বৈশাখের নিদাঘ উত্তাপে বিমর্ষ প্রকৃতির হরিদ্রাভ বৈকালে মনের উজান গমনে রিক্ততার ছোঁয়া। বাসন্তিকার পরশ এখনও লেগে আছে জারুল, অশোক, রাধাচূড়ার উদ্ধত শাখায়। বৈশাখের ধুলো মেখে দিকচক্র বালে উড়ে যায় গাঙচিল। এত দহন..এত জ্বলন...আর এরই মধ্যে কবিগুরুর আবির্ভাব এক নিগূঢ় অর্থবাহী। রবি ঠাকুরের আগমনে স্বয়ং সূর্যদেব নতজানু হন...আসে বর্ষা! কবিগুরুর অক্ষয় শব্দের বাণ শ্বাসরোধকারী নির্মেঘ আকাশে নিয়ে আসে জলদ-বার্তা! শুকনো পাতার নূপুর পায়ে চঞ্চলা বালিকার উদ্দাম কেশবিন্যাসে ওঠে ঝড়! শুরু হয় প্রলয়নৃত্য! স্বয়ং নটরাজ নেচে ওঠেন পৃথিবীতে শান্তির বাণী বর্ষণ করার জন্য। স্তব্ধ আকাশে ওঠে সিংহের নিনাদ...তার গর্জনে কেঁপে ওঠে মেদিনী...তার বিশাল লেজের আস্ফালনে ক্ষণে-ক্ষণে বেজে ওঠে শঙ্খধ্বনি! গুরুদেবের আবির্ভাবকাল! আমাদের মনের সব অশান্তি...সব ঝড়...থামিয়ে আমরা সিক্ত হই অলকানন্দায়।সর্পিল দামিনীর ক্ষিপ্র গতিতে জেগে ওঠে কবির তৃতীয় চক্ষু! কবি অপলক দৃষ্টিতে দেখেন প্রকৃতির লীলাখেলা। ব্ল্যাকহোলে আটকে থাকা আলোর খোঁজে মেতে ওঠেন কবি। ঝরে যাওয়া অমলতাসের হলুদ পাপড়ির মতো মনের সব ক্লান্তি যেন ঝরে পড়ে। ঘরের লোকের আঘাতের উত্তাপ এই দহনবেলার চেয়ে অনেক বেশি। ঘরের ভেতরে ছোঁড়া পাথরের অভিঘাতে যদি অবিচলিত থাকা যায়, তাহলে আর ভাবনা কিসের? আগুনের উপর পা ফেলে হাঁটা তো একটা অভ্যাস মাত্র! যদি মস্তিষ্ক জেনে যায় যে, শত ধাক্কাতেও বন্ধ ঘরের দরজা খুলবে না; তাহলে রবি ঠাকুরকে আশ্রয় করলেই এক ভাবনাবিহীন পালতোলা জীবন অতি-অনায়াসে যাপন করা যায়। দম্ভের উচ্চ শিখর থেকে যা দেখা যায় না; মাটির টানে...মাটির ঘ্রাণে...নেমে এলে তবেই জীবনের সহজপাঠ সহজ হয়ে যায়। আক্রমণকারী ব্যক্তিমনে যে-গভীর ক্ষত তৈরি করে, তাকে উপেক্ষা করাই শ্রেয়। প্রতিআক্রমণ না-করলে জীবন হয় অনেক শান্তির...অনেক সম্মানের। নিকষ কালো অন্ধকারের শেষে কোথাও একটা আলোর ফুল ফুটে থাকে। সবরমতী কালো পাথরের গায়ে ছলাৎ-ছলাৎ ঢেউ তুলে বয়ে চলে অনন্তের যাত্রাপথে। টিউলিপ বাগানের সব যন্ত্রণা শুষে নেয় ফ্লাই ক্যাচার আর তিতিরের দল। গীতাঞ্জলির হলুদ পাতার ফাঁকে জমাটবাঁধা অভিমান। ক্ষতস্থানের ক্র্যাটার থেকে উঠে আসে অনবদ্য সৃষ্টি।
Comments
Post a Comment