এমন কেন সত্যি হয় না, আহা।"
ঘটে তো বটেই, সত্যি কি আর হয়? অর্বাচীন এসব নিয়ে আর ভাবে না। সে এখন হিসেব কষছে তার মতো অর্বাচীন আর ক'জন আছে। এই ভাদ্দর মাসের শেষপ্রান্তে বৃষ্টি-মাখামাখি দুপুরে যেদিকে তাকায়, দ্যাখে তার মতো কত অর্বাচীন ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিজের ভিতর হাসতে গিয়ে হাসিটা ফিক করে বাইরে বেরিয়ে আসে।
ও হরি, তাইলে আমি একা নই, আরও আচে!
ভিতর থেকে কে যেন বলে ওঠে, আচে আচে।
আর এই 'আচে' বলেই তো সেদিন খুঁজে পেল এক জ্যান্ত অর্বাচীনকে। সে যে আবার অর্বাচীনের চেয়েও অর্বাচীন কে তা জানতো! নাকি সে নিজেই জানতো?
আর এই 'আচে' বলেই তো সেদিন খুঁজে পেল এক জ্যান্ত অর্বাচীনকে। সে যে আবার অর্বাচীনের চেয়েও অর্বাচীন কে তা জানতো! নাকি সে নিজেই জানতো?
একটু খুলেই বলা যাক।
গিন্নি বায়না ধরেছেন, এবার পুজোয় শহরে থাকবেন না। শহরটা তখন যেন কেমন হয়ে যায়। যেখানে পুজো নেই, এমন কোথাও গিয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকবে। তা জায়গা বেছে, দিনক্ষণ ঠিক করে, অর্বাচীন গেল টিকিট কাটতে। ও হরি, এ যে বিরাট লাইন! তার ধৈর্য কুলালো না অতক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে। ছুটলো এলাকার এক এজেন্টের কাছে। ছোকরা অনেকদিনের চেনা। এককালে ওদের বাড়ির কাছেই ভাড়াটে ছিল। এখন ব্যবসা বেশ জমিয়ে নিয়েছে। ওর অফিসঘরের দরজায় পা রাখতেই চোখ তুলে জিজ্ঞাসা করলো, কাকু-উ, কেমন আছেন?
—আছি আর কী। তোমাদের সব কুশল তো?
—ওই আর কী। একটু বসুন, এনার কাজটা করে দি।
আবার কম্পিউটারে চোখ রাখলো সে। কম্পিউটারের পর্দায় চোখ রেখেই গম্ভীর স্বরে বললো, বিকেলে কোনও ফ্লাইটে টিকিট নেই। কাল ভোরে আছে। কাটবো?
—নেই? তাহলে দিদির মরা মুখটা দেখতে পাবো না?
অর্বাচীন বুঝলো, ভদ্রলোকের এত তাড়া কেন। ওঁর পরমাত্মীয়া দেহ রেখেছেন ভিনরাজ্যে। তার ভিতরে সমবেদনা উথলে উঠলো। হঠাৎই তার মুখ থেকে ফস করে বেরিয়ে এল, তৎকালে কাটা যায় না?
ছেলেটি পর্দায় চোখ রেখেই বললো, এটা ট্রেন নয় কাকু...একটা ফ্লাইট আছে, রাত সাড়ে-সাতটায়। ভাড়া কিন্তু অনেক বেশি।
—কত?
—আট হাজার করে। মাত্র চারটে টিকিট আছে। কী করবো, কাটবো?
বিরসমুখে ভদ্রলোক বললেন, কাটুন।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যে দুটি টিকিট হাতে ধরিয়ে দিয়ে ছেলেটি বললো, টাকা কাছে না-থাকলে কার্ডে দিতে পারেন।
—অনলাইন করছি।
—আছি আর কী। তোমাদের সব কুশল তো?
—ওই আর কী। একটু বসুন, এনার কাজটা করে দি।
আবার কম্পিউটারে চোখ রাখলো সে। কম্পিউটারের পর্দায় চোখ রেখেই গম্ভীর স্বরে বললো, বিকেলে কোনও ফ্লাইটে টিকিট নেই। কাল ভোরে আছে। কাটবো?
—নেই? তাহলে দিদির মরা মুখটা দেখতে পাবো না?
অর্বাচীন বুঝলো, ভদ্রলোকের এত তাড়া কেন। ওঁর পরমাত্মীয়া দেহ রেখেছেন ভিনরাজ্যে। তার ভিতরে সমবেদনা উথলে উঠলো। হঠাৎই তার মুখ থেকে ফস করে বেরিয়ে এল, তৎকালে কাটা যায় না?
ছেলেটি পর্দায় চোখ রেখেই বললো, এটা ট্রেন নয় কাকু...একটা ফ্লাইট আছে, রাত সাড়ে-সাতটায়। ভাড়া কিন্তু অনেক বেশি।
—কত?
—আট হাজার করে। মাত্র চারটে টিকিট আছে। কী করবো, কাটবো?
বিরসমুখে ভদ্রলোক বললেন, কাটুন।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যে দুটি টিকিট হাতে ধরিয়ে দিয়ে ছেলেটি বললো, টাকা কাছে না-থাকলে কার্ডে দিতে পারেন।
—অনলাইন করছি।
ভদ্রলোক উঠতেই অর্বাচীনের দিকে তাকিয়ে ছেলেটি জিজ্ঞাসা করলো, বলুন কেমন আছেন?
—ওই দিনগত পাপক্ষয়। তা তোমরা সব কেমন আছো? বহুদিন পরে দেখা।
—তা কোথাও বেড়াতে যাবেন বুঝি?
—ওই তোমার কাকিমার আবদার।
—তা আপনার কি তৎকাল?
নিজের ভিতরে কোঁৎ করে শব্দটা গিলে ফেলে অর্বাচীন বললো, না, সকাল-বিকাল যা পাওয়া যায়।
—ওই দিনগত পাপক্ষয়। তা তোমরা সব কেমন আছো? বহুদিন পরে দেখা।
—তা কোথাও বেড়াতে যাবেন বুঝি?
—ওই তোমার কাকিমার আবদার।
—তা আপনার কি তৎকাল?
নিজের ভিতরে কোঁৎ করে শব্দটা গিলে ফেলে অর্বাচীন বললো, না, সকাল-বিকাল যা পাওয়া যায়।
—কোথায় যাবেন বলুন।
জীবনের আসা-যাওয়ার মাঝে এমন আবদার তো সমাজে রয়েই গেছে। কার কত যে আবদার! কারও বেড়ানোর, কারও খাওয়ার, কারও-বা পরার। এই আবদারের সঙ্গে মিশে আছে শখ। কত মানুষের কত কী যে শখ! আঙুলের কড়ে ধরে না। কিন্তু বই পড়ার শখ তেমন মেলে না। এই যেমন অর্বাচীন। তার কোনো শখই নেই। তা অর্বাচীনের না-থাকুক, তার বউয়ের না-থাকার তো কারণ নেই। আর শখ থাকলেই আবদার থাকবে। আবদার বলতে ওই একটু ভ্রমণ। সারাবছর তো মানসভ্রমণেই কাটিয়ে দেয়। তা বছরান্তে একবার একটু পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গলে ঘুরে এলে মনটাকে বেশ চাঙ্গা করে নেওয়া যায়। মানে, রিচার্জ করে নেওয়া।
অর্বাচীন ভাবে, আগে, মানে কয়েকবছর আগেও গিন্নির অমন বেড়ানোর বায় ছিল না। বছরে এক-দুবার ওই একবার বাপের বাড়ি, একবার বোনের বাড়ি ঘুরে এলেই সারাবছরের তেল পেয়ে যেত। এখন হয়েছে এক জ্বালা। ওই যে ফোন। আগে ছিল হাতের মুঠোয়, এখন হাফ-গজকাঠি। দিন যত এগোচ্ছে, ফোনের মাপও বাড়ছে। যার যত বড়ো ফোন, তার কৌলিন্য তত বেশি। আর ওই ফোনেই চলছে কতরকমের ব্যবসা। সাদা ব্যবসা, কালো ব্যবসা। ওই যে ইউটিউব। ওটাই তো বিশ্ববাজার। যেমন, একদল আছে, শুধু বেড়াতে যাওয়ার লোভ দেখাচ্ছে। পকেটে রেস্ত না-থাকলেও মনটা ছোঁকছোঁক করে। এই যেমন অর্বাচীন-গিন্নির। মেয়ে একটা বড়ো ফোন পাঠিয়েছে মাকে। ব্যস, ফাঁক পেলেই ইউটিউব আর মুখবই। অমনি দেশ বেড়ানোর বায় চাগাড় দিয়ে উঠলো। ওদিকে মেয়েও বাতাস দিচ্ছে। গিন্নির বায়না রাখতে গিয়ে তো অর্বাচীনের পকেট ফাঁক।
কী আর করা যাবে! অর্বাচীন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে—সংসারে পেতেছি শয্যা, পা দিয়েছি ফাঁদে। ধু-উ-উ-উ-উ-স, চল পানসি।
Comments
Post a Comment