উৎসব সম্পন্ন হলে কাঠামো নড়ে ওঠে। গা থেকে খসতে থাকে আলো-অন্ধকার, জন্ম-মৃত্যু, পাপ-পুণ্য। ভেতরকাঠামোয় বাষ্প উড়ে বেড়ায়। বাইরে আস্ত একটা সাইক্লোন, ধ্বংসলীলা, জলের ভেতর উন্মাদ তরঙ্গ। তলিয়ে যায় বৈভব, জ্যোতির্ময় উদ্ভাস, শক্তির আধার।
শক্তির ক্ষয়, ক্ষণস্থায়ী। শুধুই রূপান্তর। রূপান্তর বহুরূপী, বহুপ্রসবিনী। সৃষ্টির জঠরে মহাকাল না মহাকালের জঠরে সৃষ্টি; এ নিত্য তর্ক বহমান, যুগ থেকে যুগান্তরে। অনিত্য যা তাই নিত্য, অপূর্ণ যা তাই পূর্ণ। মৃত্যুঞ্জয়ী হলে ঐশ্বরিক সম্মোহন বিদ্যুতরেখার মতো আকাশ চিরে মাটিতে নেমে আসে। অরণ্য জেগে ওঠে, গৃহস্থালি আলো মেখে পার হয় দীঘল রাত্রি। মৃত্যুমুখ থেকে অনিবার্য উচ্চারণ উচ্চকিত হয় বারংবার। তথাপি গায়িত্রী মন্ত্রের ওংকারধ্বনি পৃথিবীর ত্রাতা হলে বেজে ওঠে শঙ্খ।
আগমন-বিসর্জন, উৎসব-দ্রোহ পরিচিত জীবনের মুদ্রা। আসন্ন আগমন ঘিরে উৎসাহ, ঘনঘন বেজে ওঠা শঙ্খ, আরতি প্রদীপ মঙ্গলঘট। অবিরাম সাড়ম্বর অভ্যর্থনা। দশ মহাবিদ্যার তন্ময় আরাধনায়, আলোর মগ্নতার রেশ মেখে অচিন্ত্য হতে চায় জীবন। তবু যাওয়া-আসার পথেই মুক্তি, অমৃতযোগ। মুখরিত সাজসজ্জা, কোলাহল কলরোল, মুখোমুখি উজাড় ভালোবাসা আলিঙ্গন। তথাপি আলো নেভে। পাখিরা ফেরে বাসায়। রোজকার জীবনের ছাঁচে ফিরে আসা নিয়মের এক্কা-দোক্কা।
আলো নিভে যায়। পড়ে থাকে ছাই, আধজ্বলা খড়কুটো। কিছু তো কুড়িয়েছো স্বাদ, মুহূর্তের স্ফটিক স্মৃতি! এ-প্রাপ্তি আগলে রেখো। বয়ে যায় সরণি। আগামীর আয়োজনে, উদযাপনের প্রহরে আবার তো দেখা হবে। আবার তো ভাগ করে নেবো প্রসাদের থালা, হাতে-হাতে দেওয়া-নেওয়া বেলপাতা, ফুল, ধুনুচি নাচ, আলিঙ্গন, সব! বিসর্জন? আসলে সে তো মুহূর্তের যাপন, আসলে সে তো আগমনের প্রস্তুতি, আসলে সে তো আরও খানিক দৃঢ় হওয়া সম্পর্কের আঘ্রাণ, আসলে সে তো আত্মার আত্মীয় হয়ে ওঠা।
আসলে সে তো আবার এক অপেক্ষার শুরু। আসলে সে তো “আসছে বছর আবার এসো মা“ বলে ডুকরে কেঁদে ওঠা।
Comments
Post a Comment