পারমিতা

কোথায় নদী? কোথায়? গুম হয়ে যাওয়া কোনো মহল্লায় হারিয়ে গেছে। আমি হন্যে হয়ে ঢেউ খুঁজছি। আগলভাঙা শব্দের ঢেউ। যেখানে কেউ অনর্গল কানের পাশে শব্দজাল বুনে যাবে আর আমি লিখে যাবো অনন্ত। অনন্ত মৃদু হাসে। তার আজানুলম্বিত বাহু মেলে দাঁড়ায়। চারিদিকে স্বপ্ন সফেন। উড়ু-উড়ু মেঘে শব্দেরা তখন সাদা পরিযায়ী পাখি। দূর আরও দূর সাইবেরিয়ার তুষার থেকে নেমে আসছে আমার বেপরোয়া ঠোঁটে তাদের নরম পালক। শব্দেরা ওম খুঁজে নিচ্ছে তাদের পালকে। ডানা খসিয়ে ঠোঁট থেকে নেমে আমার শব্দেরা তখন তিরতির সাঁতার কাটা হাঁস। একপুকুর সবুজ জলে। বায়োস্কোপের মতো ক্লিক-ক্লিক। অ্যাকশন। লাইমলাইটে তখন হাঁসের ডানায় শব্দবিন্দু। একের পর এক দৃশ্যপট। দৃশ্যকল্প মিলিয়ে যাচ্ছে।
একের পর এক। অথচ আমি ধরতে পারছি না।
তাদের জড়ো করা লিখতে পারছি না।
কেন লিখতে পারছি না বলুন তো? হাঁসগুলো সাইবেরিয়ার ধবল বক হয়ে ফিরে যাচ্ছে। আমি ধরতে পারছি না। অস্বস্তি হচ্ছে। প্রবল এক অস্বস্তি। হাত কামড়ে খাচ্ছি। দৃশ্যকল্প থেকে শব্দকল্পের যাত্রায় আমার ডিঙি আটকে গেছে  পাথুরে পাহাড়ে।

বিশ্বায়ন সমন্ধে আপনার মতামত কী? বিশ্ব রাজনীতির কী বোঝেন আপনি? তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবকে কী বলে মন্তব্য করবেন? ট্রাম্পকার্ড হাতিয়ে কারা বাজিমাত করছে বিশ্বায়নের বাজারে বলে আপনার মনে হয়?  ইলন মাস্ক-এর রকেট মঙ্গলভ্রমণে আপনাকে নিয়ে যেতে প্রস্তুত।সেটা নিয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না? 
কবিতার জোন বেছে নিন । এআই-এর যুগে এত স্মার্ট সাবজেক্ট থাকতে আপনি লিখতে পারছেন না বস? সাবজেক্ট বেছে নিন। আপনার জঁর ঠিক পেয়ে যাবেন। আর ডিজিটাল মার্কেটে নিজেই পাবলিশার হয়ে নিজের প্রচার করুন। আপনার আঙুলের ডগায় পুরো বিশ্ব। নিন-নিন, লেগে পড়ুন।

আমি ভ্যাবলাচোখে কার্তিকের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি। কাচের গুঁড়োর মতো ছড়ানো নক্ষত্রগুলো 
গাইছে, "ইয়ে রাতেঁ ইয়ে মৌসম নদী কা কিনারা..." বিশ্ব নয়। কবিতার শরীর, চুল, ঠোঁট, পিনোন্নত বক্ষ আঙুলের ডগায় ছুঁয়ে দেখতে আমার ইচ্ছে হয়। 
আমি ঘন হয়ে বনলতার কাছে বসি। 
আবছা ধূসর বনলতা...আন্দ্রে ব্রেটন আওড়াতে থাকে...

Less time than it takes to say it, 
less tears than it takes to die; 
I've taken account of everything,
there you have it.
I've made a census of the stones, 
they are as numerous as my fingers and some...
I've distributed some pamphlets to the plants, but not all were willing to accept them. 
I've kept company with music for a second only and now I no longer know what to think of suicide, for if I ever want to part from myself, the exit is on this side and, I add mischievously, the entrance, the
re-entrance is on the other. 

আন্দ্রে থেকে আর্ত্যুর র‍্যাঁবোর মহাকাল। 
বনলতা চেনা কবিতার আড়ালে থেকে আরও অচেনা রহস্যময়ী হয়ে আমায় গিলে খাচ্ছে। হালভাঙা নাবিকের বদলে আলোর দিশারী হয়ে ডিঙিতে চেপে বসে বাংলা কবিতার অধরা মাধুরী। অতীন্দ্রিয় এক অনুভূতিতে আমার শরীর আচ্ছন্ন। বাস্তব থেকে পরাবাস্তবের মোহনায় পাথুরে পাহাড় চৌচির করে ডিঙি ছুটে চলে। 
বনলতা বনলতা...আমার মস্তিষ্কের শিরায় উপশিরায় বনলতার ধূসর রক্ত নদী হয়ে গেছে। আমার চোখে শ্রাবস্তীর কারুকার্য নয়।‌ সাইবেরিয়ার তুষারঝড়।
বিশ্বায়নের সস্তা বাজারে আমার নদীটা গুম হয়ে যায়নি। শুধু মহল্লাটা পাল্টে উৎসবসরণি হয়ে গেছে। প্যারাডক্সিকাল হলেও আমি, আমি নয়।
আমি বনলতা হয়ে উঠছি।
হাঁটুমুড়ে অপেক্ষায় বসে আছে অনন্ত। আমার পথ চেয়ে। 

Comments