিদুন? আমি এখন বেঙ্গলি রাইম পড়ছি। কাল ল্যাঙ্গুয়েজ ডে না কী একটা আছে না? মিস সেজন্য আমাকে একটা রাইম বলতে বলেছে।
—হ্যাঁ, কাল তো মাতৃভাষা দিবস। ও-ও, তুমি কবিতা আবৃত্তি করবে? বাঃ বেশ-বেশ। আমাকে একটা ছবি পাঠিয়ে দিও।
—মম বলছিল কাল নাকি ফ্লাওয়ার অর্নামেন্টস পরতে হয়। তাই আমার জন্য ভেল অর্ডার করেছে। ওই ছোটো-ছোটো হোয়াইট কালারের ফুল হয় না, সেই ফুল।
—তাই নাকি!
সঙ্গে-সঙ্গে নিকটে আরেকটি স্বর শোনা গেল—কার সঙ্গে কথা বলছো রিচা?
—দিদুনের সঙ্গে মম।
ওপার থেকে ভেসে এলো লোলচর্ম কণ্ঠ—দিদি, কী করছো?
—ও, দিদুন? আমি এখন বেঙ্গলি রাইম পড়ছি। কাল ল্যাঙ্গুয়েজ ডে না কী একটা আছে না? মিস সেজন্য আমাকে একটা রাইম বলতে বলেছে।
—হ্যাঁ, কাল তো মাতৃভাষা দিবস। ও-ও, তুমি কবিতা আবৃত্তি করবে? বাঃ বেশ-বেশ। আমাকে একটা ছবি পাঠিয়ে দিও।
—মম বলছিল কাল নাকি ফ্লাওয়ার অর্নামেন্টস পরতে হয়। তাই আমার জন্য ভেল অর্ডার করেছে। ওই ছোটো-ছোটো হোয়াইট কালারের ফুল হয় না, সেই ফুল।
—তাই নাকি!
সঙ্গে-সঙ্গে নিকটে আরেকটি স্বর শোনা গেল—কার সঙ্গে কথা বলছো রিচা?
—দিদুনের সঙ্গে মম।
কণ্ঠস্বর আরও কাছে এসে বললো, ফোনটা আমাকে দাও। যাও রাইমটা মুখস্থ করো।
ফোনটা মেয়ের হাত থেকে নিয়ে কণ্ঠে মধু ছড়িয়ে বললো, কেমন আছো মা?
—এই আছি! একলা মানুষ আবার কেমন থাকবে!
—কেন, অতসী তো আছে!
—তারও তো সংসার আছে, স্কুল আছে। বাচ্চাটা আছে। অতু স্কুলে যাওয়ার সময় দাদুভাইকে আমার কাছে রেখে যায়। সারাদিন আমার কাছেই থাকে। বিকেলে জামাই এসে নিয়ে যায়।
—ও, তাহলে তো ভালোই আছো। আবার একলা থাকো বলছো কেন!
—মানুষ তো একাই। দশের মধ্যে থাকলেও একা।
—মা, তুমি এমন সব কথা বলো না, মাথায় কিছুই ঢোকে না!
ফোনটা মেয়ের হাত থেকে নিয়ে কণ্ঠে মধু ছড়িয়ে বললো, কেমন আছো মা?
—এই আছি! একলা মানুষ আবার কেমন থাকবে!
—কেন, অতসী তো আছে!
—তারও তো সংসার আছে, স্কুল আছে। বাচ্চাটা আছে। অতু স্কুলে যাওয়ার সময় দাদুভাইকে আমার কাছে রেখে যায়। সারাদিন আমার কাছেই থাকে। বিকেলে জামাই এসে নিয়ে যায়।
—ও, তাহলে তো ভালোই আছো। আবার একলা থাকো বলছো কেন!
—মানুষ তো একাই। দশের মধ্যে থাকলেও একা।
—মা, তুমি এমন সব কথা বলো না, মাথায় কিছুই ঢোকে না!
ওপারের দিদুনের কানে ভেসে এল নাতনির কণ্ঠ। সে পড়ছে, "বাংলাটা কেন শেখানো হয় না ইংলিশে"। দিদুন আপন-মনে হাসে। তখনই মেয়ের স্বর শুনতে পেল, আজ কী রান্না করলে মা?
—একটু পুঁইচচ্চড়ি করেছি কাঁঠালের বিচি দিয়ে। আর লাউ-বড়ি করেছি। অতুদের একটু দেবো। জামাই খুব ভালোবাসে। তোর রান্না হয়ে গেছে?
—রান্নার মাসি এসে করবে। আজ তো হ্যারির জন্মদিন। সন্ধেবেলা পার্টি আছে।
—জন্মদিন বুঝি! তা ওকে একটু পায়েস করে দিস।
—আঃ মা, তুমি এত ব্যাকডেটেড না! আজকাল জন্মদিনে পায়েস হয় না। কেক আর ওয়াইন হয়।
—ও, হবে!
ওপার থেকে ফোঁস শব্দ হলো। তারপরেই বলে উঠলো, ওই বুঝি সবজি এল।
তখনও রিচা পড়ে চলেছে, বাংলাটা কেন শেখানো হয় না ইংলিশে।
অর্বাচীন সরে আসে জানালা থেকে। একা-একাই হাঁটতে থাকে। বাতাসে একদলা থুতু ছিটিয়ে বলে, ধুউউউউউস।
—একটু পুঁইচচ্চড়ি করেছি কাঁঠালের বিচি দিয়ে। আর লাউ-বড়ি করেছি। অতুদের একটু দেবো। জামাই খুব ভালোবাসে। তোর রান্না হয়ে গেছে?
—রান্নার মাসি এসে করবে। আজ তো হ্যারির জন্মদিন। সন্ধেবেলা পার্টি আছে।
—জন্মদিন বুঝি! তা ওকে একটু পায়েস করে দিস।
—আঃ মা, তুমি এত ব্যাকডেটেড না! আজকাল জন্মদিনে পায়েস হয় না। কেক আর ওয়াইন হয়।
—ও, হবে!
ওপার থেকে ফোঁস শব্দ হলো। তারপরেই বলে উঠলো, ওই বুঝি সবজি এল।
তখনও রিচা পড়ে চলেছে, বাংলাটা কেন শেখানো হয় না ইংলিশে।
অর্বাচীন সরে আসে জানালা থেকে। একা-একাই হাঁটতে থাকে। বাতাসে একদলা থুতু ছিটিয়ে বলে, ধুউউউউউস।
(চলবে)
Comments
Post a Comment