"না তো আপু!"
"অনিটা তোদের ওখান থেকে আসার পর কেমন যেন হয়ে গেছে। চুপচাপ, বেশি কথা বলে না।"
"আচ্ছা আপু, আমি নিধি আর সুধিকে জিজ্ঞেস করি কিছু হলো কিনা?"
"আচ্ছা জিজ্ঞেস করতো?"
রিয়া বলে, "আপু, ওরা বলছে অনি ওদের সাথেই থাকতো। নিধি-সুধি বাবার দোকানে যাওয়ার সময় ওকে নিয়ে যেত। আমি সারাদিন স্কুলে থাকি। অনি তো আর একা বাসায় থাকতে পারে না। ওরা যেখানে যেত, অনিও সাথে যেত। আর নিধি-সুধির বাবাও অনিকে ভীষণ আদর করতো। চকলেট, আইসক্রিম, নানরুটি, গ্রিল, পরোটা...যখন যা খেতে চাইতো, খাওয়াতো। আপু, এত টেনশন কোরো না। ঠিক হয়ে যাবে।"
"আচ্ছা ঠিক আছে, রাখি।"
নিধি-সুধির বাবা কামরুল হাসান। বড়ো ব্যবসায়ী। রিতুর ছোটোবোন রিয়া। প্রাইমারি স্কুলে জব করে। রিয়ার বড়োছেলে নিধি এবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ায়, অবসর। বাসায় থাকে না বেশি একটা। বাবার দোকানে পড়ে থাকে। নিধির পরীক্ষা শেষ হওয়ায় রিতুদের বাসায় অনি বেড়াতে আসে। ক'দিন বেড়িয়ে আসার পর খেয়াল করে, অনি চুপচাপ থাকে। রিতুর বুক ধক করে ওঠে। কামরুল হাসান ওকে খুব আদর করেছে। সে আগেও অনিকে খুব আদর করতো। কামরুল হাসানের আদর ওকে প্রভাবিত করেনি তো? ছেলেটা কি কামরুল হাসানের ভেতর বাবাকে খোঁজে? অনুভব করছে কি যে, বাবা থাকলে যখন যা খুশি খাওয়া যায়, পাওয়া যায়?
ছোটো মন অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না। রিতু বোঝে। ওর অবচেতন বাবাকে খুঁজছে। রিতুর কান্না পায়। ঘুমন্ত অনির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। রিয়ার বাসা থেকে দু'দিন হলো এসেছে। এই দু'দিনেই ছেলের চোখের নিচে কালি জমেছে। চোখ খাদে নেমেছে। ছেলেকে বুকে নিয়ে হু-হু করে কেঁদে ওঠে রিতু। ছয়মাস হলো, রায়হানের সাথে ওর ছাড়াছাড়ি হয়েছে। এই ছয়মাস অনি কি বাবার অনুপস্থিতি টের পেয়েছে? দিন যায়। রিতু খেয়াল করে, অনি স্নানে গেলে নিজেই গামছা-প্যান্ট-জামা নিয়ে বাথরুমে ঢোকে। আগে রিতুর মুখের দিকে চেয়ে থাকতো কাপড়ের জন্য। আম্মু-আম্মু ডেকে হয়রান করতো। রিতু গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। ছেলেটা কি মানসিক শূন্যতায় ভুগছে? এত চঞ্চল, হইচই করা, সারাদিন বকবক করা ছেলেটা ধীর-স্থির হয়ে গেছে। যে-ছেলেটার বকবক শুনে রিতু বিরক্ত হতো আর ধমক দিয়ে বলতো, "বাবা, থাম এবার, অনেক হয়েছে।কত কথা বলতে পারিস, বাপরে বাপ! আমার মাথা ধরে গেছে।"—বলে তাকে থামিয়ে দিত রিতু। আজ সে ছেলের মৌনতা দেখে ভয় পেয়ে যায়। ইদানীং খেয়াল করে, খেলতে গেলে অনি একটু দেরি করে বাসায় ফেরে। কারণ কী? রিতু একদিন খেলার মাঠে যায়। সেখানে পাশের বাসার সঞ্জু, অয়ন, পুলককে দেখতে পায়। ওদের সঙ্গে অনি নেই। অনিকে দেখতে না-পেয়ে বুক ধড়ফড় করে ওঠে। রিতু দৌড়ে সঞ্জুকে জিজ্ঞেস করে, "অনি কই সঞ্জু?"
রিতুকে দেখে ওরা চমকে যায়—"আন্টি আপনি?"
"হ্যাঁ, বাবা। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। এখনও সে বাসায় ফেরেনি। দেরি দেখে খুঁজতে এলাম।"
"সে তো আমাদের সাথে খেলে না।" অয়ন বলে।
"কী বলছো!"
"জ্বি আন্টি। আমরা খেলি। সে নদীর পাড়ে বসে থাকে।"
"ওখানে কী করে?"
রিতুর হাত ধরে পুলক বলে, "চলুন আপনাকে দেখাই।"
পুলকের সঙ্গে সঞ্জু, অয়নও আসে। ওরা যে-মাঠে খেলে, সেখান থেকে দূরে একটি নদী। নদীর পাড় হালকা ঝোপঝাড়ে ঘেরা। বর্ষা শেষ। পাড় ঘেঁষে জল ছুঁইছুঁই করে। পড়ন্ত সন্ধ্যার ছায়ায় কালো হয়ে ওঠে নদীর জল। সূর্যের চিহ্ন ধারেপাশে নেই। অস্তগামী শেষ রেখাটি লাল থেকে লাল হয়ে ক্রমশ নীলিমায় লীন হয়ে যাচ্ছে। টকটকে আবিরের ভেতর সূর্য হৃদয়টি রেখে যায়। টুপ করে সন্ধ্যা নামে পৃথিবীতে। ওরা এগিয়ে যায় সামনে। নদীর পাশে একটি অশ্বত্থ গাছ শূন্যে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তারই পাশ থেকে অস্ফুট শব্দ ভেসে আসে। ওরা কান পাতে। সঞ্জু বলে ওঠে, "আন্টি, এ অনি। প্রতিদিন এখানে এসে কলাগাছের সাথে কথা বলে।" রিতু অবাক হয়ে যায়। কলাগাছ!
"জ্বি, আন্টি। একটি কলাগাছ আছে ওখানে। সে ওটার সাথে কথা বলে।"
"কবে থেকে সে এরকম করছে?"
"অনেকদিন থেকে।"
পুলক বলে, "কলাগাছটা ও-ই রুয়েছে।"
"সে কলাগাছ পেলো কই?"
"আমাদের স্কুলের পিন্টুদের বাড়ি থেকে এনে, এখানে রুয়েছে।"
"এটা যখন খুব ছোটো ছিল, তখন সে বলতো ওর বাবু।"
"মানে?"
"তাহলে শুনুন আন্টি। আগে সে আমাদের সাথে খেলতো। যখন সে কলাগাছটি পেলো, তখন থেকে আমাদের সাথে খেলা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা মাঠে থাকি আর সে কলাগাছ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। প্রতিদিন বিকেলে এটাতে পানি দেয়। একটি বোতল আছে বড়ো। নদী থেকে ওটায় জল তুলে এনে গাছের গোড়ায় দেয়। এটার সাথে কথা বলে।"
রিতু অবাক হয়ে যায় এসব শুনে। "কী বলতো সে গাছের সাথে?"
পুলক বলে, "আমরা দেখতাম সে গাছটিকে জড়িয়ে ধরে আদর করে। বাবু বলে ডাকে। অদ্ভুত কথা বলে গাছের সাথে।"
"কীরকম?" রিতু প্রশ্ন করে।
"বাবু ও বাবু, তোমার মন খারাপ? আমার লক্ষ্মী বাবাটা, মন খারাপ করে না। তোমার জন্য অনেক খেলনা নিয়ে আসবো। তোমার তো দাঁত নেই। শক্ত খাবার খেতে পারো না। এই দেখো, বোতলভর্তি দুদু নিয়ে এসেছি। দুদু খাও। তাড়াতাড়ি বড়ো হতে হবে না?"
রিতু জিজ্ঞেস করে, "দুধ কই পেতো?"
সঞ্জু চোখ বড়ো করে জবাব দেয়, "কিসের দুধ আন্টি! নদীর জল বোতলে ভরে, ওটাকেই বলতো দুধ। ওগুলোই গাছের গোড়ায় দিয়ে বলতো, দুদু খা বাবা, দুদু খা। জানিস, আমার মা আমাকে দুদু খেতে দেয়। ওটার রঙ সাদা। মা বলে, দুদু না-খেলে বড়ো হওয়া যায় না। তোকে যেটা দিই, ওটার রঙ নেই। না-থাকলে কী হয়েছে? দুদু তো দুদুই, তাই না?"
রিতু এসব শুনে বিমর্ষ হয়ে পড়ে। ছেলেটার কিছু হয়েছে, আগেই টের পেয়েছে। এখন ভাবে, ব্যাপারটা কয়েকদিন দেখি। এখানে এসেছি, অনিকে জানতে দেবো না। সঞ্জু, অয়ন, পুলকের হাত ধরে রিতু বলে, "তোমরা খেলতে চলে যাও। আমি এখানে এসেছি, ওকে জানতে দিও না। দেখি, সে কী করে। তোমাদের চকলেট খাওয়াবো। মনে থাকবে?"
"জ্বি আন্টি, মনে থাকবে।" ওরা চলে যায়। রিতু পা টিপে সামনে এগোয়। আর একটু পরে গাঢ় সন্ধ্যার বুকে মুদ্রিত হবে আঁধার। জলের ওপর সে-আস্তরণ পড়ছে। জলধারা এখনও জিইয়ে রেখেছে খানদানি সূর্যের মিনমিনে প্রতাপ। কালো আঁধারে ডুবে যাবার আগে নদী বয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিদায়ী আলোকমালা।
বর্ষার ধার কমে এলেও জলের বুননে চওড়া হয়ে গেছে নদীপাড়। তারই পাশে অশ্বত্থের আড়ালে অনির কথার স্বর শোনা যায়। রিতু কান পাতে। অস্পষ্ট শব্দ। বুঝতে পারে না কিছু। হঠাৎ এক উত্তুঙ্গ বাতাস এসে শব্দে দোলা জাগায়। ইথারে ভেসে আসা শব্দের ভেতর রিতু দু'কান সমর্পণ করে। শুনতে পায়, "বাবা! তুমি কবে হাঁটবে? কবে তোমার পা হবে? কবে তুমি বাসায় যাবে? তুমি কথা বলো না কেন? তোমার কথা শুনতে আমার খুব ইচ্ছে করে!" রিতু দ্যাখে, অনি কলাগাছটিকে জড়িয়ে আছে। "বাবা! ও বাবা! বাসায় চলো। রাতে তোমার বুকে আমি ঘুমাবো। বাবা, ও বাবা! বাসায় চলো!" অনি কলাগাছের পাতা ধরে টানে। গাছ কি আর হাঁটতে পারে! টানাটানিতে পাতা ছিঁড়ে আসে। হাতের মুঠোয় পাতা ছিঁড়ে এলে, অনি বলে, "ওঃ বাবা! তুমি ব্যথা পেয়েছো? স্যরি, আমি তোমাকে ব্যথা দিতে চাইনি।"
রিতু এই দৃশ্য সহ্য করতে পারে না। ওর হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত ঝরছে। আলোড়িত করে ওঠে ভেতর। সারা অঙ্গ কেঁপে ওঠে। শরীরে একটি ঠান্ডা প্রবাহ তরতর করে বয়ে যায়। সে আর এক মুহূর্ত দেরি করে না। যে-পথে এসেছে, নরম পায়ে আবার সেই পথে হাঁটা ধরে। দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় সামনে। গিয়েই সঞ্জু, অয়ন, পুলককে দেখতে পায়। ওরা বাসায় যাবার জন্য পা বাড়ায়। রিতুকে আসতে দেখে দাঁড়ায়। "কী আন্টি, আপনি একা! অনি কই?"
"বাবারা, সে ওখানে আছে। রেখে এসেছি। আমি তোমাদের কাছে এসেছি। কিছু প্রশ্নের জবাব দেবে?"
"বলুন আন্টি, কী জানতে চান?"
"অনি কলাগাছকে বাবা ডাকছে। তোমরা বলেছো, সে কলাগাছটিকে বাবু ডাকতো। ছোটো বাচ্চার মতো আদর করতো। যত্ন করতো। এখন এটা আমি কী দেখছি?"
"ওঃ আন্টি, এইটা? সে এখন গাছটিকে বাবা ডাকে।গাছটি যখন খুব ছোটো ছিল তখন ওটা করতো। এখন গাছটি বড়ো হয়ে গেছে, তাই বাবা ডাকে। শুধু তাই নয়; আমরা যখন খেলতে আসি, সে তখন দৌড়ে গিয়ে গাছটিকে জড়িয়ে ধরে বলে, বা.... বা! বা...বা, আমি এসেছি। তুমি কী করছো? কেমন আছো? আমরা এসব দেখে খুব হাসি।"
"তোমরা হাসো? এতদিন আমাকে এসব বলোনি কেন?" রিতু কেঁদে ওঠে। ওর চোখ ছলকে খসে পড়ে বুকভাঙা অশ্রু। ভেতরের কষ্ট ও বেদনাগুলো আকস্মিক বড়ো হয়ে ওঠে। ওরা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে। সে বাস্তবতায় ঢুকে টেনে আনে অতীত। আজ ছেলেটির এমন দুদর্শার জন্য দায়ী কে? রিতু নাকি রায়হান? রায়হান ওদের ছেড়ে চলে গেছে, ওর ফুফাতো বোন রিমির কাছে। যার সঙ্গে ওর প্রেম ছিল। ডিভোর্স খেয়ে বাবার বাড়ি আসার পর, ওদের পূর্বপ্রেমে লাল-নীল রঙিন বেলুন ওড়ে। রায়হানের হৃদয়ে রিমির হাওয়া লাগে। একটি মেয়ের চোখের সামনে আরেকটি মেয়ে গড়ের মাঠ হয়ে মেঘমল্লার নামাবে আর আরেকটি মেয়ে চেয়ে-চেয়ে দেখবে, তা তো হয় না! অনেক ঝগড়া অনেক লড়াই। রিতু বহুবার রায়হানকে থামাতে চেয়েছে, পারেনি। পাখির মতো উড়াল স্বভাব যার, তাকে কি খাঁচায় আটকানো যায়?
শেষে ওকে ছেড়ে নিজের সমস্ত পতনকে ডেকে নেয় রিতু। দিনশেষে আত্মসম্মানটাই বড়ো হয়ে দেখা দেয়। আজ ছয়মাস সে ডিভোর্স নিয়েছে। কিন্তু ছেলেটার ভেতর যে-বাবা ঘড়ঘড় করে ডাকে, তাকে কোথা থেকে এনে দেবে রিতু? কোথায় পাবে ওর বাবাকে? বাবা নামের কালকেউটে যে ওদের ছোবল মেরে আরেক পৃথিবীতে হারিয়ে গেছে, সে কী করে বলবে অনিকে? সে কী করে বলবে, "অনি দ্যাখো বাবা, তোমার বাবা নেই। এই পৃথিবীর কোথাও সে নেই। তুমি যে পৃথিবী দেখছো, এটা কেবল আমার আর তোমার। এখানে আমাদের অনেক কিছু নেই। এখানে যদি বেশি কিছু চাইতে যাও, তাহলে দু'হাত ভরে শুধু কষ্টই পাবে। তুমি এখনও অনেক ছোটো। কলাগাছটির মতো যেদিন বড়ো হবে, সেদিন বুঝবে, এখানে অনেক কিছু আমাদের নয়।" রিতু চোখ মোছে। পুলক, সঞ্জু, অয়ন স্থির দাঁড়িয়ে থাকে। ওরা বুঝতে পারে না, দুঃস্বপ্নে উন্মাদপ্রায় রিতু কত অসহায় হয়ে গেছে যাপিত জীবনের কাছে।
রিতু প্রাণপণে নদীর দিকে ছোটে। চারিদিকে ত্রস্ত আঁধার নেমে আসছে। আর একটু পর হলেই বোঝা যাবে না, এখানেও একটি নদী আছে। আঁধার এসে নদীটিকে গ্রাস করবে। এর আগেই অনিকে ফেরাতে হবে। ওর বুকের ভেতর যত অন্ধকার জন্ম নিয়েছে, তাদের তাড়াতে হবে। বহু দেরি হয়ে গেছে। আর নয়। ওর কচি মনে অতর্কিতে চাঁদ নামানো যাবে না। একটু-একটু করে যেমন ভোর হয়, ভোর থেকে দিন, তারপর গাঢ় সন্ধ্যার প্রলেপে যেমন প্রকৃতিতে রাত নেমে আসে, তেমন করে ওর মনোজগতে বাস্তবতা নামাতে হবে। ওর ওই পৃথিবীতে আনন্দ জমাবে রিতু। এর আগে ওর সম্পদ কলাগাছটিকে সেও ভালোবাসবে। রিতু দৌড়ায়। পেছনে ধুপধাপ শব্দ শুনে অনি ফিরে তাকায়। কলাগাছটিকে ছেড়ে দিয়ে বলে, "আম্মু, তুমি এখানে?"
"হ্যাঁ,বাবা। তোমার দেরি দেখে আমি চলে এসেছি। কলাগাছটি তোমার? বাঃ, বেশ বড়ো হয়েছে তো! এটা থেকে একদিন কলা বের হবে। ওই কলা আমরা খাবো। তোমার হাতে লাগানো গাছ থেকে কলা বের হবে। কী দারুণ হবে, তাই না?"
"এটা থেকে কলা বের হবে?"
"হ্যাঁ বাবা, কলাগাছ থেকে তো কলাই বের হয়। তখন এটাকে কী ডাকবে?"
অনি বলে, "তুমি বলে দাও, কী ডাকবো?"
"এতদিন এটা তোমার বাবু ছিল। এখন হয়েছে বাবা। এরপর এটাকে আম্মু ডেকো। কারণ, ফলগাছ মা হয়। যে-গাছে ফল ধরে, তাদের মা-গাছ বলে। তুমিও আমার ফল। তাই আমি তোমার মা। যখন গাছটিরও ফল হবে, তখন এটাকে তুমি আম্মু ডাকবে। আর আম্মুরাই সন্তানের পাশে থাকে। আমিও তোমার পাশে আছি বাবা!"
"তুমি এতসব জানলে কীভাবে আম্মু?"
"বারে! তোমার একটি বাবু আছে, বাবুটা আবার বাবা হয়েছে, এসব গোপন থাকে? আর ক'দিন পরে এটা মা হবে। খুব মজা না?"
"আসলেই খুব মজা।"
"জানো অনি! একমাত্র গাছকেই তুমি যা-খুশি ডাকতে পারো। আদর করতে পারো, বকা দিতে পারো। ওদের রাগ নেই। ওরা সব কথা শোনে।"
"কিন্তু ওরা কথা বলে না। বলতে পারে না।"
"না বাবা, ওরা সব পারে। আরেকটু বড়ো হও। দেখবে, গাছ তোমার কথা শুনে কী করে!"
"সত্যি বলছো, আম্মু?"
"হ্যাঁ বাবা, সত্যি বলছি।"
অনি মায়ের বুকে চলে আসে। রিতু ওকে টেনে নিয়ে বলে, "আমার সোনা বাবাটা। আমার সমস্ত সুন্দর। চলো এবার ঘরে যাই। ওরা পা ফ্যালে। পেছনে পড়ে থাকে অদ্ভুত আঁধারে ঢেকে আসা সবুজ প্রকৃতি। অনি যাওয়ার আগে কলাগাছটিকে আবারও জড়িয়ে ধরে বলে, "গুড ইভনিং বাবা!"
Comments
Post a Comment