বৈশাখে তিনি এলেন না। মঞ্চের পাশে উঁকি দিচ্ছিলেন, কখন তাঁর প্রবেশ ঘটবে। অবশ্য জ্যৈষ্ঠিতে শুরু হলো আসা-যাওয়া। অনেকটা ভোটের প্রচারের মতো এলাকায়-এলাকায় সভা করে ফিরে গেলেন। বরষার ভরসায় আমরা আঙুল গুনি।
অর্বাচীন এসব ভাবে আর নিজের মনে ফিকফিক করে হাসে। ভাবে, কত কাণ্ডই-না হচ্ছে দুনিয়া জুড়ে। এই যেমন ক'দিন আগেই বিকেলের কাগজ বিক্রির ছেলেটির মতো কে হেঁকে গেল—যুদ্ধ যুদ্ধ।
এখন তো বিকেলের কাগজও নেই, হকারও নেই। কিন্তু নানাকিসিমের হাঁকটা আছে।
অর্বাচীন ভাবে। ভাবে আর গম্ভীর হয়ে যায়। নিজের সঙ্গে নিজেই সওয়াল করে।
—কার সঙ্গে কার যুদ্ধ?
—দেশের সঙ্গে দেশের। মানুষের সঙ্গে মানুষের। দেশপ্রেমের সঙ্গে অভাবের।
অর্বাচীনের এসব ভাল্লাগে না। ধুউউউস্ বলে উড়িয়ে দেবে, তাও হয় না। ফলে, তাকে ভাবতেই হয়। ভাবতে-ভাবতে চুলে জট পাকাতে হয়। তল খুঁজে পায় না। আর ভেবে করবেটা কী! ভাবনার সব হক নিয়ে রেখেছে কতকগুলো মানুষ। জনগণের কাজ শুধু ভেড়ার মতো এগিয়ে যাওয়া। যে উত্তম মেষপালক, তার পিছনেই তো মানুষ হাঁটবে। কিন্তু কে যে উত্তম মেষপালক, তার হদিসই তো মানুষ আজও পেল না!
অর্বাচীন এসব ভাবে আর নিজের মনে ফিকফিক করে হাসে। ভাবে, কত কাণ্ডই-না হচ্ছে দুনিয়া জুড়ে। এই যেমন ক'দিন আগেই বিকেলের কাগজ বিক্রির ছেলেটির মতো কে হেঁকে গেল—যুদ্ধ যুদ্ধ।
এখন তো বিকেলের কাগজও নেই, হকারও নেই। কিন্তু নানাকিসিমের হাঁকটা আছে।
অর্বাচীন ভাবে। ভাবে আর গম্ভীর হয়ে যায়। নিজের সঙ্গে নিজেই সওয়াল করে।
—কার সঙ্গে কার যুদ্ধ?
—দেশের সঙ্গে দেশের। মানুষের সঙ্গে মানুষের। দেশপ্রেমের সঙ্গে অভাবের।
অর্বাচীনের এসব ভাল্লাগে না। ধুউউউস্ বলে উড়িয়ে দেবে, তাও হয় না। ফলে, তাকে ভাবতেই হয়। ভাবতে-ভাবতে চুলে জট পাকাতে হয়। তল খুঁজে পায় না। আর ভেবে করবেটা কী! ভাবনার সব হক নিয়ে রেখেছে কতকগুলো মানুষ। জনগণের কাজ শুধু ভেড়ার মতো এগিয়ে যাওয়া। যে উত্তম মেষপালক, তার পিছনেই তো মানুষ হাঁটবে। কিন্তু কে যে উত্তম মেষপালক, তার হদিসই তো মানুষ আজও পেল না!
এই ক'দিন আগেই যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা হয়ে গেল, কার কত অস্ত্র, কে কার ঘাঁটি ধ্বংস করলো, এসব সিনেমার মতো ছোটোপর্দায় কয়েকদিন চললে। ওই দ্যাখো সুদর্শনচক্র ঘুরতে-ঘুরতে যাচ্ছে। ওই দ্যাখো শত্রুপক্ষের ড্রোন ধ্বংস করলো। কাট। নিচে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস। তাদের বাসস্থান নিশ্চিহ্ন। এদেশে একটাও জঙ্গি মরেনি। তারা বেড়াতে-বেড়াতে এসে দুমদাম গুলি চালিয়ে ছাব্বিশজনকে মেরে ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছে। অবশ্য শত্রুদেশের জঙ্গিঘাঁটিতে বেশ কয়েকজন মরেছে। মেরেছে, বেশ করেছে। না-মারলে চলে? বড্ড বেড়ে খেলছিল।
এসব খবরে আমজনতার শিরায়-শিরায় কেমন আগুনের গোলা ঘোরাফেরা করে। বলুন তো কতদিন আর বরফশীতল রক্ত বইতে হবে? এখন আমরা বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছি। অনেকদিন পর কুম্ভকর্ণের ঘুম ভেঙে দেশপ্রেমের পতাকা গায়ে জড়িয়ে দৌড়াতে শুরু করেছি। বড়ো-বড়ো প্রচারমাধ্যমগুলো তো যুদ্ধ বাধিয়েই দিয়েছিল। দেশের শাসকরা যতই বলুক, না-না আমরা যুদ্ধের দিকে যাচ্ছি না;
কিন্তু কে শোনে কার কথা! যুদ্ধের জিগির না-তুললে টিআরপি পড়ে যাবে না! তা'লে আমরা খাবোটা কী আর খাওয়াবোটাই-বা কী?
ওদিকে হলোটা কী, শত্রুদেশ চিন, ইরাক, আমেরিকার অস্ত্র ছোঁড়ে; আর ভারত রাশিয়া, ফ্রান্স, নিজেদের তৈরি অস্ত্র দিয়ে সে-সবের বারোটা বাজিয়ে দেয়। একটা চিনা বিমান তো এদেশের মাটিতেই ধ্বংস করলো। কে যেন বললো, চিনা মাল নিয়ে যুদ্ধ করবে? হেঁ-হেঁ। পয়সা দিতে পারবে না বলে পুরনো জঙধরা মাল রঙ করে বেচে দিয়েছে।
কিন্তু আমাদের বিজ্ঞানীরা অত হালকা চালে নিলেন না। তাঁরা ধ্বংস হওয়া বিমানের যন্ত্রগুলো পরীক্ষা করতে লাগলেন। এমন বিমান তো আমরাও তৈরি করছি। তাই বলে ওদের যন্ত্রগুলো কত বেশি উন্নত বা অনুন্নত , তা দেখবে না? এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে আছে?
দ্যাখো কাণ্ড। বেশ কোমর দুলিয়ে, কোলাব্যাঙের মতো গলার শিরা ফুলিয়ে, অন্যদেশের ছবি দেখিয়ে যুদ্ধ করছিল। মাঝখান থেকে হেডস্যারের মতো আমেরিকা ধমক দিল, অ্যাই যুদ্ধ বন্ধ কর। নো যুদ্ধ। অমনি দুই দেশ খাতায়-কলমে যুদ্ধ বন্ধ করে দিল। তবে রাতের অন্ধকারে যে ইতিউতি গুপগাপ চলছে না, এমন নয়। এসব চলছে, চলবে। তবে হেডস্যার না-দেখতে পেলেই হলো। তবে যে-সব প্রচারকগণ গণমাধ্যমে যুদ্ধ বাধিয়েছিল, দেশপ্রেমের বেশ বড়ো বাণিজ্য শুরু করেছিল, তারা চোখ ছলছল করে বসে রইলো।
অর্বাচীনের মাথার মধ্যে বুদ্ধির দরজাগুলো কেমন খুলতে শুরু করলো। কে যেন দরজার পাশ থেকে উঁকি দিয়ে বললো, আরে বাবা, পাক-ভারত যুদ্ধে আমেরিকার তো কোনো লাভ নেই। পাকরা অস্ত্র কেনে চিন, তুরস্ক, ইরান থেকে। আমেরিকার গুটিকয়েক অস্ত্র কেনে। আর ভারত মূলত রাশিয়া, ফ্রান্স থেকে অস্ত্র কেনে। ভারত নিজেই অস্ত্র বানিয়ে নেয়। তাহলে ওদের লাভটা কোথায়? কোনো লাভ নেই। তার উপর সৌদি, ইরানও যুদ্ধ চায় না। ওদের তেলের বাজারে ক্ষতি হবে। তাই ওরাও বললো, বড়দা একটা কিছু করো। ছোটো আর ওই উচ্চিংড়েটা কী ঝামেলা বাধালো বল দিকি! আমাদের কথা শুনছেই না। ওদের একটু ধমকে দাও তো।
বড়দা বললো, দেখছি।
দিল ধমক। ওমনি দু'জনে মুখে আঙুল দিয়ে বললো, জো হুজুর।
অর্বাচীন ফিকফিক করে হাসে।
অর্বাচীন ফিকফিক করে হাসে।
Comments
Post a Comment