বাকস্বাধীনতার কথা উচ্চারণ করতেই ঝুপ করে রাত নেমে আসে৷ নতুন রঙের গন্ধে পুরনো পালঙ্কে একফালি চাঁদ আলো নিয়ে আসবে কি আসবে না-র দোলাচলে নক্ষত্র হয়ে যায় এক-একটা ধুতরাফুল। দু'চোখে ঘুম নেই৷ কাঁধের হাড়ে ব্যথা নিয়ে তাকিয়ে থাকি। বাতাসে শ্বাপদের গন্ধ। ঘামে লেপ্টে দেয় আঁচড় কাটা হইচই৷
আমরা বড়ো জাদুঘরপ্রিয়। নিজেদের বিশেষ কিংবা বিশেষজ্ঞ দেখাতে বিষদাঁত বের করে কথা বলি। বলি অধিকারের কথা, বলি স্বাধীনতার কথা। ঝান্ডা হাতে হরতাল করে অনর্থক প্রহর। কেবল মাত্র এই কণ্টকগমনের জন্যই কি বিষপান? নাকি বাড়তি ঘরে দুটো জানালা সিলিং ছোঁবার আশায় অনবরত পর্দার মাপে গলা উঁচু করে আকাশ গিলে নিতে চায়?
—"আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পান"
মনে-মনে গান করি। প্রশ্ন গভীর হলে চোখে জল আসে। অন্ধকারে অসুখ বেড়ে যায়। নিজেকে দেওয়ার মতো যা-কিছু আছে, তার মধ্যে শব্দ-সুখ বরাবরই উল্লেখযোগ্য। শরীরের প্রতিটি পদ্মে যে-ব্রহ্মনাদ জন্মে ছিল, তার উচ্চারণে আদি-অনন্ত জেগে ওঠে। অথচ দুটো অস্থির হাত কেবল পেছনেই টেনে রাখে। পচা রাস্তায় কাদা মাখামাখি করে৷ গায়েও লাগিয়ে দেয় খানিক। যাকে বোধহীন কিংবা শিশুসুলভ আখ্যায় প্রশ্রয় দিই আর কুরেকুরে খেয়ে নেয় নিষ্পাপ ঘুমের চাদর৷
কোনো দুর্ঘটনা নয়, আমি দাঁড়িয়ে আছি এক অনুভূতিহীন মানচিত্রের মুখোমুখি। সেখানে কেউ বিদ্রোহ দেখায়। নির্ভার দায় আর অতিকথনে ভরে দেয় অন্তঃসত্ত্বা মেঘের শরীর৷ গলার জোরে বাজিমাত। থেঁতলে যায় মানসিক সুস্থতা। পাশাপাশি বিচার করে অত্যাচারের দাগ সংক্রান্ত মিছিলের৷ এখানে চুপ করে যাওয়া মানে আপোষ নয়। নীরব বিদ্রোহ।
কারণ, শব্দই ব্রহ্ম। শব্দেই ব্রহ্মাণ্ড জেগে থাকে, আশাহীন, নিরাশাহীন৷
রাত গভীর হলে, এই সবই আপন। ব্রহ্মাণ্ড হওয়া এতই কি সহজ? নিজেকে প্রতিষ্ঠা ভিন্ন যাদের সামান্য উদারতা নেই, তারা কীভাবে পৃথিবী হতে চায়? কীভাবেই-বা বৃক্ষ হবে? অতল প্রশ্ন। ঘুম এসে শুয়ে পড়ে পায়ের দিকে৷ মুখের ওপর একটা-একটা করে পাখি কাটা পড়ে সিলিংফ্যানের ব্লেডে৷
Comments
Post a Comment