ওহে বৃন্দা, অনেকদিন ধরেই ভাবছি তোমাকে কিছু বলার আছে আমার। হ্যাঁ, তুমি ভাবতেই পারো "তোমাকে বলার ছিল ভালোবাসি..."। তবে ঘর্মাক্ত প্রেম, স্বেদবিন্দুর অনিবার্য পতন, এসবের বাইরেও কিছু মালাগান আছে। আছে বাসি-বিষয়ের তুমুল বাসনা। এবং বাসনা যদি বাসনাতে-ই থাকতো, অযথা দড়ি-টানাটানির ক্ষুদ্রতায় না-সেঁটে থাকতো, তবে এ-লেখা নিষ্প্রয়োজন ছিল। তুমি তো জানো বৃন্দা, বহুকাল থেকেই সর পড়ছে চারপাশে; পাটকাঠির স্ট্র ছাড়াও কিছু সর ও স্বর শ্বেত-তরলের অন্তর্গত বহমানতা রটিয়ে দেয় হইহই করে! তেমনই ইতস্তত ভাসমান চাপচাপ উত্তাপহীন রক্তদলা অথই ধাক্কা দিচ্ছে। নাঃ, ভেজানোর গল্প নেই তাতে বিন্দুও। মেরুদণ্ড ঝুঁকে গেলে আসলে 'ভয়' গ্রাস করে। চূড়ান্ত এক নিরাপত্তাহীনতা গোগ্রাসে গিলতে গিয়ে বারবার বিষম; বারবার রঙের বিভাব। কত যে রঙ! কত যে স্তর! তোমাকে আগে বলিনি, কিন্তু আজ না-বলে পারছি না যে কিছুতেই! শোনো তবে, রঙিন মানুষের ভিতরও একটা রঙ খুব সন্তর্পণে তোমার পিঠে নিয়মিত ছুরির ডগায় আগুন জ্বালিয়ে নকশা আঁকছে তোমার উদার পিঠে, কাঁধে; বিভাজিকার খুব কাছাকাছিও কিন্তু। ওহে বৃন্দা, তুমি তাকে 'শিল্প' বলো। কৌলিন্যের ধারে ফালাফালা হতে-হতে নিজেরাই রক্তাক্ত। আপামর মানুষ কিন্তু জেনে গেছে রক্তক্ষরণের বিবিধ হরকত। এক নৌকোয় যে অনেকেই যাত্রী হতে পারে, সেকথা বেমালুম ভুলে যায় স্বঘোষিত কুলীনেরা; অতএব অবশ্যম্ভাবী নীতিশিক্ষার অকাল-তর্পণ। এসব ভেসে আসা ধন। হাতের পাতায় রাখা আবিরের মতো ফুঁয়ে আকাশে মেলে দেওয়াতেই লক্ষকোটি শান্তিবারি। জলদস্যুর জলকথার মতোই ঐশ্বরিক; পবিত্র। ওপারে অপার জানাজানি; রক্তারক্তি বৈঠকি আড্ডা। ওই যে আপামর মানুষ জল ভেঙে, বালি দুমড়ে, ঝর্না আঁকড়ে, জলের কোল জিভ দিয়ে চিরেছে-ছিঁড়েছে, জেনেছে; আর জেনেছে বলেই, আমি জানি যে, তুমি অনিবার্যভাবেই ভেবে নেবে "তোমাকে বলার ছিল ভালোবাসি..." কেউ-কেউ আসলে তোমাকে, তোমার প্রাণশক্তিকে প্রাণ ঢেলে মারতে চাইছে। মুছে ফেলতে চাইছে তোমার অনন্ত আলো। কে যেন বলেছিল, "সূর্যকে যতই আড়াল করার চেষ্টা হোক, সূর্য তার মতো আলোর সম্ভার নিয়েই থাকে। তুচ্ছতা তাকে স্পর্শও করে না..."; কে বলেছিল? ইন্দ্রা? যে-ই বলুক, বৃন্দা, জেনে রেখো, তুমি প্রবহমান নদী। সবটুকুই বয়ে নিয়ে যাও তোমার স্বভাবসুলভ। তাই, তোমাকে যারা বাঁধতে চাইছে, টেনে-হিঁচড়ে সরাতে চাইছে, তাদের তুমি চিনেও অচেনা থেকে যাও। সময় বহিয়া যায়...সময় হাসে; যেমন তুমি হাসছো!
তবু কেন যে মনে হলো, কথাগুলো রটে যাক। ওহে বৃন্দা, বেলা বইছে। এও জানি; শঠতা, চাতুর্য দিয়ে ক্যানভাস সাদা করা যায় ঠিকই; কিন্তু অন্তর্লীন সংলাপ বদলায় না। অভিসারের কত চিঠি অসৌজন্য-সময়ে কুটিকুটি হয়ে উড়ে যায়। তাতে কী! শিশুরা আর শিশু নেই। ওই যে, সারল্য ও সোহাগ তোমার জপমন্ত্র। যে জয়ী-ই, তাকে আলাদা করে ঢাকঢোলে জয়যাত্রা নিশ্চিত করতে হয় না। রঙবাজি, দলবাজিও না। আসলে, তুমি যে জয়ী, তা তো কখনও তুমি নিজেও জানো না। কিন্তু ওরা যত-যতবার তোমাকে নিয়ে আলোচনাসভা ও বিতর্কসভা বসায়, আমি নিশ্চিত, তখন তুমি আড়ালে হাসো। এবং এও ভাবো, "আমি কি এতটাই কেউ একটা, যাকে আড়াল করার জন্য আমারই আত্মজনেরাই বিভোর!" আমি নিশ্চিত, তুমি ভাবো। আমার খুব আশঙ্কা হয় জানো, তোমার এই তোমাকে জেনে যাওয়া আসলে লয়ে ক্ষয় আনতে পারে, অথবা ক্ষয়ে লয়! ওহে বৃন্দা, চলো না একবার তোমাকে নিয়ে তিস্তাপাড়ে বসে আরও একটা লেখা লিখি; চাই না সৌজন্য-সংখ্যা, বিশ্বাস করো!
তার আগে এটুকুই আপাতত তোমায় বলার, "ভালোবাসি"-র চেয়েও বেশি কিছু; তুমি এসব জেনো না। তোমার সারল্য, তোমার নিমগ্নতা তোমার চিরকালীন অলংকার; মুদ্রিত পাতার অলঙ্করণে নাই-বা থাক।
'স্খলন' শব্দে আমার বড়ো ভয়...
বাহ চমৎকার লিখেছেন কবি🍁
ReplyDeleteবাহ্ খুব ভালো লাগলো লেখাটা
ReplyDeleteমেরুদন্ড ঝুঁকে গেলে
ReplyDeleteআসলে
' ভয় ' গ্রাস করে
এই শব্দবন্ধ টুকুই সৃষ্টি করবে আজ কতো কথা , নীরবে
সারাটা
রাত ,
আমার মনের অন্তর্লীন
ভাবনায় 👌