জো উইন্টার ১৯৪৩-এ লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। লন্ডনের বিভিন্ন সেকেন্ডারি এবং কম্প্রিহেন্সিভ স্কুলে ১৯৬৭ থেকে ১৯৯৪-এর জানুয়ারি পর্যন্ত ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য পড়িয়েছেন। শিক্ষকতার কাজে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে ১৯৯৪-এ কলকাতায় আসেন, বাংলা ভাষা শেখেন এবং রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দ অনুবাদ শুরু করেন। তাঁর মনে হয়েছিল, রবীন্দ্রনাথ যদিও মূল গীতাঞ্জলি-র কিছু কবিতা খুবই প্রাঞ্জল ও ভাবগম্ভীর ভাষায় ইংরেজি গদ্যে প্রকাশ করেছেন; যে-গদ্য বলা চলে প্রার্থনার গদ্য, তবুও তাঁর সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত এই কবিতাগ্রন্থটির প্রত্যেক অর্থাৎ ১৫৭টি কবিতাই— যা মণিমুক্তার মতো উজ্জ্বল, ঔজ্জ্বল্যের একটানা সিরিজ একটা এবং যে-সমগ্রতা আসলে এক পবিত্র-গ্রন্থেরই নামান্তর মাত্র; ইংরেজি ভাষায় মূলের সংগীত ও সৌন্দর্য রক্ষা করেই অনূদিত হওয়া উচিত। রবীন্দ্রনাথের কবিতার প্রতি প্রগাঢ় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা থেকেই নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি সেই কাজটি করলেন। আলোচ্য অনুবাদগ্রন্থটির ভূমিকায় তিনি যা বলেছেন, কবিতাকে যাঁরা ভালোবাসেন, তাদের কাছে তা সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য—"Prose with a poetic touch and refrain-like repetition allows something of the beauty of the original to come across. There is something else, of the oratory of prose, that has its own appeal... Let Edward Thompson, then, the poet's first western interpreter, introduce the collection here, the poems were written to be sung, but they sing themselves."
১৯৯৮ সালে অধ্যাপক পুরুষোত্তম লাল-এর প্রসিদ্ধ প্রকাশনা সংস্থা Writers' Workshop জো উইন্টার-এর The Gitanjanji of Rabindranath Tagore অনুবাদগ্রন্থটি প্রকাশ করে, যেখানে গীতাঞ্জলি-র ১৫৭টি কবিতার ছন্দোবদ্ধ, সঙ্গীতময় এক অনিন্দ্যসুন্দর অনুবাদ-বাহিত হয়ে আমাদের তথা পাশ্চাত্যের এবং অ-বাংলাভাষী পাঠককুলকে মুগ্ধতার শিখরে পৌঁছে দেয়। এই অনুবাদগ্রন্থটিই ২০০০ সালে লন্ডনের Anvil Press Poetry Ltd. প্রকাশ করে Song Offerings : Gitanjali শিরোনামে। দুটি গ্রন্থেই একই ভূমিকা। দুটি গ্রন্থই গৌরী আইয়ুব-কে উৎসর্গ করা।
রবীন্দ্রনাথের অন্যান্য ৭৪টি কবিতার অনুবাদ-সম্বলিত তাঁর আরেকটি বই The Golden Boat ১৯৯৮ সালে ওই Anvil-ই প্রকাশ করে। এখানে রয়েছে আফ্রিকা, উর্বশী, যেতে নাহি দিব, মেঘদূত, অহল্যার প্রতি, সোনার তরী, চিত্রা, ১৪০০ সাল, অভিসার, কর্ণ-কুন্তী সংবাদ, কৃষ্ণকলি, হারিয়ে যাওয়া, প্রথম দিনের সূর্য, দুঃখের আঁধার রাত, তোমার সৃষ্টির পথ ইত্যাদি কবিতার অসামান্য উজ্জ্বল অনুবাদ। জো আমার বাড়িতে এসে বইটি আমাকে দেন। প্রথম পৃষ্ঠায় লেখেন—"To Pranesh—The spirit of Badkulla is ever with me.—Joe." আর Song Offerings : Gitanjali বইটি তো আমাকে আগেই দিয়েছিলেন।
জো উইন্টার লিপিকা-র অনুবাদও করেন। বইটি Macmillan India প্রকাশ করেছিল। তাছাড়াও, দেবদত্ত জোয়ার্দারের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে রবীন্দ্রনাথের আত্মপরিচয় অনুবাদ করেন। এই গ্রন্থটি বিশ্বভারতী প্রকাশ করেছে। এরপর জীবনানন্দের কবিতার একটি ইংরেজি অনুবাদ-সংকলন Jibanananda Das : Naked Lonely Hand প্রকাশিত হয়, লন্ডনের Anvil প্রকাশ করে। জীবনানন্দের রূপসী বাংলা-রও অনুবাদ করেন জো উইন্টার Bengal, the Beautiful গ্রন্থে। এটিরও প্রকাশক Anvil-ই। এরপর লালনের ২৫টি কবিতার ইংরেজি অনুবাদ পাই আমরা জো উইন্টারের Lalon Fakir at the Kolkata Book Fair গ্রন্থে, প্রকাশক রাইটার্স ওয়ার্কশপ। জো ইংল্যান্ড থেকে ভারতে ফিরে, আমার বাড়িতে এসে Naked Lonely Hand গ্রন্থটি আমাকে দিয়েছিলেন। বইয়ের প্রথম পাতায় লিখেছেন—"To Pranesh with respect and affection—Joe, 14.03.03"। আজ পর্যন্ত জো-র যত বই বেরিয়েছে, তার সব আমাকে দিয়েছেন। এমনকি ২০২৩-এও প্রকাশিত ওঁর কবিতার বই Singing in Mariupol ( রাইটার্স ওয়ার্কশপ, কলকাতা) আমাকে ইংল্যান্ড থেকে ডাকযোগে পাঠিয়েছেন, সঙ্গে একটি চিঠি (২.৮.২০২৩)। অন্যান্য কথার সঙ্গে সেখানে লিখেছেন—"Just this morning I re-read the two poems of yours I translated so long ago, and one of them has lain at the back of my head all this time, nearly thirty years, a dot of immense strength. My Fire is not yet Extinct is a magnificent credo." চিঠিতে দুটো অনুবাদ-কবিতার উল্লেখ করেছেন, আসলে তিনটি, আগেই লিখেছি কোন-কোন কবিতা।
জো যখন প্রথম ভারতবর্ষে আসেন, অর্থাৎ সেই ১৯৯৪ সালেই, আমাকে ওঁর আত্মজীবনী The Green Box উপহার দিয়েছিলেন। এই অসামান্য বইটি আমাকে ভিতরে-ভিতরে অনুপ্রাণিত করেছিল আমার আত্মজীবনী লেখার জন্য। আরও যে-সব আত্মজীবনী আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে, সেগুলি হলো নীরদচন্দ্র চৌধুরী-র The Autobiography of an Unknown Indian, ডম মোরেজ-এর My Son's Father, ষষ্ঠী ব্রাটা-র My God Died Young, মণীন্দ্র গুপ্ত-র অক্ষয় মালবেরী, রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্ত-র সেকালের কথা এবং কমলেশ পাল-এর আমার আয়নামহল । জাঁ জাক রুশো-র The Confession, যে-গ্রন্থের শুরুতেই রুশো বলছেন—"I have resolved on an enterprise which has no precedent, and which, once complete, will have no imitator. My purpose is to display to my kind a portrait in every way true to nature, and the man I shall portray will be myself."—সেটিও আমাকে উসকে দিয়েছিল অবশ্যই। শেষ বাক্যটিই খুব গুরুত্বপূর্ণ, অর্থাৎ, যে-মানুষটি এই আত্মজীবনীতে অঙ্কিত হচ্ছে, সে হবে এই আমিই। আমি আমার ভাঙাচোরা জীবন-এ সেই কাজটিই করার চেষ্টা করছি।
আগেই উল্লেখ করেছি, আমি যে-স্কুলে শিক্ষকতা করেছি অর্থাৎ কৃষ্ণনগর শহরের কালীনগর উচ্চ বিদ্যালয়; সেখানে জো উইন্টার কিছুদিন স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছেন, অর্থাৎ পড়িয়েছেন। সে-সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা তিনি তাঁর Calcutta Song (সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ২০১২) গ্রন্থে ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন—"In a month or two however I found myself teaching a day a week at a state school in a town three hours away by packed train. These were full Wednesdays. It is almost with bared teeth that I recall the train; but the school was a place, however different from the plush classroom blocks I was used to in London, where I could be at ease. Whether thirty students to a classroom or a hundred and six, I was the same person in it, I suppose, as I had been before.
... In a school I was not abroad. So I went to Kalinagar High School, on the outskirts of Krishnagar, with a boys' class in three figures and another seventy graceful sari-clad girls, many from poor farms; and despite the rigours of the journey I guess I woke up a touch.
... I find myself reluctant to recount school anecdotes.
... But I must say something to recognise the special quality of the places that took me on; and in Kalinagar High it was the quiet common sense of the staffroom, that showed friendship but not excessive interest, people having work to do."
এই Calcutta Song গ্রন্থটিতেই লেখক আমার গ্রাম ও আমার সম্পর্কে দু-একটি কথা বলেছেন, যা আমি পাঠকের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। বইটির ২২১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন—"Badkulla is a small village near the town of Krishnanagar some three hours' train-ride from Calcutta. Its name means "No Tax", from a revolt against demanding landlords in the early nineteenth century. Part of my enjoyment in walking in it naturally came from that alone. I was re-acquainted with a simple truth of my childhood there, observing the pace at which life was lived, the neighborliness, the lack of ostentation. Of couse, there was a whiff of malice and unpleasant politics about, of neglects by the state government, of all the dark shenanigans of life everywhere.; but for me there was something holy there too. My friend Pranesh, an award-winning poet, has lived in Badkulla all his life, and to a very small extent I was able to see it through his eyes, as we walked round. He lived with his widowed sister and her two sons and their house and garden was a place of light."
জো ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারিতে আবার ভারতে অল্পসময়ের জন্য এসেছিলেন, আমার বাড়িতেও একদিন অলোক (কবি ও শিক্ষক অলোক বিশ্বাস)-এর সঙ্গে এসেছিলেন, অনেকক্ষণ ছিলেন, একসঙ্গে আমরা দুপুরের খাবার খেলাম, তারপর নানা আলোচনা হলো, নতুন কবিতা পড়লেন, আমিও নতুন কবিতা পড়লাম ওঁর অনুরোধে, তারপর সন্ধ্যার আগেই অলোকের মোটরবাইকে চেপে চাকদহে অলোকের বাড়ি চলে গেলেন। ইংল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার আগে একদিন আমাকে লাঞ্চে নিমন্ত্রণ করলেন ক্যালকাটা ক্লাবে। ওখানেই ছিলেন সেবার। আমি গিয়েছিলাম, অলোকও সস্ত্রীক এসেছিল। বেশ জমাটি আড্ডা আর খাওয়াদাওয়া হলো। আমরা ফিরে আসার একটু আগে পবিত্র সরকার এলেন। তাঁর সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করে আমরা বিদায় নিলাম।
১২ মার্চ ২০২৩-এ 'সংবাদ প্রতিদিন' দৈনিকে চিন্ময় গুহ জো উইন্টার-কে নিয়ে, মূলত ভারতে তাঁর রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দ অনুবাদ নিয়ে 'খেয়া পারাপার' শীর্ষক একটি মনোগ্রাহী নিবন্ধ লেখেন। ওই একই পত্রিকায় চিন্ময় গুহ-র নিবন্ধের পাশাপাশি পবিত্র সরকার-ও জো উইন্টার-কে নিয়ে লেখেন অন্য একটি নিবন্ধ—'রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুভয় দূর করেছেন'। চিন্ময় গুহ তাঁর নিবন্ধের শেষাংশে লিখেছেন—"...এই শহরেই থেকে গিয়েছেন, বাঙালি বধূকে নিয়ে দ্বিতীয়বার সংসার পেতেছেন, পুরুষোত্তম লালের রসগ্রাহিতায় একটির পর একটি বই প্রকাশ করে ও ধীরে ধীরে কিছু গুণীজনের ভালবাসা পেয়ে। কলকাতায় অভ্যস্ত হতে থাকার কাহিনি বিবৃত আছে 'ক্যালকাটা সং'-এ। অনিঃশেষভাবে সহযোগিতা করেছেন কয়েকজন কবি ও শিক্ষক। যেমন— বাদকুল্লার প্রাণেশ সরকার, চাকদহের অলোক বিশ্বাস, 'আত্মপরিচয়'-এর ক্ষেত্রে দেবদত্ত জোয়ারদার। আমরাও এঁদের কাছে ঋণী।"
জো বর্তমানে অসুস্থ। ওঁর জিভের গোড়ায় ক্যান্সার ধরা পড়েছে। লন্ডনে চিকিৎসা চলছে। কিন্তু অদম্য প্রাণশক্তি ওঁর। উনি আবারও আমাদের কাছে আসতে চান। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, আশা করি, জো উইন্টার-এর এইটুকু আশা পূরণ করবেন।
আমার কলেজ-জীবনেরই আর এক বন্ধুর উল্লেখ করবো। সে হচ্ছে শক্তিনগরের দিলীপ সান্যাল। স্বর্গত কবি ও শিক্ষক এবং বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর বন্ধু পরেশনাথ সান্যাল-এর মধ্যম পুত্র। দিলীপ বরাবরই খুব হাসিখুশি, নির্মল স্বভাবের মানুষ। সেই কলেজের দিনগুলো (১৯৬৯-৭০) থেকে আজ পর্যন্ত আমরা মানসিক ও আত্মিকভাবে খুব কাছাকাছি আছি। বরাবরই সে আমার লেখা পছন্দ করে এবং আমার বই প্রকাশের ব্যাপারে এক সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করে। তার এই ঋণ অপরিশোধ্য। দিলীপ খুব ভালো একজন পাঠক। দেশবিদেশের নানা বই সে পড়ে এবং সঙ্গীতের সে একজন রসজ্ঞ বোদ্ধা। জীবনের নানা সংকটেও টলে যায় না দিলীপ। ওর বন্ধুত্ব আমার জীবনের এক পরম সম্পদ।
২০০১-০২ সাল। কবি প্লাবন ভৌমিক তখন হলদিয়ায় কর্মরত। ওর কাছে এক তরুণ শিল্পী স্বপন মল্লিক-এর নাম শুনেছিলাম। সে তখন হলদিয়ার সেন্ট্রাল স্কুলের শিক্ষক। প্লাবনের হাতে আমার কবিতার বই আমি আবার কথা বলছি-র একটা কপি পাঠিয়েছিলাম, স্বপনকে দেওয়ার জন্য। স্বপন বইটি পড়ে মুগ্ধ হয় এবং ওই বইয়ের 'দেবদূত' কবিতাটি অবলম্বনে ছবি আঁকে। আরও কয়েকজন কবির কবিতা অবলম্বনে ছবি আঁকে সে। তারপর সেই ছবিগুলি, পাশে কবিতা-সহ, অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এর সাউথ গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়। আমন্ত্রিত হয়ে, সেই সোলো একজিবিশনে গিয়ে ছবি দেখে আমি তো অভিভূত! পরে স্বপন ছবিটি আমাকে উপহার দেয়। সেই থেকে তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক। ওর স্ত্রী শর্মিষ্ঠা মাইতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে স্নাতকোত্তর এবং সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকেও উত্তীর্ণ। শর্মিষ্ঠা একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, কলা-সমালোচক এবং চলচ্চিত্র-নির্মাতা। সে দু'বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। তার তৈরি চলচ্চিত্র আমি দেখেছি; এবং শর্মিষ্ঠা মাইতি ও রাজদীপ পাল পরিচালিত ওড়িয়া ছবি 'মালাই'-তে আমি অভিনয়ও করেছি। ওডিশার সোরো নামক জনপদে সেই সিনেমার শ্যুটিং হয়েছিল। স্বপন বহুদিন হলো হলদিয়ার চাকরি ছেড়ে দিয়ে দমদম আর্ট কলেজে অধ্যাপনা করছে। তিন-তিনবার তার ছবির একক প্রদর্শনী হয়েছে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এ। দু'বার সে গভর্নরস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে, বরোদা থেকেও অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। দেশেবিদেশে তার ছবি বিক্রিও হচ্ছে। এই দম্পতি আমাকে দাদা বলে মান্যতা দেয় ও সম্মান করে। আমি কলকাতায় গেলে, ওদের টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটেই থাকি। ওদের শ্রীরামপুরের অমূল্যকাননের আবাসনেও গিয়েছি। ওরাও এসেছে আমার বাড়িতে। কতবার যে স্বপনের সঙ্গে শান্তিনিকেতনে বেড়াতে গিয়েছি, তার হিসাব নেই। স্বপন শুধু ছবিই আঁকে না; সে বেশ প্রতিষ্ঠিত কবি ও প্রাবন্ধিক। তার লেখা শিল্পসম্বন্ধীয় প্রবন্ধের বইগুলোর চাহিদা আছে ছবি-আঁকিয়ে ও ছাত্রমহলে। এদের দু'জনেরই ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল—এই প্রত্যয় আমার আছে। স্বপন মল্লিক-এর প্রথম কবিতার বই ইচ্ছাপত্রে আত্মহত্যা-র প্রবেশক কবিতাটি এখানে তুলে দিচ্ছি আমি। পাঠক বোধহয় স্বপনের কবিতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করতে পারবেন।
উল্কাপাতের দিকবিদিক নির্ণয় করে বুঝেছি
তুমি ভেতরে ভেতরে নিদারুণ উষ্ণ, চারিদিকে শুধু কূটাভাস
স্বপ্নময় চাঁদ তোমার খোঁপার কাঁটায় আটকে গেছে,
কাকে যে বলি আমার এ বেঁচে থাকার যন্ত্রণা, আমার অজস্র মুদ্রাদোষ
স্বপ্নে দেখি বাতাস উড়ছে তোমার বিনুনি—
ধূ-ধূ বালিয়াড়িতে লুটোচ্ছে তোমার মুখ, তেপান্তরে হারিয়েছে স্তন,
ঘুম ভাঙতেই বুঝি, তুমি ভেতরে ভেতরে বেশ উষ্ণ
ভাবি তোমাকে ছোঁব, হাত বাড়ালেই ঘটে যায় অযথা উল্কাপাত
আর নয়, এই রাখলাম আমি ইচ্ছাপত্রে আত্মহত্যা...
(ক্রমশ)
Comments
Post a Comment